রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ‘জাতিগত নিধন’ অভিযানে মিয়ানমার সেনাপ্রধান ও ৩ উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতনে দেশটির শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে জবাবদিহিতা জোরদার করতে আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংস অভিযান সম্পর্কে সেনাপ্রধান মিন অং লায়েং এবং অন্য সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ থাকার কথা জানায় মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। ওই অভিযানের ফলে সেই সময় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
মিয়ানমারের সাবেক নাম বার্মার কথা উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পেও বলেন, ‘এই ঘোষণার মাধ্যমে রাষ্ট্র হিসেবে সর্বপ্রথম বার্মিজ সামরিক বাহিনীর সর্বাধিক সিনিয়র নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সম্মানের সহিত সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।’
পম্পেও এক বিবৃতি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বার্মিজ সরকার এখন পর্যন্ত দায়ী ওই সব সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা সম্পর্কে আমরা অবগত ও উদ্বিগ্ন। বার্মিজ সামরিক বাহিনী দেশব্যাপী চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারেও দেশটির সরকার উদাসীন।’
এ ছাড়াও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের হত্যা করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়া সাতজন সৈনিককে গত মে মাসেই মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। যার অর্থ হলো, ওই সৈনিকরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের চেয়েও কম জেল খেটেছে, যারা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উন্মোচন করে ৫০০ দিনেরও বেশি সময় কারাভোগ করেছিল।
জাতিসংঘ তদন্তকারীরা সহিংস ‘গণহত্যার’ জন্য শীর্ষ জেনারেলদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এর বিরুদ্ধে একটি প্রাথমিক তদন্তও শুরু করেছে।
মাইক পম্পেও ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় একটি বিবৃতি প্রদান করে। যেখানে তার পূর্বসূরী রেক্স টিলারসনের ২০১৭ সালের জাতিসংঘ নিধনযজ্ঞের প্রমাণ পেয়েছিল। এমন হত্যাকাণ্ডের পরেও সেখানে গণহত্যা শব্দ কম ব্যবহার করা হয়েছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক গত বছর প্রকাশিত একটি গবেষণায় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বর্ণনায় ‘চরম, বৃহৎ আকারের, বিস্তৃত এবং জনসংখ্যাকে সন্ত্রাসী বানানো ও রোহিঙ্গা অধিবাসীদের উচ্ছেদ করার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।’
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের বেশিরভাগ মুসলিম রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বা মৌলিক অধিকার প্রদান করতে অস্বীকার করে এবং তাদেরকে ‘বাঙালি’ হিসাবে উল্লেখ করে বলছে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী। মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে শরণার্থীর মর্যাদায় আশ্রয় নিয়েছে। সূত্র: এএফপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন