যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার স্যামুয়েল স্যামুয়েল লিটলের বয়স এখন ৭৯ বছর। ঠান্ডা মাথায় একে একে ৯০ জন নারীকে খুন করেছেন এই মার্কিন সিরিয়াল কিলার।
১৯৭০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ৯৩টি হত্যাকান্ড সংঘটনের কথা রোববার স্বীকার করেছেন এ খুনি। খবর এএফপির। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) কর্মকর্তারা বলেন, স্যামুয়েল লিটল দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস সিরিয়াল কিলার।
কয়েক সপ্তাহ ধরে টেক্সাসের এক কারাগারের সেল থেকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে ইন্টারভিউ রুমে নিয়ে আসা হচ্ছে মাথাভর্তি পাকা চুলওয়ালা এক বৃদ্ধ কয়েদিকে। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের আক্রান্ত স্যামুয়েলের শারীরিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপ হচ্ছে।
নথি বলছে, স্যামুয়েল লিটলের বিরুদ্ধে গত পঞ্চাশ বছর ধরে ৯০টিরও বেশি হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে, আশির দশকে লস অ্যাঞ্জেলসে তিন নারীকে খুন করার অপরাধে আপাতত তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করতে হচ্ছে।
আমেরিকার অপরাধ ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক খুনের রেকর্ড রয়েছে সিরিয়াল কিলার ‘দ্য গ্রিন রিভার কিলার’ গ্যারি রিজবির। ১৯৮০-৯০ এর দশকে ওয়াশিংটনে মোট ৪৯ জনের প্রাণ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই রেকর্ডকেও ¤øান করে দিয়েছেন লিটল।
শুধু তাই নয়, গোয়েন্দাদের কাছে প্রতিটি হত্যাকান্ডের খুঁটিনাটি বিবরণ তিনি দিয়েছেন উৎসাহভরে। জেরার মুখে ভেঙে পড়া দূরের কথা, অপরাধ স্বীকার করার সময় মাঝেমধ্যে তাকে শব্দ করে হেসে উঠতেও দেখা যায়।
মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ বলছে, পানশালা বা অন্যত্র নেশাসক্ত একলা নারী দেখলে নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে আলাপ জমাতেন তিনি। একত্রে নেশা করার টোপ দিয়ে বা যৌন মিলনের প্রস্তাব দিয়ে মেয়েটিকে নিজের গাড়ির পেছনের আসনে বসাতেন। কথা বলতে বলতেই গলা টিপে হত্যা করতেন সেই মেয়েকে।
তবে সবার সঙ্গেই যে সে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হতেন, এমন নয়। তার দাবি, ধীরে ধীরে এ ব্যাপারে অক্ষম হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। যদিও কিছু নারীর দেহে ও পোশাকে তার বীর্যের নমুনা পাওয়া গেছে। যৌন সম্পর্ক হোক বা না হোক, শেষ পর্যন্ত মেয়েদের গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করাই ছিল স্যামুয়েল লিটলের প্রধান উদ্দেশ্য। মনোবিদদের ব্যাখ্যা, সম্ভবত প্রাণহানির মাধ্যমেই যৌনসুখ উপভোগ করতো বিকৃত মস্তিষ্কের এই খুনী।
মার্কিন গোয়েন্দারা বলছেন, শ্বাসরোধ করার আগে নারীদের প্রচন্ড পেটাতেন স্যামুয়েল। সাবেক মুষ্টিযোদ্ধা হওয়ার সুবাদে তার কব্জি অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। একবার একটি মেয়েকে তলপেটে এতো জোরে ঘুঁষি মেরেছিলেন যে তার শিরদাঁড়া টুকরো হয়ে যায়।
বছরের পর বছর একের পর এক নারীকে হত্যা করেও কীভাবে পুলিশের চোখে ধুলা দিয়েছিলেন স্যামুয়েল? জটিল এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছেন অপরাধী নিজেই। লিটলের দাবি, আমি নিজের পৃথিবীতে যা খুশি করতে পারি। তোমাদের বিশ্বে আমি কখনও ঢুকতাম না।
গত অক্টোবরে লিটলকে জেরা করেন ফ্লোরিডার ম্যারিয়ন কাউন্টির গোয়েন্দা সার্জেন্ট মাইকেল মঞ্জেলুজো। ১৯৮২ সালে ওই রাজ্যে ২০ বছর বয়সী তরুণী রোজি হিলকে খুন করেছিলেন তিনি। ৩৬ বছরের পুরনো সেই ঘটনার পুঙ্খানুপুক্সক্ষ বিবরণ দিয়েছেন লিটল। বিস্মিত মঞ্জেলুজো জানিয়েছেন, হত্যার এমন নিখুঁত বর্ণনা শুনলে আঁতকে উঠতে হয়। প্রত্যেক শিকারের নাম ও মুখচ্ছবি মনে রেখেছে দুর্র্ধষ এই খুনি।
মৃতদেহের শরীরে পাওয়া রক্ত ও বীর্যের নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করার পরে স্যামুয়েলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। শেষ পর্যন্ত গৃহহীনদের একটি আশ্রয়স্থল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অতীতে অপহরণ, ছিনতাই-সহ নানা ধরনের অপরাধের দায়ে কয়েক বছর জেলে কাটিয়েছিলেন তিনি।
মার্কিন এই সিরিয়াল কিলারের মনে তার কৃতকর্মের জন্য বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। স্যামুয়েল লিটলের যুক্তি, ঈশ্বর আমাকে এভাবেই গড়েছেন। তাই তার করুণাভিক্ষা করার প্রয়োজন নেই। তিনি আমার সব কাজ সম্পর্কেই জানেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন