আমাদের চার পাশে হরেকরকমের জীবাণু ঘুরে বেড়াচ্ছে। সুযোগ পেলেই দেহের ভেতর প্রবেশ করে আক্রমণ করছে। এসব আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আমরা একটু সতর্ক হতে পারি সহজে। যেমন-হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে রোগজীবাণু ছড়ায়, একথা সবাই জানি। এ ছাড়া এসব জীবাণু ঘাম, রক্ত, ব্যক্তিগত মেলামেশা, করমর্দন, কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে করমর্দন, দূষিত খাদ্য গ্রহণ অথবা দূষিত পানি পান প্রভৃতির মাধ্যমে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারি। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ । ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে এ দেশের প্রকৃতিতে লাগে পরিবর্তনের ছোঁয়া। এই পরিবর্তিত পরিবেশে মানবশিশুও যেন সুস্থ থাকে, সেটাই আমাদের কাম্য। আমাদের ছোট শিশুদের চলাফেরা, খাওয়াদাওয়া সবই সঠিকভাবে যেন হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। এখন বর্ষাকাল। বর্ষা মানেই আবহাওয়ায় জলীয়বাষ্প বেশি। এই আবহাওয়ায় কিছু ভাইরাস সহজেই দুর্বল ও ছোট শিশুদের আক্রমণ করে। এজন্য এই আবহাওয়ায় শিশুদের যতেœ বেশি সচেতন হতে হয়।
আমরা যারা বিভাগীয় শহরে বসবাস করি, তাদের প্রায় সবারই বাসা অতি ঘনবসতিপূর্ণ। ঘন ঘন বাসা মানেই বাতাস চলাচলে অপ্রতুলতা। বাসার চতুর্দিকে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হয়। যত বেশি বাতাস চলাচল করে তত বেশি পরিবেশ ভালো থাকে। ঘরে রোগজীবাণু কম হয়। ঘনবসতি এলাকায় দ্রæত ভাইরাস সংক্রমিত হয় এবং একজন অসুস্থ হলে অপরজনের অসুস্থ হওয়ার আশংকা বেড়ে যায়। ছোট শিশুদের প্রচুর আলো-বাতাসপূর্ণ ঘরে রাখতে হবে। পরিবারে বড়দের কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ছোট শিশুদের তার থেকে দূরে রাখতে হবে। ছোট শিশুদের প্রতিদিন প্রয়োজনীয় গোসল যেন দেওয়া হয়, সেটা নজর রাখতে হবে। যেহেতু আবহাওয়ায় আর্দ্রতা বেশি, সেহেতু কাপড় শুকনো রাখার ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাপড় না ভেজানো ভালো। আপনার শিশুর বিছানার চাদর, বালিশের কভার, ঘরের পর্দা, মেঝেতে বিছানো কার্পেট যাতে নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। পরিষ্কার রাখলে জীবাণুমুক্ত থাকা যায়।
শিশুদের গোসলের আগে তেল মালিশ করা পরিহার করতে হবে। সব সময় পরিষ্কার কুসুম গরম পানি (পানি অবশ্য সিদ্ধ করা হতে হবে) দিয়ে গোসল করাতে হবে। ছোট শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম। সে জন্য বুকের দুধ খাওয়া শিশুদের অবশ্যই বারবার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া একটু বড় শিশুদের (ছয় মাসের বড়) বারবার সবজি, খিচুড়ি, মাছ ও গোশত খেতে দিতে হবে। রঙিন শাকসবজি আর ফলের মধ্যে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রঙিন শাকসবজি ও ফলমূল থাকতে হবে। বারবার অনেক সময় ধরে বুকের দুধ খাওয়ালে শিশু সঠিক পুষ্টি পাবে। বড়দের বেলায় ঘরের তৈরি খাবার খেতে দিতে হবে। পাশাপাশি (বিশুদ্ধ) পানি পান করতে দিতে হবে।
এখন শিশুদের জ্বর ও নাক দিয়ে পানি ঝরা-এই লক্ষণের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ লক্ষণগুলো ভাইরাসজনিত রোগের লক্ষণ। বাসায় বড়রা যদি আক্রান্ত হয় তবে শিশুদের তাদের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে। বারবার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনে নাকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। শুষ্ক ও পরিষ্কার কাপড় পরাতে হবে। ঘরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যদি পাতলা পায়খানা হয় তবে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। শিশুকে অবশ্যই পরিষ্কার হাতে খাওয়াতে হবে।
বাংলাদেশের এই ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের মায়েরা যেন তাদের শিশুদের যতœ নিতে পারেন, সে জন্য মায়েরাও কিছু কিছু তথ্য নিজেরা জেনে নিবেন। অন্যথায় সাধারণ সর্দিকাশি নিয়ে হাসপাতালের বর্হিবিভাগে ভিড় বাড়িয়ে দেওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না। সর্দিকাশিতে আক্রান্ত হলে নরম কাপড় দিয়ে নাক মুছে দেয়া, প্রয়োজনে ঘড়ৎসধষ ংধষরহব ফৎড়ঢ় দিয়ে নাকে আর্দ্রতা ধরে রাখতে হবে। এ ধরনের সর্দিকাশিতে কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। বড় শিশুদের বেলায় লেবু চা, আদার চা. গরম পানি লবণ দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। তাতে শিশুর ঠাÐার কিছুটা উপশম হবে। যদি কাশি ঘন ঘন লেগে থাকে বা সাথে অনেক জ্বর থাকে তবেই কেবল শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শের প্রয়োজন পড়ে।
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন