মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

এখনো প্রধান শক্তি তবে নীরবে অদৃশ্য হচ্ছে প্রতিরোধ প্রাচীর

বিশ্বে প্রাধান্য হারাচ্ছে পতনের মুখে যুক্তরাষ্ট্র-২

পিএসডব্লিউ | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

যা ঘটে তার সাথে স্কুলে নিরীহ ছেলেদের সঙ্গে মাস্তান ছেলের গুন্ডামির মিল রয়েছে। এই গুন্ডা ছেলের ভয়ে সাধারণ ছেলেরা কাঁপে। গুন্ডা ছেলেকে কেউ কিছু ভয়ে বলে না। তাকে সবাই ঘৃণা করে। তবে মুখে কিছু না বললেও সবাই গোপনে চায় যে লজ্জাজনক ভাবে সে পরাজিত হোক। একদিন গুন্ডা ছেলেটি সবারই ঘৃণার পাত্র হয়ে পড়ে। এরপর এক পর্যায়ে অন্য একটি ছেলে যার গায়ে জোর আছে ও মনোবল দৃঢ়। সে গুন্ডা ছেলেটির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় ও বিজয়ী হয়। গুন্ডা ছেলেটির পতনের পর মজার ব্যাপার ঘটে। তার তোষামোদকারীরা হঠাৎই উপলব্ধি করে যে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। তারা নতুন শক্তিকে তোয়াজ করতে শুরু করে। অন্যদিকে গুন্ডা ছেলেটির পতনের পর তার সহপাঠি ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের তার প্রতি এতদিনের জমে থাকা রাগ, ভয় ও ঘৃণার প্রকাশ ঘটে। তার পরাজয় তাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দজনক হয়ে ওঠে। সাম্রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রেও এই একই ব্যাপার ঘটে।

প্রকৃত প্রয়োজনের সময় বিপন্ন দেশকে উদ্ধারে যে এগিয়ে আসে সে সম্মানপ্রাপ্ত হয় (যেমন দুই মহাযুদ্ধ)। কিন্তু সে দেশটি যখন একটি মস্তান শক্তিতে পরিণত হয় এবং যে কোনো ছুতোয় অন্যদেশে আগ্রাসন চালায় যেমন আফগানিস্তান, লিবিয়া, ইরাক ও সিরিয়া, তখন তার মিত্ররা তার কাছে নতজানু থাকে ঠিকই। তবে গোপনে তাকে ভয় করে ও তার সঙ্কট কামনা করে।

সাম্রাজ্যটি যখন উৎপীড়নের জন্য চারপাশে অন্য দেশ খুঁজতে থাকে, যেমন ইরান ও ভেনিজুয়েলা, তখন তার মিত্ররা কিছু বলে না। কিন্তু যখন দেখে যে জন বোল্টন ও মাইক পম্পেও যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছেন ও লাগামহীন কথার তুবড়ি ছোটাচ্ছেন তখন ভীত হয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রতি প্রধান গুরুত্ব আরোপ করেছে। কিন্তু তা যদি বিশ্বকে তার প্রাধান্যের কাছে নতি স্বীকার করাতে ব্যর্থ হয়, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য সামরিক আগ্রাসনের ব্যাপারে বারবার হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছে, কোনো পথই বন্ধ রাখা হবে না।

যুক্তরাষ্ট্র যখন এক বেপরোয়া মস্তান ছিল তখন সে ক্ল্যাসিক পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এর ফলে সে সময় তার মিত্রদের সমর্থন কাঠামো দ্বিগুণ আকার লাভ করেছিল। একই সময়ে তার মিত্ররা সরে যেতে শুরু করে ও তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে অন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

ইতিহাস অসংখ্যবার এটা ঘটতে দেখেছে। ‘মেধা পাচার’ সঙ্ঘটিত হয় যাতে সেরা ও অত্যন্ত সৃজনশীল মানুষেরা অন্য কোথায়ও তাদের ভবিষ্যত সন্ধান করতে থাকেন। যেমন অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ইউরোপীয়দের যুক্তরাষ্ট্রের মত নতুন উপনিবেশের দিকে ছুটতে দেখা গিয়েছিল, তাদের বর্তমান উত্তরসূরিরা যেমন এখন ছোটে উপসাগর অঞ্চলে।

যুক্তরাষ্ট্র এখন এক উদ্দীপনা স্থগিত পর্যায়ে আছে। সে এখনো প্রধান শক্তি, কিন্তু তার প্রতিরোধ প্রাচীরগুলো নীরবে অদৃশ্য হচ্ছে। নিকট ভবিষ্যতের কোনো এক পর্যায়ে এমন হতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এমন এক শত্রুর বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করে বসতে ও আগ্রাসন চালাতে পারে যে শক্তিশালী কিংবা তার এমন জোট আছে যা তাকে শক্তিশালী করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র এমন সময়ে যুদ্ধে প্রবেশ করবে যখন সে ভেঙ্গে গেছে এবং তা হয়ত আকস্মিক ও নাটকীয় ভাবে ঘটবে। চ‚ড়ান্ত পতন ঘটবে বিপজ্জনক গতিতে। যখন তা ঘটবে তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ আমেরিকানই ঘটনার বিপরীত কিছু ঘটার ব্যর্থ আশা করবে। তারা সম্মিলিত ভাবে এ রকমটা আশা করবে যে ওফ! আমরা ভুল করেছি। বিশ্ব ক্ষমাশীল হবে, আমাদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে দেবে।

তবে ঐতিহাসিক ভাবে এটা কখনো ঘটবে না। সাম্রাজ্যগুলো বিপজ্জনক দ্রুততায় ভেঙ্গে পড়ে। কারণ তাদের সমর্থন ব্যবস্থা তাদের পরিত্যাগ করে নতুন ভাবে অন্যত্র নিজেদের অবস্থান তৈরি করে। দিগন্তে সাম্রাজ্য পতনের যখন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে তখন তার জন্য শোক না করে তার পরিবর্তে আমাদের দৃষ্টিকে বিশে^র সে সব অংশের দিকে নিবদ্ধ করতে হবে যা কিনা অনিবার্য পরিস্থিতিতেও লাভজনক হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে সমাজতান্ত্রিক ধারণা ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মুঠি ভরে বিলাতে অর্থ মুদ্রণ করছে। এসব ঘটছে তখন যখন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিশ্বব্যপী নিজের সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে। আর সব মিলিয়ে বিশ্বশ্রেণির এক বিপর্যয় ঘনীভূত হচ্ছে যা আগে আমরা দেখিনি। (শেষ)

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Sheikh Ahid ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৫৯ এএম says : 0
Very good, waiting for next one
Total Reply(0)
ফারিহা রিহা ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০০ এএম says : 0
Parbe na, puro Asia ke gire rakhce ,8m Naval Force, puro purosanto moha sagor gire rekhece, markin Naval Force, Tobe Allah chaile poton onibarjo.
Total Reply(0)
Nazmul Hossain Niloy ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০০ এএম says : 0
Jara jara USA er hater tader ke bole dio India ba China judi power e ashe tahole duniyar poton hobe.
Total Reply(0)
Muhsin Reza ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০১ এএম says : 0
ইয়া আল্লাহ্ আপনি এই জালিমদের ধবংশ করুন
Total Reply(0)
Akmnazrulislam Islam ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০১ এএম says : 0
Time will say.
Total Reply(0)
Kamal Pasha Jafree ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০২ এএম says : 0
সেচ্চাছারিতার কারণে আজ আমেরিকা সব জায়গায় প্রভাব হারাতে বসেছে।
Total Reply(0)
জমির উদ্দীন ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০২ এএম says : 0
খবরটি শুনে খুবই ভালো লাগলো। আজ সারাবিশ্বে অশান্তির মূলে এই আমেরিকা। বিশেষ করে মুসলিম নিপীড়নের জন্য তারাই একমাত্র দায়ী
Total Reply(0)
Nannu chowhan ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৮:৪৭ এএম says : 0
Very appropriate, appreciative & it's true, thanks for opening to us, what is US now & her future..
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন