একটি শিশুর সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা অর্থাৎ ওর পর্যাপ্ত পুষ্টি, বৃদ্ধি, বুদ্ধি ও বিকাশের জন্য তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো-১. পর্যাপ্ত খাদ্য, ২. মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুস্থ পরিবেশ, ৩. মা ও শিশুর পরিচর্যা বা লালন-পালন। পর্যাপ্ত খাদ্য বলতে পরিবারের সারা বছরের খাদ্যের নিশ্চয়তা বোঝানো হয়। সঠিক রোগ নির্ণয় ও যথোপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান স্বাস্থ্যসেবার অঙ্গ। বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, শব্দদূষণ, অনিরাপদ পারিবারিক পরিবেশ ইত্যাদি সবই সুস্থ পরিবেশের অন্তরায়। উন্নত শিশুস্বাস্থ্যের জন্য মায়ের স্বাস্থ্যের পরিচর্যা জরুরি। এটা অনেকটা গাছ ও ফলের সম্পর্কের মতো। সুস্থ মা সুস্থ শিশুর জন্ম দেবেন এবং মা রোগব্যাধিমুক্ত থাকলে ভালোভাবে শিশুর যতœ নিতে পারবেন। এতে করে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা পাবে। তাই শিশুর ত্বকের যত্ন ব্যাপারে মায়ের ভূমিকাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। মায়েরা যদি কিছু কিছু বিষয়ে সচেতন হন, তবে অনেক চর্মরোগই প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর ন্ম্নিলিখিত কয়েকটি বিষয় শিশুর বিভিন্ন চর্মরোগ প্রতিরোধে নিঃসন্দেহে সহায়ক।
* একটি শিশুর পরিধেয় কাপড়-চোপড় অবশ্যই খসখসে, অমসৃণ হওয়া উচিত নয়; হতে হবে নরম ও সমৃণ। কাপড়টি সুতির হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কারণ ত্বকের জন্য সুতির কাপড়ই সবচেয়ে নিরাপদ। কাপড়টি বেশি আঁটসাঁট হওয়া উচিত নয়। কারণ আলো-বাতাস প্রবেশ করতে না পারলে ঘাম আটকে থাকে এবং বিভিন্ন চর্মরোগ সৃষ্টি হয়। তাই পোশাক-পরিচ্ছদ যতটা সম্ভব ঢিলেঢালা হওয়াই ভালো। আর পোষাক-পরিচ্ছদ সব সময় শীত-গ্রীষ্মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
* শিশুকে প্রতিদিনই গোসল করানো ভালো। তবে সাবান ও শ্যাম্পু প্রতিদিন ব্যবহার না করলেও চলে। পানি যেন অবশ্যই পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো-গোসলের শেষে নরম শুকনো সুতি কাপড় দিয়ে ভালোভাবে পানি মুছে ফেলতে হবে; যাতে কোনো স্থানে, বিশেষ করে শরীরের ভাঁজগুলোতে পানি লেগে না থাকে। কারণ এ থেকে ছত্রাকজাতীয় জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
* গরমের দিনে যন্ত্রণাদায়ক ঘামাচি এবং শীতের দিনে শুষ্কতার কারণে শিশুর ত্বক ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। থাই গরমের দিনে বেবি ট্যালকম পাউডার এবং শীতের দিনে তেল বা লোশনজাতীয় জিনিস নিয়মিত ব্যবহার করা উচিৎ।
* শিশু প্র¯্রাব-পায়খানা করার পর যত শিগগিরই সম্ভব ভেজা ন্যাপকিন বদলে ফেলা উচিত। কারণ দীর্ঘক্ষণ থাকলে ন্যাপকিন র্যাস বা ন্যাপকিন একজিমা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
* শিশুর কাপড়-চোপড় সাবান দিয়ে ধোয়ার পর পরিষ্কার পানিতে বারবার চুবিয়ে সম্পূর্ণ সাবানমুক্ত করে শুকানো উচিত; কারণ সাবানের ক্ষারযুক্ত শুকনো কড়কড়ে কাপড় শিশুর নরম ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
* শিশুরা হাত-পা বেশি নাড়াচাড়া করে এবং হাত মুখে দেয়, তাই নখ কেটে ছোট রাখতে হবে; যাতে নিজের মুখে নিজে আঘাত না পায় এবং রোগজীবাণু নখের মাধ্যমে মুখে না যায়।
* শিশুদের ত্বকে অ্যান্টিসেপটিক ও কসমেটিক-জাতীয় কোনো মলম যখন-তখন না লাগানোই ভালো। কারণ এতে শিশুর নরম ত্বকে অনেক সময় এগুলো সহ্য হয় না এবং সমস্যা সৃষ্টি হয়।
* ত্বকে আঘাত পেতে পারে এ রকম খেলনা বা ব্যবহার্য জিনিসপত্র সব সময় শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা উচিত।
* কাদামাটি, ধুলাবালু ও কড়া রোদ থেকে শিশুদের দূরে রাখুন।
* মশা, মাছি, পোকামাকড়, পিঁপড়া ইত্যাদি যেন শিশুকে কামড়াতে না পারে, সেদিকে সর্বদা লক্ষ রাখুবন। কারণ এ থেকে হঠাৎ মারাত্মক অ্যালার্জিক রিয়েকশন হতে পারে। * বাড়িতে পোষা কুকুর-বিড়াল না রাখাই ভালো। কারণ এদের শরীর থেকে বেশ কিছু চর্মরোগের জীবাণু সংক্রমণ হয়ে থাকে; যা শিশুকে সহজেই আক্রান্ত করতে পারে। শেষ কথা হলো, শিশুর ত্বকে কোনো সমস্যা দেখা দিলে কখনো অবহেলা করবেন না; কারণ শিশুদের খুব ছোট রোগও অনেক সময় অল্প সময়েই মারাত্মক আকার ধারণ করে। যেমন সাধারণ খুজলি-পাঁচড়া থেকেও কিডনি নষ্ট হয়ে শিশুর মৃত্যু হতে পারে।
মনে রাখবেন, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সুস্থ ত্বকই সুন্দর ত্বক। শিশুটি কালো কি ফরসা, এটি কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। কাজেই আপনার শিশুর সুস্থ-সুন্দর দেহ ও ত্বকের জন্য শিশুকে সঠিকভাবে পরিচর্যা করুন, শিশুকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। শিশুরা হচ্ছে আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এদের পুষ্টি ও বিকাশের ওপর একটি পরিবার, একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। এদের লালন-পালনে তাই আমাদের যথেষ্ট মনোযোগী ও কৌশলী হতে হবে, পাশাপাশি পর্যাপ্ত সময় বিনিয়োগ করতে হবে।
চিকিৎসক-কলামিস্ট
মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০
belalahmedsweet@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন