সউদী আরব ও ইরান পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় পরোক্ষ আলোচনার পথে রয়েছে জানা গেছে। দুই দেশের পক্ষ থেকেই এ ব্যাপারে ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সউদী আরব সফর করেন। এ সময় রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিতে তাকে অনুরোধ করেন সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। যুবরাজ ইমরান খানকে বলেন, ‘আমি যুদ্ধ এড়াতে চাই।’ নিউ ইয়র্কে সাম্প্রতিক জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন পাকিস্তানি নেতা। রিয়াদের পক্ষ থেকে ইরাককেও অনুরোধ করা হয়েছে; তারাও যেন এ ব্যাপারে ইরানি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে। ৫ অক্টোবর শনিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সউদী আরবের দুই তেল স্থাপনায় হামলার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে রিয়াদ। ওই হামলার পর সউদী আরবের তেল উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসে। এরপরই ইরানের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করতে পাকিস্তান ও ইরাকের শরণাপন্ন হন এমবিএস নামে পরিচিত সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
১৪ সেপ্টেম্বরের হামলায় ঘটনায় ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা দায় স্বীকার করলেও শুরু থেকেই এ ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে আসছে সউদী আরব। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হয় রিয়াদ। কিন্তু দৃশ্যত রিয়াদের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই নড়েচড়ে বসেন সউদী যুবরাজ। মিত্র আমেরিকার কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে তেহরানের সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটতে এক রকম বাধ্য হন তিনি।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করায় সউদী আরবের নিরাপত্তা নিয়ে আমেরিকার অঙ্গীকারের বিষয়ে সউদীদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ওয়াশিংটনের প্রতি রিয়াদের আত্মবিশ্বাস ছিল উপসাগরীয় অঞ্চলে বিগত কয়েক দশকের কৌশলগত বিন্যাসের ভিত্তিস্বরূপ। কিন্তু বড় ধরনের হামলার শিকার হয়েও ইরানের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে না পেরে দৃশ্যত হতাশ সউদী আরব। নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্র ওয়াশিংটনই তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
ট্রাম্পের বিষয়ে মুসলিম বিশ্বের উদ্বেগ সত্তে¡ও বরাবরই তার প্রতি আগ্রহ ছিল রিয়াদের। ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্পের মুসলিমবিরোধী নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় দুনিয়াজুড়ে সমালোচনার মধ্যেই ট্রাম্পকে ‘মুসলমানদের সত্যিকারের বন্ধু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন সউদী আরবের বর্তমান যুবরাজ এমবিএস। ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে ট্রাম্পের অভূতপূর্ব আগ্রহ রয়েছে। তিনি মুসলমানদের সত্যিকারের বন্ধু। তার অভিবাসন নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তু ইসলাম-এমনটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বরং একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দিতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’ ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনা মেনে নিতে সউদী যুবরাজ ফিলিস্তিনের প্রতিও তীব্র চাপ তৈরি করেছিলেন বলে খবর এসেছিল। কিন্তু এখন আক্রান্ত হওয়ার পরও ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনকে কাছে না পেয়ে রিয়াদকে সংকটের নিজস্ব সমাধান খুঁজতে হচ্ছে।
রিয়াদের পক্ষ থেকে নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছে ইরানের সঙ্গে মধ্যস্থতার ব্যাপারে সউদী আরবের পক্ষ থেকে পাকিস্তান ও ইসলামাবাদের শরণাপন্ন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে সরাসরি যুবরাজ এমবিএস এ অনুরোধ করেছেন বলে যে খবর বেরিয়েছে তা অস্বীকার করেছে রিয়াদ।
ইরানের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, তাদের দিক থেকে আলোচনার ব্যাপারে কোনও আপত্তি নেই। এ ব্যাপারে তেহরানের অবস্থান উন্মুক্ত। সম্প্রতি এ ব্যাপারে আল জাজিরা-র সঙ্গে কথা বলেন ইরানের স্পিকার আলী লারিজানি। তিনি বলেন, সউদী আরব এবং এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সংলাপের ব্যাপারে ইরান উন্মুক্ত। ইরান-সউদী সম্পর্ক এ অঞ্চলের নিরাপত্তাগত ও রাজনৈতিক বহু সমস্যা সমাধানে সক্ষম।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদিল আবদুল মাহদী গত সপ্তাহেই আল জাজিরা-কে জানান, তার বিশ্বাস তেহরানের সঙ্গে উত্তেজনার পারদ কমিয়ে আনতে চাইছে রিয়াদ।
আদিল আবদুল মাহদী বলেন, প্রত্যেকেই আলোচনা ব্যাপারে উন্মুক্ত। ইরান বলছে, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলে তারা আলোচনায় আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্রও আলোচনার কথা বলছে। সউদী আরবও আলোচনার দ্বার বন্ধ করে দেয়নি। সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, আল জাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন