সউদী আরব বলছে, তাদের কাছে সাক্ষ্য প্রমাণ আছে যে গত ১৪ সেপ্টেম্বর তাদের দু’টি তেল স্থাপনায় (আবকায়িক ও খুরাইস তেল স্থাপনা) ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মূলে রয়েছে ইরান। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সউদী আরবে হামলা চালিয়ে ইরান যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াল কেন? বা এ নিয়ে একটি একটি যুদ্ধ হবে কিনা।
যে মাত্রায় এ হামলা হয়েছে তার অর্থ এই যে যা ঘটেছে সউদী আরব তা উপেক্ষা করতে পারবে না। ইরানকে দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত এর জবাব দিতে সউদী আরবকে বাধ্য করবে।
জাতিসংঘের একটি বিশেষজ্ঞ দল এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তাদের তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সউদী আরব সম্ভবত অপেক্ষা করবে।
যদিও বিশেষজ্ঞরা একই ধরনের সিদ্ধান্তে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে যে এই হামলা ইরানের বস্তুগত সমর্থন ও নির্দেশনা ছাড়া পরিচালিত হয়নি। এই প্রক্রিয়াটি সউদীদের তাদের করণীয় নির্ধারণের সময় দেবে।
ইরান যদিও এ হামলার কথা অস্বীকার করছে, তা তাদের সাহায্যে আসছে না।
সউদী আরব ও তার মিত্ররা মনে করে যে ইরান এ ঝুঁকি নিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এটা বোঝাতে যাতে তিনি ইরানকে পঙ্গু করে ফেলা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সহজ করেন। ট্রাম্প গত বছর ইরানের সাথে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি পরিত্যাগ করেন ও নতুন আরেকটি চুক্তির দাবি জানান।
ইরানের নেতারা আশা করছেন যে এ অঞ্চলকে যুদ্ধের মধ্যে ঠেলে দেয়ার ঝুঁকি বিশ^শক্তিগুলোকে উপলব্ধি করাবে যে নিষেধাজ্ঞা বিপর্যয়ের এক পন্থা।
ইরানি নেতারা আশা করছিলেন যে পারমাণবিক চুক্তি মেনে চলা ও এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী কর্মকান্ড বন্ধের বিনিময়ে ইরানকে ১৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানের ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর পরিকল্পনা ফলদায়ক হবে। কিন্তু ট্রাম্প ম্যাক্রোঁর পরিকল্পনা অনুমোদন করেননি।
গত বুধবার ট্রাম্প তার অর্থমন্ত্রীকে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা গুরত্বপূর্ণ ভাবে বৃদ্ধির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
সউদী আরবে এ মাপের হামলা সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির অনুমোদন ছাড়া ঘটেনি। এ সপ্তাহে তিনি একটি ভাষণ দেন যাতে সউদী আরবের বৃহত্তম তেল স্থাপনায় হামলার বা যে কোনো মহূর্তে একটি যুদ্ধ শুরুর কোনো উল্লেখ ছিল না। তার পরিবর্তে তিনি বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানি কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো আলোচনা হবে না।
তবে তখনি বা পরে আয়াতুল্লাহ খামেনি তার অবস্থা পরিবর্তন করতে বাধ্য হন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনায় রাজির কথা জানান যেটা ইরানের মধ্যপন্থী নেতারা চাইছেন।
ইরানের তেল রফতানি শূন্যের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছেছে। তার রাজস্ব প্রবাহ শুকিয়ে আসছে এবং নগদ অর্থের মজুদ আর কয়েকমাস মাত্র চলবে বলে ধারণা হচ্ছে। তার মুদ্রামানের অবনতির ফলে মুদ্রাস্ফীতি ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। ইরানিদের ক্রয় ক্ষমতা অর্ধেকে নেমে এসেছে। তাদের প্রয়োজন পূরণ কঠিন হয়ে উঠেছে।
তাহলে কি সউদী আরব ইরানের মাথা নোয়াতে তার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেবে? মনে হচ্ছে, সউদী আরব তা করতে অনাগ্রহী।
সউদী আরবের জনসংখ্যা বর্তমানে তিন কোটি ৩০ লাখ। আর ইরানের জনসংখ্যা আট কোটি।
ইরানের রয়েছে হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র যা সউদী আরবের তেল স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি ও জনসংখ্যা কেন্দ্রগুলোকে দুর্বল করেছে। সে তুলনায় সউদী আরবে শত শত চীনা নির্মিত ক্ষেপণাস্ত্র এবং সীমিত সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সামর্থ্য রয়েছে।
সউদী আরবের ইরানের সমসংখ্যক জঙ্গি বিমান আছে। তবে তার জঙ্গি বিমানসমূহ আধুনিক ও কার্যকর। অন্যদিকে ই্রানের জঙ্গি বিমানগুলো সেকেলে ও অনির্ভরযোগ্য।
এ অঞ্চল জুড়ে ইরানের প্রক্সিরা রয়েছে এবং সউদী আরবের সংখ্যালঘু শিয়াদের মধ্যে তাদের সমর্থক আছে।
সউদী আরব ইতিমধ্যে ইয়েমেনে ইরানের মিত্র বিদ্রোহী হুথিদের বিরুদ্ধে এক ব্যয়বহুল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।
কিন্তু ইরানের সাথে সরাসরি যুদ্ধ হলে, তা অনিবার্য হবে বিমান শক্তি ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতার ভিত্তিতে। কোনো পক্ষই এতে জয়ী হবে না।
উপসাগর অঞ্চলে যদিও মার্কিন সৈন্য, বিমান ও জাহাজ মোতায়েন রয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে অনাগ্রহী মনে হচ্ছে।
কোনো যুদ্ধ হলে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ ও সামরিক ঘাঁটিগুলো ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হবে। উল্লেখ্য, হরমুজ প্রণালি দিয়ে বিশে^র এক পঞ্চমাংশ তেল বহন করা হয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পুনর্নির্বাচনী প্রচারণায় মার্কিন পেট্রোল পাম্পসমূহে উল্লেখযোগ্য মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকতে পারেন।
সউদী আরবের জন্য মার্কিন সামরিক সমর্থন জরুরি। কিন্তু ট্রাস্প চান ইরানকে জবাব দিতে সউদী আরবই আগে পা বাড়াক এবং কোনো মার্কিন সাহায্যের জন্য অর্থ দিক।
ইরানের বিরুদ্ধে কোনো জবাব দিতে সউদী আরব সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনকে সাথে চায়।
যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে তার ইউরোপীয় মিত্রদের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন চায়। তবে তারা এ উত্তেজনার বিস্তৃতিকে ট্রাম্পের ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি পরিত্যাগের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে দেখে।
এদিকে ইরানের কট্টর পন্থীরা এবার প্রদর্শন করতে পারবে যে তাদের কৌশল দেশের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সহজ করে আনবে না দেশকে যুদ্ধ ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন