শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

আমেরিকার প্রগতিশীলতাবাদের নতুন মুখ বারাক ওবামা

প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : হেনরি কিসিঞ্জার তার গ্রন্থ ‘ওয়ার্ল্ড অর্ডার : রিফ্লেকশন্স অন দি ক্যারেকটার অব নেশনস এন্ড দি কোর্স অব হিস্টরি’ শুরু করেছেন স্মৃতিচারণ দিয়ে। ১৯৬১ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস.ট্র্যূমানকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় তাঁর সর্বাপেক্ষা গৌরবময় সাফল্য কি ছিল? ট্র্যুমান জবাবে বলেছিলেন, “আমরা আমাদের শত্রুদের সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করেছি (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে) এবং তারপর তাদেরকে জাতিসমূহের সম্প্রদায়ে ফিরিয়ে এনেছি।’’ কিসিঞ্জার ট্র্যুমানের কথা শেষ করেছেন এ বলে, “তিনি আমেরিকার বিজয়ের জন্য ততটা স্মরিত হতে চান না যতটা হতে চান শান্তকরণের জন্য।” কিন্তু শান্তকরণ হচ্ছে বন্ধ হওয়ার দুর্বল বিকল্প। সাত দশকেরও বেশি সময় পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার হিরোশিমা সফরে এ ব্যাপারে একটি পদক্ষেপ নিয়েছেন। হিরোশিমা ও নাগাসাকি ১৯৪৫ সালের আগস্টে আমেরিকার আণবিক বোমা বর্ষণের শিকার হয়।
এটা নিশ্চিত যে তার হিরোশিমা সফর ছিল শুধু প্রতীকী। ওবামা কোনো ক্ষমা প্রার্থনাও করেননি। তবে হিরোশিমাতে ওবামার বক্তৃতাকে প্রখ্যাত কৌশলগত চিন্তক সি. উদয় ভাস্কর “মার্জিত উপবৃত্তীয় পন্থায়” বিবৃত “ক্ষমাপ্রার্থনা অনুপ্রাণিত”বক্তৃতা বলে উল্লেখ করেছেন। যাহোক, হিরোশিমা হচ্ছে সর্বশেষ উদাহরণ। ওবামা যখন তার দ্বিতীয় মেয়াদের দিকে অগ্রসর হন, তিনি পুরনো দেয়াল ভাঙ্গার নতুন রেকর্ড তৈরি করেন। এ দ্বিতীয় মেয়াদেই তিনি ইরান, কিউবা ও মিয়ানমারের মত দেশগুলোর সাথে অর্থপূর্ণ সম্পর্কের পথ উন্মুক্ত করেন।
এসব সম্পর্কের প্রতিটির সূচনার সাথেই রয়েছে তাদের নিজস্ব আনুষঙ্গিক যুক্তি ও রাজনৈতিক বিপত্তি। উদাহরণ স্বরূপ, মিয়ানমারকে বিচ্ছিন্ন করার চেয়ে মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ওবামার পরিবর্তিত নীতি ছিল এশিয়ার পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক সমীকরণের ফল। ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তির সুফল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে গভীর ও তিক্ত বিরোধ রয়েছে। এ থেকে কি অর্জিত হয়েছে সে বিষয়ে রাজনৈতিক প্রশ্ন আসলে কি অর্জিত হয়েছে সে বিষয়টিকে প্রায়ই অস্পষ্ট করে দেয়। এবং এ অর্জন যখন ইরানের ক্ষেত্রে গণ্য করা হয়, যেখানে পারমাণবিক চুক্তি ইতিমধ্যে গোলযোগ কবলিত মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভবত একটি যুদ্ধ পরিহার করেছে, তখন একে খ-িত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বলিষ্ঠ রাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে দাঁড় করানো আরো বেশি কঠিন।
এর অর্থ সর্বাত্মকভাবে ওবামার পররাষ্ট্র নীতি অনুমোদন নয়। প্রকৃতপক্ষে জেফরি গোল্ডবার্গ যেমন একে ‘ওবামা ডক্ট্রিন’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন, সেভাবেই মিন্ট আগে এটাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। ওবামার লিবিয়া অভিযান সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়েছে। তিনি অবজ্ঞাভরে যাকে ওয়াশিংটনের প্লেবুক বলে উল্লেখ করেছেন তা সউদি আরব ও পাকিস্তানের মত মিত্রদের সাথে সমস্যা নিরসনে পর্যাপ্ত ছিল না। নির্দিষ্টভাবে এ দু’টি দেশের জন্য প্লেবুক এখনো ব্যাপক কর্মসূচি নির্ধারণ করছে। ২০০৯ সালে প্রাগ বক্তৃতায় ওবামার বিশদ নিরস্ত্রীকরণ অঙ্গীকার এবং হিরোশিমা সফরকালে তার পুনরুচ্চারণ শুধু রোমশ মস্তিষ্ক প্রসূতই নয়, বিস্ময়কর রকম কুটিলতাপূর্ণও। কয়েকটি রিপোর্টে আভাস পাওয়া গেছে যে ওবামা প্রশাসন শীতল যুদ্ধের পর পারমাণবিক সমরাস্ত্র মজুদ নি¤œতম পর্যায়ে কমিয়ে আনার গতি ধীর করেছে।
যাহোক, বিদেশে তার উদার বাগাড়ম্বরের সাথে দেশের অভ্যন্তরে গৃহীত প্রকৃত অগ্রগতিমূলক কিছু সিদ্ধান্তের মিল আছে। ওবামা ফেডারেল রিজার্ভের প্রথম মহিলা প্রধান হিসেবে জ্যানেট ইয়ালেনকে মনোনীত করেছেন। বিচার বিভাগেও তার মনোনীতদের মধ্যে আরো নারী, নানা বর্ণের ও প্রকাশ্যে নিজেদের সমকামী ঘোষণা করারাও রয়েছেন। তার স্মার্টনেসের সাথে তাল মিলিয়ে এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার কাজ চলছে। তা সে হ্যানয়ে খ্যাতনামা শেফ অ্যান্টনি বুরদাইনের সাথে নমনীয় খাবার গ্রহণেই হোক আর নিজের বানানো ঘড়িকে তার ক্লাসের শিক্ষক বোমা বলে ভুল করায় গ্রেফতার ১৪ বছরের মুসলিম বালক আহমেদ মোহাম্মদকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়ে হোক, ওবামা নিজেকে সাধারণ মানুষের প্রেসিডেন্ট হিসেবে গড়ে তুলেছেন। হোয়াইট হাউসে পৌঁছা কালো মানুষ হিসেবে তার নিজের ভাব মর্যাদা এবং ইতিহাসের ¯্রােত পেরিয়ে আসা তাতে আনন্দের মাত্রা যোগ করেছে।
ভক্স-এ সম্প্রতি প্রকাশিত এক নিবন্ধে ডিলান ম্যাথুস ওবামাকে “আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে আত্মগরিমাপূর্ণ প্রেসিডেন্টদের একজন” এবং “ আমেরিকার ইতিহাসে প্রগতিশীলতাবাদের এক শীর্ষ ব্যক্তিত্ব” বলে আখ্যায়িত করেছেন। ম্যাথুসের এ দাবির সম্ভবত কিছু প্রেক্ষাপট আছে। ওবামা এমন এক সময়ে প্রগতিশীলতাবাদের এক প্রতিনিধি হয়ে ওঠেন যখন সংকীর্ণতা দানা বাঁধছিল এবং বিশ্বব্যাপী কতিপয় রাজনীতিক তাদের ধারণায় বিশ্বায়নের ফলে পরিত্যক্ত ভোটারদের আসনকে নিজেদের জন্য ব্যবহার করার আশা করছিল। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে ওবামা তার ক্ষমতার শেষ বছরেও এখনো পুরনো দেয়াল ভাঙ্গছেন এবং তার সম্ভাব্য উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই নতুন কিছু দেয়াল তৈরির প্রস্তাব করেছেন। কথা হচ্ছে, ইতিহাসের ¯্রােত কার দিকে বইবে? সূত্র  : লাইভমিন্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন