বলিভিয়ার কোকো চাষের প্রাণকেন্দ্র ভিলা টুনারি। আন্দিয়ানের পাদদেশের নদী বেষ্টিত উপত্যকায় অবস্থিত এই গ্রীষ্মমন্ডলীয় শহরটি ছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের রাজনৈতিক দুর্গ। ইদানিং সে অঞ্চলে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই পথে প্রথম ধাপে টায়ার এবং কাঠের ক্রেট দিয়ে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে, এরপরে, রাস্তায় গাছের গুড়ি ও কাঁটাতার বিছানো এবং শেষ ধাপে পাথল ও মাটি দিয়ে বিশাল বিশাল ঢিবি তৈরি করে রেখেছে মোরালেসের সমর্থকরা। পথে প্রায় প্রতি ১০০টি ব্যারিকেড পর পর রয়েছে সতর্ক প্রহরী। কোথাও কোথাও তাদের সংখ্যা কয়েকশ’। হাতে লাঠি, পেরেক লাগানো গদা নিয়ে দেয়া হচ্ছে টহল। জরুরি চিকিৎসার অনুমতি ছাড়া কাউকেই ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
অবশেষে, আপাতদৃষ্টিতে অন্তহীন ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে প্রায় ১০০ মাইল পথ অতিক্রম করার পরে, দেখা যায় ভিলা টুনারি। এখান থেকেই বলিভিয়ার প্রথম আদিবাসী প্রেসিডেন্ট মোরালেস তার রাজনৈতিক জীবন শুরু এবং শেষ করেছিলেন। সেখানে এখনও তাকে প্রায় অতিমানবীয় মনে করে শ্রদ্ধা করা হয়। বর্তমানে সেটি এখন বলিভিয়ার নতুন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কেন্দ্র।
মূল সড়কের সাথে নদীবেষ্টিত শহরটির সংযোগকারী কৌশলগত সেতুতে পরিবার নিয়ে আস্তানা গেড়েছে হাজার হাজার কোকো চাষী। আছে বাচ্চারাও। মূল মহাসড়কে বাধা সৃষ্টি করে তারা জাতীয় অর্থনীতি পঙ্গু করে দিয়েছে। পণ্য পরিবহণ না হওয়ায় বলিভিয়ার বড় বড় শহরগুলিতে খাদ্য ও জ্বালানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অবরোধে যোগ দেয়া একজন কোকো কৃষক আন্তোনিটা লেদেজি বলেন, ‘ইভো মোরালেস আমাদের কাছে একজন পিতার মতো, যদি সে না ফিরে আসে তবে শান্তি হবে না।’ ৩০ মাইল পথ অতিক্রম করে দুই সপ্তাহ আগে ভিলা টুনারিতে এসেছেন তিনি।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে বলিভিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হতে শুরু করে। একটি বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেখানে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়। এর সাথে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সমর্থন হারানোয় পদত্যাগ করেন ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকা মোরালেস। সেখানে নতুন নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, যেখানে মোরালেসের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
তবে ভিলা টুনারির চাষীরা তাদের নির্বাসিত নেতার প্রত্যাবর্তনের জন্য লড়াই করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাদের এলাকায় অবকাঠামো, শিক্ষা এবং চিকিৎসার ব্যাপক উন্নয়ন করায় ৫০ হাজার স্থানীয় কোকো চাষি পরিবার মোরালেসের প্রতি কৃতজ্ঞ। গ্রেগরিও চোক নামের একজন কোকো চাষি বলেন, ‘তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট ছিলেন যাকে আমরা আমাদের সাথে মাঠে নামতে দেখেছি।’ বিক্ষোভকারী চাষিদের নেতা ও স্থানীয় শ্রম আন্দোলনে ইভোর সহকারী অ্যান্ড্রোনিকো রদ্রিগেজ বলেন, ‘আমরা এই অবৈধ নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দিই না, আমাদের দাবি ইভোকে তার মেয়াদ শেষ করতে দিতে হবে।’
গত ১০ নভেম্বর মোরালেস নিকটস্থ কোকা কনফেডারেশনের সদর দফতর থেকে দেশের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেদিন থেকেই এই পর্যটন কেন্দ্র ধীরে ধীরে যুদ্ধ শিবিরে পরিণত হতে শুরু করে। চাষিরা অন্তর্র্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট জিনাইন আয়েজের বিচার এবং পদত্যাগের দাবিতে প্ল্যাকার্ড দিয়ে ও তাদের অঞ্চলে ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন