শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

লিবিয়ায় ‘শক্তির ভারসাম্য’ আনতে পারে তুর্কি সমর্থন

নিউজ রিপাবলিক : | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

ত্রিপোলির জাতীয় জোট সরকারের (জিএনএ) প্রধানমন্ত্রী ফয়েজ আল-সেরাজের অনুরোধে আঙ্কারা সামরিক পরামর্শদাতা এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যারা অভিজ্ঞ কমান্ডার খলিফা হাফতারের বাহিনী ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে কাজ করবে। তুরস্কের এই সমর্থন লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে শক্তিশালী করলেও তাদের পক্ষে বিদেশী মদতপুষ্ট পূর্বাঞ্চল ভিত্তিক বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে দমন করা সহজ হবে না।

তুরস্ক ইতিমধ্যে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির প্রতিরক্ষার জন্য ড্রোন এবং সাঁজোয়া যানবাহন সরবরাহ করেছে, যার ফলে গত নয় মাসের মধ্যে হাফতার বাহিনী সেখানে আর কোন হামলা চালাতে পারেনি।
সরকারি কর্মকর্তা, ক‚টনীতিক এবং বিশ্লেষকদের বক্তব্য অনুযায়ি, গত সেপ্টেম্বর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমান বাহিনীর সমর্থন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত সহায়তা পাওয়ায় হাফতারের নেতৃত্বাধীন লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এলএনএ) সামরিক শক্তিতে তুরস্ক সমর্থিত জাতীয় জোট সরকারকে প্রায় ছাড়িয়ে গেছে।

জিএনএ’র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফাতি বাশাঘা রয়টার্সকে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘তুরস্কের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা গ্রহণে জিএনএ সরকারের নেয়া সিদ্ধান্তে, হাফতার ও তার সমর্থকদের সাথে যুদ্ধের সম্ভাবনা বিপজ্জনক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে তারা যখন রাশিয়ান ভাড়াটে যোদ্ধাদের এনেছে।’

গত সোমবার, এলএনএ লিবিয়ার ভ‚মধ্যসাগরীয় উপক‚লরেখার কেন্দ্রে অবস্থিত কৌশলগত শহর সির্তে পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে ত্রিপোলির চারপাশে লড়াই অনেক বেড়ে গেছে। ওই বাহিনীর নিকটবর্তী দু’টি সূত্র জানিয়েছে, ড্রোন ও লেজার-গাইডেড শেল ধ্বংস করতে এলএনএ ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা করছে, যা তাদেরকে রাশিয়ান ঠিকাদাররা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে জিএনএ বাহিনীর উপর চাপ আরও বেড়ে গেছে।

জিএনএর ড্রোনগুলো ত্রিপোলি এবং সির্তের উত্তর-পশ্চিমের শহর মিসরাতার বিমানবন্দর এবং বিমান ঘাঁটিতেও আক্রমণের শিকার হচ্ছে।

তুরস্কের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তারা কোন সেনা সেখানে পাঠাবেন না। তবে তুরস্ক সিরিয়ার বিদ্রোহী সেনাদের সেখানে প্রেরণের বিষয়ে বিবেচনা করছে। তুরস্ক-সমর্থিত ফ্রি সিরিয়ান আর্মির একটি সূত্র জানিয়েছে, কিছু যোদ্ধা ইতিমধ্যে রক্ষী হিসাবে নাম লিখিয়েছে। প্রতিরক্ষা পরামর্শক এবং লিবিয়ার বিশেষজ্ঞ আরনাড ডেলাল্যান্ড জানান, ‘এটি সর্বোপরি দুই বাহিনীর মধ্যে আবার ভারসাম্য নিয়ে আসবে। বিশেষত, এর ফলে জিএনএ বিমান বিধ্বংসী কোন ব্যবস্থা পেতে পারে, এটি জ্যামিং সিস্টেম হতে পারে, আবার স্থলভাগে সেনাবাহিনীর সাথে সমন্বয়ও করা হতে পারে।’

লিবিয়ায় বিপরীত অবস্থানে থাকলেও গতকাল আঙ্কারায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সাথে বৈঠক করেছেন রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিন। তারা লিবিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে জাতিসংঘের নেতৃত্বে মিশন পাঠানোর ইউরোপীয় প্রচেষ্টার বিপক্ষে অবস্থান করেছেন।

যদিও তুরস্ক ও রাশিয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বিরোধী অবস্থানেই ছিল, তবে সম্প্রতি তারা অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক জোরদার করেছে। তারা এখন উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় সহযোগিতা করেছে, যেখানে দুই দেশের সেনা যৌথভাবে টহল দিচ্ছে। এছাড়া, ওয়াশিংটনের বিরোধিতা সত্তে¡ও গত বছর রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনেছে আঙ্কারা।

আঙ্কারা ও মস্কো লিবিয়ায় তাদের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করতে চায়, যেখানে ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহের ফলে উভয়ের জন্য লাভজনক ২০১১ সালের চুক্তি ভেঙ্গে গিয়েছিল এবং বৃহত্তর পূর্ব ভ‚মধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল। দুই দেশই সরাসরি সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে চায়। গত বছরের নভেম্বরে জিএনএ’র সাথে সামরিক ও সামুদ্রিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরে আঙ্কারা অফশোর গ্যাস উত্তোলনের অধিকার নিয়ে রাশিয়ার সাথে একটি সমাধানে আসতে চায়।

এ বিষয়ে তুরস্কের সাবেক ক‚টনীতিক ও ইস্তাম্বুল ভিত্তিক অর্থনীতি ও বৈদেশিক নীতি বিশ্লেষণ কেন্দ্রের প্রধান সিনান উলজেন বলেন, ‘ত্রিপোলিকে যুদ্ধ জিততে সহায়তা করার জন্য লিবিয়ায় আঙ্কারা সহযোগিতা পাঠায়নি, যা বাস্তবসম্মতও নয়। বরং তাদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক আলোচনার জন্য একটি ভিত্তি তৈরি করা, যার ফলে তাদের সমুদ্রসীমার চুক্তি রক্ষা হয়।’ তুরস্কের এক প্রবীণ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘সংঘাত রোধে তুরস্ক রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে। এটি অব্যাহত থাকবে।’

দ্য হেগের ক্লিনজেনডেল ইনস্টিটিউট থিংক ট্যাঙ্কের গবেষণা সহযোগী জালেল হারচাউই বলেছেন, ‘পূর্ব লিবিয়ায় একটি নৌ ঘাঁটি তৈরির চেষ্টা করছে রাশিয়া, যা তাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য ছিল।’ তিনি বলেন, ‘এর ফলে পূর্ব লিবিয়ায় নিজেদের উপস্থিতি আরও বাড়ানোর একটি সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছে রাশিয়া।’ লিবিয়া নিয়ে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেও বিভেদ রয়েছে। এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে লিবিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতির কারণে যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে, তা পূরণ করছে আঙ্কারা ও মস্কো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন