পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক হোয়াইট হাউস এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মধ্যে ক‚টনীতির গতিপথ ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করে। তুরস্কের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমন্বিত মনোভাবের পিছনে একটি পরোক্ষ সূত্র কাজ করছে। আঙ্কারার সাথে ওয়াশিংটনের সংযোগ স্থাপনে মূল ভ‚মিকা পালন করছেন তিন জামাই। প্রথমজন হলেন, তুরস্কের অর্থমন্ত্রী বেরাট আলবায়রাক, তিনি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের জামাতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার দেশের সম্পর্ক তদারকি করেন। দ্বিতীয়জন হলেন একজন তুর্কি বিজনের টাইকুনের জামাই মেহমেত আলী ইয়ালসিনডাগ, যিনি ট্রাম্প সংস্থার ব্যবসায়ের অংশীদার হয়েছিলেন। এখন তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে তুরস্কের পক্ষে আইনজীবী। এবং তৃতীয়জন হচ্ছেন জ্যারেড কুশনার, যিনি ট্রাম্পের জামাতা এবং পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা। এমন গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বে যার তেমন কোন অভিজ্ঞতাই নেই।
স্বতন্ত্রভাবে এই তিন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার তুর্কী প্রতিপক্ষ এরদোগানের মধ্যে যোগাযোগের একটি অনানুষ্ঠানিক ও পরবর্তী প্রজন্মের চ্যানেল তৈরি করেছেন। উত্তর সিরিয়ায় সামরিক অভিযান শেষ করার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরে গতকাল বুধবার এরদোগান যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাত্রা করেছেন। এরদোগানের পক্ষ বেশ কিছু সিদ্ধান্তের জন্য কংগ্রেসের সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। এই তিন জামাইয়ের ঐক্য দেখিয়ে দিয়েছে যে, দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক এবং প্রায় অদৃশ্য এই সংযোগ বিশ্বের অন্যতম অস্থির অংশে কিভাবে মার্কিন নীতি গঠনে সহায়তা করেছে।
তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোগান চলতি বছর একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, তার জামাতা এবং অর্থমন্ত্রী বেরাট আলবায়রাক এবং ট্রাম্পের জামাতা কুশনার শিগগিরই ওয়াশিংটন এবং আঙ্কারার মধ্যে দ্বিধা-দ্ব›দ্ব মিটিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে ফেলবেন। তিনি জানান, এ ধরণের পরিস্থিতিতে যোগাযোগের এই সেতুটি ভাল কাজ করে।
আলবায়রাকও কুশনারের সাথে তার কাজের বিষয়টি ‘দরজার পেছনের ক‚টনীতি’ বলে অভিহিত করেছেন।
ট্রাম্পের তুরস্ক নীতি কংগ্রেসে তার রিপাবলিকান সহকর্মীদের বেশ কয়েকবার বিভ্রান্ত করেছে। ট্রাম্প তার উপদেষ্টাদেরকেও দুইবার হতবাক করেছেন। সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা সরানোর জন্য এরদোগানের সাথে ফোনালাপে সম্মতি দিয়ে এবং অক্টোবরের প্রথম দিকে মার্কিন সমর্থিত মিলিশিয়ার উপরে আক্রমণ করতে তিনি তুরস্কের সামরিক বাহিনীর জন্য রাস্তা পরিষ্কার করে দেয়ার মাধ্যমে। একই সঙ্গে, ট্রাম্প রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘এস-৪০০’ স্থাপনের জন্য উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা ‘ন্যাটো’র সদস্য তুরস্কের বিরুদ্ধে মার্কিন নীতির বাইরে যেয়ে বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞাও পিছিয়ে দিয়েছেন। এবং সমালোচকরা বলছেন যে, ইরানের বিরুদ্ধে দেয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খেলাপ করার দায়ে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি ব্যাঙ্কের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে ট্রাম্প প্রশাসন তার বিরোধীতা করে এবং ‘আক্রমণাত্মকভাবে শাস্তি’ বলে সেই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে।
তুর্কি কর্মকর্তাদের এবং সর্বজনীন রেকর্ড থেকে জানা যায়, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, ব্যাংকিং নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যান্য বিষয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগান তার নিজের জামাতা এবং ট্রাম্পের তুর্কি ব্যবসায়িক অংশীদারের জামাতা মেহমেত আলী ইয়ালসিনডাগ, দুজনকেই তার প্রশাসনের দূত হিসাবে নিয়োগ করেছেন, যারা বেশিরভাগ সময় ট্রাম্পের জামাতা কুশনারের মাধ্যমেই যোগাযোগ রক্ষা করেন। উদাহরণস্বরূপ, গত এপ্রিল মাসে এরদোগানের জামাতা ও তুর্কী অর্থমন্ত্রী আলবায়রাক ওয়াশিংটনে ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে ইয়ালসিন্ড্যাগের আয়োজিত একটি সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময়ে ট্রাম্পের জামাতা কুশনার তাকে ওভাল অফিসে একটি তৎক্ষণীক বৈঠকে ডেকে পাঠান, যেখানে আলবায়রাক রাশিয়ার অস্ত্র কেনার জন্য তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাগুলি আটকে রাখতে ট্রাম্পকে সফলভাবে ম্যানেজ করতে সক্ষম হন। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন