বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

জুন থেকেই বিচ্ছিন্ন রাখাইনের মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ

স্বদেশে গণহত্যা বিদেশে দুর্দশা-২

নিউ ইয়র্ক টাইমস | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম

গত বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারের সমাজ কল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী উইন মিয়াট আয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন যে দুই দিনের মধ্যে এক দফা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। তিনি অঙ্গীকার করেন যে ১৫ দিনের মধ্যে এনগা খু ইয়া প্রত্যাবাসন শিবিরের মাধ্যমে দুই হাজার ১৬৫ জন রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তার পরপরই আরো পাঁচ হাজার এবং এভাবে চলতে থাকবে।

উইন মিয়াট আয়ে বলেন, তারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে এবং প্রকৃত যেখানকার মানুষ সেখানে বাস করতে পারবে। সেখানে যদি বাসস্থান না থাকে তাহলে তারা যে স্থানের মানুষ তার কাছাকাছি থাকতে পারবে। কিন্তু সরকারের কার্যক্রম থেকে আভাস মেলে যে এ শুধু কল্পনা।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের তথ্য মোতাবেক গত বছরের মে থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত মাত্র ১৮৫ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯২ জনকে নৌকায় করে দেশ থেকে পালিয়ে যাবার সময় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আটক করে। ৬২ জন মিয়ানমারের বিভিন্ন জেল থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত। সরকারের ভাষ্যমতে, মাত্র ৩১ জন রোহিঙ্গা তাদের নিজের ইচ্ছায় বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফিরেছে।

এত কম সংখ্যক মানুষ ফেরার কারণ কি? এমন প্রশ্নের জবাবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা জঙ্গিদের এবং বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে কর্মরত মুসলিম দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করে বলে যে তারা রোহিঙ্গাদের না ফিরতে প্ররোচনা দিচ্ছে।

এক সময় রাখাইনের মুসলিম প্রধান শহর মংডুর সাধারণ প্রশাসন বিভাগের প্রধান উ সো অং বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরের মুসলিম সন্ত্রাসীরা বলে যে তাদের মিয়ানমারে ফেরা নিরাপদ নয়। তাই লোকজন ফিরছে না। অথচ তাদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা রয়েছে।

আমরা যা দেখলাম ঘর নেই, কিন্তু প্রচন্ড ভীতি আছে : মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের জন্য অভ্যর্থনা গালিচা বিছিয়েছে। এ আশ্বাস এসেছে স্বয়ং মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারের কার্যত প্রধান ও নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চির নিকট থেকে। তার সমাজ কল্যাণমন্ত্রী উইন মিয়াট আয়ে অং সান সু চির আনুষ্ঠানিক পদবি উল্লেখ করে বলেন, যারা মিয়ানমারে বাস করত এবং কিছু কারণে মিয়ানমার ত্যাগ করেছিল, স্টেট কাউন্সিলর ইতোমধ্যেই তাদের স্বদেশে ফেরত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই তাদের ফেরত না আসার কোনো কারণ নেই।
কিন্ত রোহিঙ্গাদের কথা হচ্ছে, মিয়ানমারে তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে তা বোধগম্য। তারা প্রথমেই বিবেচনা করছে কি তাদের দেশছাড়া করেছে এবং তাদের দেশত্যাগের সময় থেকে কি ঘটেছে এবং কি ঘটেনি।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের একটি দল রাখাইনে পুলিশ চৌকি ও একটি সেনা শিবিরের উপর হামলা চালায়। তার কয়েক ঘণ্টা পরই সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর হিংস্র নিষ্ঠুরতা নেমে আসে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যা শুরু করে। বইতে থাকে অসহায় রোহিঙ্গাদের রক্তের স্রোত। নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়।
নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের শত শত গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। মুসলিম বিদ্বেষী বৌদ্ধ জনতা সৈন্যদের সাথে যোগ দিয়ে এই জাতিগত নিধনকান্ডে অংশগ্রহণ করে। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস বলে, ২৫ আগস্ট হত্যাকান্ড শুরু হওয়ার পর এক মাসে ছয় হাজার ৭০০ রোহিঙ্গাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

মিয়ানমার সরকার এ হত্যা, ধ্বংস ও ধর্ষণকে জঙ্গি বিরোধী শুদ্ধি অভিযান বলে আখ্যায়িত করে। আসলে পরিকল্পনা অনুযায়ী এ হামলা শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগেই রাখাইনে সৈন্য মোতায়েন শুরু হয়। অভিযান শুরুর পর সামরিক হেলিকপ্টার থেকে রকেট নিক্ষেপ করে গ্রামগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়। এ থেকে বোঝা যায় যে জাতিগত নিধন অভিযান চালানো হয় পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে।

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা ঘিঞ্জি, নোংরা পরিবেশে বিশ্বের বৃহত্তম উদ্বাস্তু শিবিরে বাস করছে। সেখানে মানব পাচার চলছে। মেয়েদের পতিতালয়ে ঠাঁই হচ্ছে। পুরুষরা শর্তাধীনে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় দাসত্ববৃত্তিতে নিয়োজিত হচ্ছে। বর্ষার সময় উদ্বাস্তু শিবিরগুলো নর্দমার ময়লা ও কাদার সংমিশ্রণে রোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে পরিণত হয়। পাহাড় ধস সেখানে সাধারণ ঘটনা। এমনকি হাতির পদপিষ্ট হয়েও রোহিঙ্গারা নিহত হচ্ছে। সেখানে থাকার আগ্রহ খুব অল্পই।
কিন্তু উদ্বাস্তু শিবিরের এই দুঃসহ অবস্থা সত্তে¡ও বহু উদ্বাস্তুর কাছেই মিয়ানমার খুব খারাপ জায়গা। তারা বিস্মিত যে তাদের এমন একটা দেশে ফিরতে হবে যেখানে সরকার নিপীড়ন সংঘটিত হওয়ার কথা স্বীকার করতে অস্বীকার করে।

এক রোহিঙ্গা পরিবারের একমাত্র জীবিত ব্যক্তি রমজান আলি বলেন, যারা আমাদের আপনজন-প্রিয়জনদের হত্যা করেছে তাদের আমরা কি করে বিশ্বাস করব? মিয়ানমারের সৈন্যরা রাখাইনের তুলাতলি গ্রামে গণহত্যা চালালে শুধু তিনিই প্রাণে রক্ষা পান।

রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা শুরু হলে উত্তর রাখাইনে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা চাকরি, শিক্ষা ও মৌলিক সেবা পাওয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জুন মাস থেকে এ অঞ্চলের মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই কারাগারে আটক রয়েছে। তারা অনেকেই সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত। যারা জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে তাদের কখনো কখনো প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গা হিসেবে প্রদর্শন করা হয়। তারা কেউ কখনো মিয়ানমার ত্যাগ না করলেও।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবিরের নেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, রাখাইনে আমার বাড়িটার কথা খুব মনে পড়ে। কিন্তু আমি এমন কোনো জায়গায় ফিরে যেতে চাই না যেখানে আমার পরিবারকে হত্যা করা হতে পারে। (আগামীকাল শেষ পর্ব)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
TORTURE THE MUSLIM IN RAKHAIN SHOULD MUST STOP AND RPHINGA SHOULD HAVE THEIR FRERDOM & RIGHTS ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ৪:১৪ এএম says : 0
WE SHOULD TRY TO STOP THESE GENOCIDE BY WRITTING ETC....
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন