শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

শ্রমিকের সমান বেতন রেখে বাকিটা দান করবেন সাংসদ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৮ পিএম
ব্রিটিশ সংসদের সর্বকনিষ্ঠ ২৩ বছর বয়সী নাদিয়া হুইটমোর তার বেতনের একটি বড় অংশ স্থানীয় সম্প্রদায়কে দান করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি নির্বাচনের আগে মানুষের কাছে অনেকটা অপরিচিতই ছিলেন। তবে ২৩ বছর বয়সি এই সাংসদ বেতনের অর্ধেক দান করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরই সাধারণ মানুষ তাকে নিয়ে চর্চা শুরু করেছেন। খবর বিবিসির।
জানা গেছে, ইংলিশ মিডল্যান্ডসের নটিংহ্যাম ইস্ট আসনে জয়ী হওয়ার আগে তিনি একটি অস্থায়ী চাকরি খুঁজছিলেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে কর প্রদানের পর তার বাৎসরিক বেতনের অর্ধকেরও কম পরিমাণ অর্থ তিনি গ্রহণ করবেন এবং বাকি অর্থ দান করবেন। বছরে ৮০ হাজার পাউন্ড বেতন পাওয়া এই সংসদ ৪৫ হাজার পাউন্ডই দান করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নাদিয়া হুইটমোর বলেন, “একজন সাধারণ শ্রমিক গড়ে যেই বেতন পায়, আমি ততটুকুই নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাকি অর্থ আমি আমার এলাকার উন্নয়নে ব্যয় করবো।” “ঐ অর্থের মধ্যে দান, তহবিল গঠন, তৃণমূল পর্যায়ের প্রকল্প তৈরির মত কাজগুলোকে অর্থায়ন করবো”, বলেন নাদিয়া হুইটমোর।
হুইটমোর বলেন, দমকল কর্মী, শিক্ষক ও সেবিকাদের যতক্ষণ না পর্যন্ত একদফা বেতন বৃদ্ধি হচ্ছে, তিনিও বর্ধিত বেতন গ্রহণ করবেন না। হুইটমোর মন্তব্য করেছেন, তার এই সিদ্ধান্ত শুধুই দান করা বা মানুষের সেবা করার উদ্দেশ্য থেকে নয়। অর্থনৈতিক মন্দার পর থেকে পাবলিক সেক্টরের যেসব কর্মীরা চাকরি থেকে ছাটাই হয়েছেন তাদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
“সাংসদদের এত বেতন প্রাপ্য না- এই মানসিকতা থেকে আমার বেতনের অংশ দান করছি না আমি। আমি বিশ্বাস করি আমাদের শিক্ষক, সেবিকা ও দমকল কর্মীদেরও আরো বেতন পাওয়া উচিত।” “যেদিন তাদের প্রাপ্য বেতন বৃদ্ধি হবে, সেদিন আমিও আমার পুরো বেতন নেবো। আমি আশা করি আমার এই সিদ্ধান্ত আয়ের বৈষম্যের বিতর্কটিকে উস্কে দেবে।”
নাদিয়া হুইটমোর একসময় বিদ্বেষের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের সহায়তা প্রদানের কাজ করতেন। আইন বিষয়ে তার একটি ডিগ্রি রয়েছে এবং নটিংহাম ইস্ট আসনের জন্য এবারের নির্বাচনে লেবার পার্টির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন তিনি। গত কিছুদিনের ঘটনার আকস্মিকতা তাকে বিস্মিত করেছে।
তার কথায়, “কয়েকমাস আগেও যখন বড়দিনের জন্য ন্যুনতম বেতনের অস্থায়ী কাজ খুঁজছিলাম, তখন চিন্তাও করতে পারিনি যে ঐ কাজ আমার প্রয়োজন হবে না, কারণ আমি সাংসদ হয়ে যাবো।"
একজন অভিভাবক পরিচালিত পরিবারে বড় হয়েছেন নাদিয়া। কৈশোরেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন রাজনীতিতে যোগ দেয়ার। সেসময় অর্থনৈতিক মন্দার জের ধরে সরকার বেশকিছু খাতে অর্থ বরাদ্দ দেয়া কমিয়ে দেয়- যার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ব্যয় বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
তিনি জানান, ‘আমি নিজের চোখে দেখেছি আমার প্রতিবেশী ও বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই তাদের প্রতিদিনকার খাবারও ঠিকমতো জোগাড় করতে পারছে না। নিউইয়র্ক থেকে এই নটিংহাম পর্যন্ত পুরো পশ্চিমা বিশ্বেই প্রগতিশীল কিছু রাজনীতিবিদ আলোচনার কেন্দ্রে আসছেন। আমাদের মত রাজনীতিবিদরা কর্মজীবী শ্রেণী থেকে এসেছে। আমরা জানি অত্যাচারিত হতে এবং বিদ্বেষের শিকার হতে কেমন লাগে।’
নির্বাচনে তার জয় নিশ্চিত হওয়ার পর অনেক ভোটার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে তার বেতনের বড় অংশ দান করে দেয়ার সিদ্ধান্তকে সবাই সহজভাবে নিতে পারেনি।
লেবার পার্টির সাবেক সাংসদ মেলানি অন টুইট করে নাদিয়া হুইটমোরকে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘লোক দেখানো সৌজন্যের রীতি এখনো বিদ্যমান। গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্বের জন্য ঠিকভাবে বেতন পেলেও যেন কর্মজীবী শ্রেণীর সহ্য হয় না।’
কিন্তু বিবিসির অনুষ্ঠানে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন নাদিয়া বলেন, ‘সাংসদদের কাজ ছোট করে দেখানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু এই একই অঙ্কের অর্থে একজন দমকল কর্মী, সেবিকা বা শিক্ষক স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন চালাতে পারেন। তাহলে সাংসদ কেন পারবেন না? আমি এখন পর্যন্ত মানুষের কাছে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।’

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন