সংসদীয় শ্রমিক দলের বৈঠকে আস্থা ভোটের বিষয়ে আলোচনা আজ
ইনকিলাব ডেস্ক : ইইউতে যুক্তরাজ্যের থাকা-না থাকার প্রশ্নে ‘লিভ’ পক্ষ জয়ী হওয়ার দিন থেকেই গুঞ্জন উঠেছিল দলের অভ্যন্তরে অনাস্থার সম্মুখীন হতে পারেন শীর্ষ নেতা জেরেমি করবিন। এবার দলের ভেতরে তার বিরোধীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। লেবার সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, করবিন যদি আস্থা ভোট উপেক্ষা করেন কিংবা ভোটে হেরে গিয়েও যদি পদত্যাগ না করেন তাহলে বেশ কয়েকজন ছায়ামন্ত্রী পদত্যাগ করতে পারেন। মন্ত্রীদেরকে পদত্যাগে প্ররোচিত করার অভিযোগে মন্ত্রিসভা থেকে ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি বেনকে বরখাস্ত করেছেন লেবার নেতা জেরেমি করবিন। হিলারির বিরুদ্ধে অভিযোগ, করবিন আস্থা ভোট এড়িয়ে যেতে চাইলে মন্ত্রীরা যেন পদত্যাগ করেন সেব্যাপারে উসকানি দিচ্ছিলেন তিনি। লেবার সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম এসব কথা জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যে ছায়া মন্ত্রিসভা মূলত সরকারের মন্ত্রিসভার বিপরীতে গঠিত হয়। এই ছায়া মন্ত্রিসভার নেতৃত্বে থাকেন বিরোধী দলের নেতা। যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রত্যেকের বিরোধী হিসেবে কাজ করেন ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্যরা। সরকারের নীতিমালা ও কর্মকা-ের সমালোচনার দায়িত্ব পালন করে বিকল্প এ মন্ত্রিসভা। বিকল্প প্রস্তাব ও সুপারিশও দিয়ে থাকে তারা।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের আলাদা না হওয়ার পক্ষে অর্থাৎ ‘রিমেইন’ শিবিরের হয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন লেবার নেতা জেরেমি করবিন। তবে ব্রিটিশ জনগণের রায় এর বিপক্ষে যাওয়ার পর দলীয় নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তিনি। লেবার দলের দুই জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ এরইমধ্যে করবিনের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন। পার্লামেন্টের লেবার দলীয় সংসদ সদস্য ডেম মার্গারেট হজ ও অ্যান কফি গত শুক্রবার পার্লামেন্টারি লেবার পার্টির (পিএলপি) চেয়ারম্যান জন ক্রায়ারের কাছে একটি প্রস্তাব পেশ করেন। আজ সোমবার পিএলপির বৈঠকে জেরেমি করবিনের বিরুদ্ধে আস্থা ভোটের ব্যাপারে আলোচনা হবে। ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে পরদিন মঙ্গলবার গোপন ব্যালটে আস্থা ভোট হবে কি না। লেবার দলীয় সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, করবিন যদি আস্থা ভোটে হেরে গিয়েও ফলাফলকে গুরুত্ব না দেন তবে বেশ কয়েকজন ছায়ামন্ত্রী পদত্যাগ করতে পারেন। এই প্রেক্ষাপটে হিলারি বেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি ছায়া মন্ত্রিসভার মন্ত্রীদেরকে পদত্যাগ করার জন্য প্ররোচিত করছেন। লেবার দলের এক মুখপাত্র জানান, হিলারি বেনের প্রতি জেরেমি করবিন আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। এদিকে বেনকে বরখাস্ত করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন লেবার এমপিরা। ছায়া গৃহায়ন মন্ত্রী রবার্টা ব্ল্যাকম্যান-উডস বলেন, এটি খুবই দুঃখজনক। আমি বুঝতে পারছি না জেরেমি করবিন কী করে ভাবলেন যে এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে পার্লামেন্টারি লেবার পার্টিতে তার অবস্থান পাল্টাবে। ইলফোর্ড নর্থের লেবার এমপি ওয়েস স্ট্রিটিং বলেন, প্রচুরসংখ্যক ভালো মানুষ ছায়া মন্ত্রিসভায় কাজ করতে চান। কিন্তু এখন আর ভালো মানুষদের সেখানে থাকার কারণ নেই। ব্রেক্সিট ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য দলীয়ভাবে জেরেমি করবিনকে দায়ী করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, লেবার পার্টি নিজ দলের সমর্থকদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে। দলের নেতা হিসেবে করবিনের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। তবে চ্যানেল ফোরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে করবিন জানান, তিনি নেতৃত্ব ছাড়ছেন না। বরং নিজেকে ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন। করবিনের দাবি, কনজারভেটিভ দলের পক্ষ থেকে দলীয় সম্মেলনে নতুন প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী প্রস্তাব করার পর আগাম সাধারণ নির্বাচন দিতে হবে তাদের। তিনি মনে করেন, ব্রেক্সিট প্রশ্নে জনগণের এই অবস্থান লেবার রাজনীতির জন্য ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে এসেছে। আবাসনের প্রশ্ন, কর্মসংস্থানগত সুরক্ষার প্রশ্ন, ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রশ্নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিকল্প হাজির করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। করবিন মনে করেন, দলে যারা তার প্রতি অনাস্থা এনেছেন, তাদের সেই কাজ বাদ দিয়ে লেবার রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা পালন করা উচিত। করবিন মনে করিয়ে দেন, কেবল ক’জন এমপি নয়, দলের তৃণমূল কর্মীদের নিরঙ্কুশ সমর্থন নিয়ে লেবারদের নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, লেবার নেতা মার্গারেট হজ এবং অ্যান কফি পার্লামেন্টারি লেবার পার্টির চেয়ারপার্সন বরাবর আবেদন জানিয়েছেন যেন ব্রেক্সিট ইস্যুতে তাদের নেতার অবস্থান জরুরিভাবে বিবেচনায় নেয়া হয়। কোফি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের গণভোটের ফলাফল এ দেশকে এক ধরনের বিশৃঙ্খলায় ফেলেছে। নেতাদেরকে এর দায় নিতে হবে। তাকেও (করবিন) এ দায়ের ভাগীদার হতে হবে। তোর পদত্যাগ করা উচিত। সমালোচকদের দাবি, গণভোটে করবিনের ভূমিকার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় তিনি নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। লেবার নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে ভোটারদের মন জয় করতে লেবারদের ব্যর্থতার কারণেই ব্রেক্সিট সম্ভব হয়েছে। শেফিল্ডম হার্টলেপুল, স্টকটন-অন-টিস এবং ডনকাস্টারের মতো লেবার নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ধারণার চেয়ে বেশি ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট পড়েছে। কয়েক প্রজন্ম ধরে লেবার এমপি দেখে আসছেন সুন্দারল্যান্ডের বাসিন্দারা। অথচ এখানেও ‘লিভ’ পক্ষ ২২ পয়েন্ট নিয়ে জয় পেয়েছে যা জরিপের দেয়া আভাসের চেয়ে তিন গুণ। বিবিসি, গার্ডিয়ান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন