ইনকিলাব ডেস্ক
চমকে যাওয়ার মতো খবর দিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম। আরল্যান্ডো হামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে তারা জানিয়েছে, হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরক কেনার সময় স্বামী মতিনের সঙ্গে থাকার কথা স্বীকার করেছেন তার স্ত্রী নূর সালমান। তিনি স্বীকার করেছেন, হামলার আগে একবার যখন তার স্বামী মতিন অরল্যান্ডোর সেই নাইট ক্লাবের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়েছিলেন, তখন স্বামীকে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
তবে ওই হামলায় মতিনের সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না তার স্ত্রী সালমানকে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন তদন্ত সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, হামলা সম্পর্কে আগে থেকেই কিছু তথ্য জানা থাকার পরও তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত না করার কারণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হতে পারে।
উল্লেখ্য, অরল্যান্ডোর হামলাকারী মতিন সম্পর্কে মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআইকে বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছিলেন তার স্ত্রী নূর সালমান। আর তা দিতে গিয়েই তাদের ফাঁদে পা দিয়ে এসব স্বীকারোক্তি দিয়েছেন সালমান। নিজস্ব সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গতকালই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার কথা।
বর্তমানে আইন প্রয়োগকারী বাহিনী ও তদন্ত সংস্থাগুলোর জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় রয়েছেন মতিনের দ্বিতীয় স্ত্রী নুর সালমান। ২০১১ সালে তাদের বিয়ে হয়। এ দম্পতির তিন বছরের একটি সন্তানও রয়েছে। ফ্লোরিডার ফোর্ট পিয়েরসেতে থাকতেন মতিন ও সালমান। পালস ক্লাব থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে ছিল তাদের বাড়ির অবস্থান। শনিবারের হামলার পর থেকেই সালমানকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় রাখলেও তাকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি।
সূত্রের বরাত দিয়ে ফক্স নিউজ জানায়, হত্যাকা- চালানোর সময় মতিন নাইটক্লাবের ভেতর থেকে স্ত্রীকে ফোন দিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অবশ্য সালমান পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, তিনি স্বামীকে পালস ক্লাবে হামলা থেকে বিরত করার এবং সেখান থেকে বের করে আনার চেষ্টা করছিলেন। সালমানের দাবি, তার স্বামীর আচরণে পরিবর্তন দেখতে পেয়ে তাকে সহিংস কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছিলেন তিনি।
এফবিআইকে সালমান জানান, শনিবার নাইটক্লাবে হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই মিথ্যে কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান মতিন। এফবিআইয়ের ধারণা, মতিনের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে সহযোগিতা করেননি সালমান। তবে স্বামীর আচরণ আর ইচ্ছের ব্যাপারে জানার পরও তা আইন প্রয়োগকারী বাহিনীকে না জানানোর কারণে তাকে অভিযুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে।
এদিকে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর ভিন্ন এক সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, মতিন হামলা চালাবেন বলে আগে থেকেই জানতেন সালমান। মতিনের সঙ্গে সম্ভাব্য হামলা এলাকাগুলোতে তিনিও ভ্রমণ করেছিলেন। জুনের শুরু দিকে পালস নাইট ক্লাব এবং ডিজনি স্প্রিংসেও গিয়েছিলেন তিনি। তবে অস্ত্র কেনার সময় সালমান মতিনের সঙ্গে ছিলেন কিনা সে ব্যাপারে তদন্তকারীরা নিশ্চিত হতে পারেননি। তবে পালস ক্লাবে হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ডিজনি স্প্রিংসে আবারও গিয়েছিলেন মতিন। তবে সে সময় মতিন একা ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন আইন-প্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্যরা।
সিনেট ইনটেলিজেন্স কমিটির সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর অ্যাংগাস কিং সিএনএন-কে জানিয়েছেন, ‘হামলাকে কেন্দ্র করে মতিনের মাঝে কী চলছিল সে ব্যাপারে তার স্ত্রীর জানা আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনিই এখন সব আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি (সালমান) আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, শনিবার (১১ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো শহরের পালস নাইটক্লাবে ঢুকে গুলি চালান ওমর মতিন নামক এক ব্যক্তি। এরপর তিনি নাইটক্লাবে অবস্থান করা লোকজনকে জিম্মি করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, জরুরি সাহায্যের জন্য দেওয়া ৯১১ নম্বরে ফোন করে ওমর নিজেই ওই হামলার কথা জানান। সে সময় ওমর নিজেকে আইএসের অনুগত বলে দাবি করেন। ওমর মতিনের কাছে একটি রাইফেল, একটি পিস্তল এবং দুটি সন্দেহজনক যন্ত্র ছিল বলে পুলিশ জানায়। স্থানীয় সময় আনুমানিক ভোর ৫টার দিকে সোয়াটের বিশেষ কমান্ডোরা জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য অভিযান চালান। ওই অভিযানে ওমর মতিন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এদিকে প্রাথমিক তদন্ত শেষে মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই জানিয়েছে, ওমর মতিন কেবল আইএসই নয় আরও অনেক জঙ্গি সংগঠনের প্রতি অনুগত ছিলেন। সিএনএন, বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন