মধ্যপ্রাচ্যের দুই আঞ্চলিক প্রতিদন্ধী সউদী আরব ও ইরানের মধ্যকার সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। এমন পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির চিফ অব স্টাফ মাহমুদ ওয়ায়েজি। তিনি বলেছেন, সউদী আরবের মতো আঞ্চলিক দেশগুলো এখন এ কথা উপলব্ধি করেছে যে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতার বিকল্প নেই।
তেহরান থেকে প্রকাশিত দৈনিক এতেমাদ’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তেহরান-রিয়াদ সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন মাহমুদ ওয়ায়েজি। তিনি বলেন, অতীতে সউদী আরবের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ ছিল। কিন্তু মার্কিন সরকারের উসকানিমূলক আচরণের ফলে এ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন সউদী আরবসহ অন্যান্য আরব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিভেদ সৃষ্টির নীতির স্বরূপ উপলব্ধি করতে পেরেছে। আঞ্চলিক দেশগুলো এ কথা বুঝতে পেরেছে যে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে মতপার্থক্য ও সংঘাত পরিহার করতে হবে। ইরান বহুদিন ধরে তাদেরকে এ কথাই বুঝিয়ে এসেছে।
মাহমুদ ওয়ায়েজি বলেন, সউদী আরবসহ আরও কিছু দেশ মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ দেখিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উসকানিমূলক নীতি ব্যর্থ হবে।
ইরানের এই শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানান, তার দেশ সউদী আরবসহ সবগুলো আঞ্চলিক দেশকে আলোচনায় বসার ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ সবগুলো দেশকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় উত্তেজনা প্রশমন ও পারস্পরিক সহযোগিতা শক্তিশালী করা।
এর আগে গত অক্টোবরের গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় পরোক্ষ আলোচনার পথে হাঁটছে মধ্যপ্রাচ্যের দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সউদী আরব ও ইরান। দুই দেশের পক্ষ থেকেই এ ব্যাপারে ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সউদী আরব সফর করেন। এ সময় রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিতে তাকে অনুরোধ করেন সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। যুবরাজ ইমরান খানকে বলেন, ‘আমি যুদ্ধ এড়াতে চাই।’ নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন পাকিস্তানি নেতা। রিয়াদের পক্ষ থেকে ইরাককেও অনুরোধ করা হয়েছে; তারাও যেন এ ব্যাপারে ইরানি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে।
২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সউদী আরবের দুই তেল স্থাপনায় হামলার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে রিয়াদ। ওই হামলার পর সউদী আরবের তেল উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসে। এরপরই ইরানের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করতে পাকিস্তান ও ইরাকের শরণাপন্ন হন এমবিএস নামে পরিচিত সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
১৪ সেপ্টেম্বরের হামলার ঘটনায় ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা দায় স্বীকার করলেও শুরু থেকেই এ ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে আসছে সউদী আরব। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হয় রিয়াদ। কিন্তু দৃশ্যত রিয়াদের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই নড়েচড়ে বসেন সউদী যুবরাজ। মিত্র আমেরিকার কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে তেহরানের সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটতে এক রকম বাধ্য হন তিনি।
রিয়াদের পক্ষ থেকে নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছে ইরানের সঙ্গে মধ্যস্থতার ব্যাপারে সউদী আরবের পক্ষ থেকে পাকিস্তান ও ইরাকের শরণাপন্ন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে সরাসরি যুবরাজ এমবিএস এ অনুরোধ করেছেন বলে যে খবর বেরিয়েছে, তা অস্বীকার করেছে রিয়াদ।
ইরানের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, তাদের দিক থেকে আলোচনার ব্যাপারে কোনও আপত্তি নেই। এ ব্যাপারে তেহরানের অবস্থান উন্মুক্ত। সম্প্রতি এ ব্যাপারে আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলেন ইরানের স্পিকার আলী লারিজানি। তিনি বলেন, সউদী আরব এবং এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সংলাপের ব্যাপারে ইরান উন্মুক্ত। ইরান-সউদী সম্পর্ক এ অঞ্চলের নিরাপত্তাগত ও রাজনৈতিক বহু সমস্যা সমাধানে সক্ষম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন