ইনকিলাব ডেস্ক : কিংবদন্তী মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী। মৃত্যু আজ তাকে অন্য এক ভুবনে নিয়ে গেছে। কিন্তু এই ভুবনে তিনি তার কীর্তি দিয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন চিরকাল। শুধু রিংয়েই নয়, তিনি সরব ছিলেন নিপীড়িত মানুষের অধিকারের দাবিতেও। এই কিংবদন্তীর উত্থান শুরু হয়েছিল ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয়ের মধ্য দিয়ে। ১৯৬৪ সালে সনি লিস্টনকে হারিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তখন তার নাম ছিল ক্যাসিয়াস ক্লে। পরে তিনি খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হন এবং মোহাম্মদ আলী নাম ধারণ করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা রাজ্যের ফোনিক্স শহরের একটি হাসপাতালে গতকাল শনিবার সকালে তিনি ইন্তেকাল করেন। এই বক্সিং কিংবদন্তী দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট, পারকিনসন্সসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। আলীর পরিবার জানায়, তাকে তার লুইসভিলের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
মুষ্টিযুদ্ধে খুব কমই হেরেছেন মোহাম্মদ আলী। ৬১টি খেলার মধ্যে ৫৬ বারই জিতেছেন তিনি। ১৯৮১ সালে অবসর গ্রহণ করেন মোহাম্মদ আলী। ১৯৭৮ সালে কিংবদন্তী এই মুষ্টিযোদ্ধা বাংলাদেশও সফর করেন।
মুষ্টিযুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা লড়াইটি ছিল মোহাম্মদ আলী ক্লে ও জর্জ ফোরম্যানের মধ্যে লড়াইটি। এক লক্ষ মানুষ শুধু স্টেডিয়ামে বসেই খেলাটি উপভোগ করেছে। কিনসাসা, বিশ্বের দরিদ্রতম একটি দেশের রাজধানী। বিংশ শতাব্দীতে ১৯৭৪ সালের ৩০ অক্টোবর এটি স্মরণীয় হয়ে রইল এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
কিংবদন্তী এই মুষ্টিযোদ্ধার বয়স তখন ৩২। যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়াই করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর তিনি সেসময়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জর্জ ফোরম্যানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। সপ্তম রাউন্ড পর্যন্ত আলী ফোরম্যানের হাতে মার খেতে থাকেন। কিন্তু অষ্টম রাউন্ডে ডান হাতের একটি প্রচ- হুকে ফোরম্যানকে ধরাশায়ী করে আলী হয়ে গেলেন কিংবদন্তী। তিনি শুধু লড়াইয়েই কিংবদন্তী নন। আলীই মুষ্টিযুদ্ধকে দিয়েছিলেন শৈল্পিক রূপ। তার পরবর্তী মুষ্টিযোদ্ধারা আলীর সেই দৃষ্টিন্দন প্রজাপতি নৃত্যই আয়ত্ত করে আসছে।
কিনসাসার ওই স্টেডিয়ামে এখনো প্রতিদিন ডজনে ডজনে নারী, পুরুষ ও শিশু মুষ্টিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে আসে। কাজ ও স্কুল সেরে তারা ক্ষুধা পেটে ওখানে গিয়ে জড়ো হয় হুক এবং কিংবদন্তী যোদ্ধার সেই প্রজাপতি নৃত্যের তালে তালে মুষ্টিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে।
আলী ফোরম্যানের লড়াই দেখার পর ওই স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা প্রধান আব্দেল আজিজ সালিবোকো সেরি মুষ্টিযুদ্ধের প্রতি আকৃষ্ট হন। আজিজ জানান, তিনিও ভালো বক্সার ছিলেন। তবে তার পিতা সেটা চাইতেন না। তিনি বলেন, আমার বয়স এখন ৫০। এখন আর আমার দ্বারা এ কাজ সম্ভব না। তবে এক সময় আমিও চেয়েছিলাম মোহাম্মদ আলীর মতো নাম করতে।
এরপর জায়ারকেও পরাজিত করে আলী জায়ার ভক্তদের হৃদয় খান খান করে দিলেন। সেরি বলেন, আলী আমাদেরই একজন ছিলেন। আমরা ভাবতাম তিনি একজন জারিয়ান এবং আমেরিকায় বসবাস করেন। তিনি আরও বলেন, ফোরম্যান কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন না। কালোদের তিনি পছন্দই করতেন না এবং এটাই ছিল তার পরাজয়ের একটি কারণ।
ফোরম্যান ছিলেন অত্যন্ত অহংকারী। তিনি আমাদের মতো কালো হওয়া সত্ত্বেও কালোদের বিরোধী ছিলেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতেন এবং নারীতে ছিল তার বিশেষ দুর্বলতা।
কিংবদন্তী বক্সার মোহাম্মদ আলীর খেলার বিশেষ সৌন্দর্য ছিল প্রজাপতি নৃত্যের তালে তালে প্রতিপক্ষের চারদিকে ঘুরে ঘুরে মৌমাছির মতো হঠাৎ করে বিশাল মুষ্টির হুক মারা। আলীর আগে মুষ্টিযুদ্ধের এই শৈল্পিক কৌশল আর কেউ দেখাতে পারেনি। তার কৌশলটি এমন ছিল যে, প্রতিপক্ষ তার চোখ দেখতে পারতো না এবং হাত এমন করে রাখতেন যেন তিনি আঘাত করবেন না। অথচ ফাঁকে প্রতিপক্ষের মুখে গিয়ে পড়তো বিশাল মুষ্টির ঘুষি, তা বুঝে ওঠার অবকাশ থাকতো না। এএফপি, বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন