মার্কিন নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল চার্লস রিচার্ড স্বীকার করেছেন যে, রাশিয়া এবং চীনের হাইপারসোনিক অস্ত্র মোকাবেলার সক্ষমতা আমেরিকার বিরাজমান বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নেই। কৌশলগত বাহিনীর বিষয়ে মার্কিন হাউজ সাবকমিটির উন্মুক্ত শুনানিতে এ কথা স্বীকার করেন অ্যাডমিরাল রিচার্ড।
রাশিয়া সম্প্রতি মহাকাশ দিয়ে লক্ষ্যবস্তুর দিকে ছুটে চলতে সক্ষম হাইপারসোনিক অস্ত্র মোতায়েন করেছে আর এ ধরণের অস্ত্র তৈরি করছে চীন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দায়িত্বশীল দফতরের (জিএও) প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, রাশিয়া এবং চীন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের চর্চা করে যাচ্ছে। এর কারণে তারা এসব অস্ত্রের গতি, উচ্চতা এবং দক্ষতা দিয়ে অনেক বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পরাস্ত করতে পারবে। সেইসঙ্গে এ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে প্রচলিত দীর্ঘ পরিসীমা এবং পারমাণবিক অস্ত্রের আঘাতের শক্তি উন্নত করা যেতে পারে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রুশ এবং চীনা এন্টি স্যাটেলাইট অস্ত্র ও গোপন এয়ারক্রাফট- যা দ্রæতগতিতে উড়তে, উন্নত অস্ত্র বহনে এবং অনেক দূরত্বে যেতে সক্ষম। যে কারণে আমেরিকার নিরাপত্তা এখন চ্যালেঞ্জে। এছাড়া কাটিং-ইডিজিই প্রযুক্তির এসব অস্ত্রের দ্রæ বিকাশ মার্কিন এয়ারক্রাফটের জন্য হুমকি। সেইসঙ্গে ঝুঁকির মধ্যে দেশটির বিভিন্ন ক্ষেত্রও।
চলতি বছরের অক্টোবরে ভালদাই ক্লাব সেশনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভাষণে বলেন, রাশিয়া তার প্রতিদ্ব›দ্বীকে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে অতিক্রম করেছে। এক্ষেত্রে রাশিয়া সুস্পষ্ট বাস্তবতায়।
তিনি জানিয়েছিলেন, হাইপারসনিক অস্ত্রের ব্যবহার যথাযথভাবে কেউই করতে পারে না। আমরা এ উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্রের যুগে যেতে দেড় থেকে দুই বছর পরীক্ষা করার পর এ থেকে কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যার সার্ভিস আমার ইতোমধ্যেই পাচ্ছি।
এর আগে মার্চে সর্বপ্রথম বিশ্বের সর্বাধুনিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কিনঝালের সফল পরীক্ষা চালায় রাশিয়া। তখন পুতিন বলেছিলেন, হাইপারসনিক ক্ষেপাণাস্ত্র প্রতিযোগিতায় রাশিয়া অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে ১৫ বছর এগিয়ে থাকবে। সেইসঙ্গে রাশিয়া এটি নিয়ে ১০টি অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। তার মধ্যে কিনঝালটি ‘তোপোলেভ টিইউ-২২২এম৩ বোম্বার’ বহন করে অত্যাধিক দূরগতির সঙ্গে। যা বিশ্বের ইতিহাসে সর্বাধিক শক্তি সম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র। এছাড়া এটির গতি শব্দের চেয়ে আট গুণ বেশি। ক্ষেপণাস্ত্রটি মুহূর্তেই গতি পাল্টিয়ে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে সক্ষম।
এদিকে, বিশ্বে দ্বিতীয় হিসেবে হাইপারসনিক যুগে প্রবেশ করে চীন। গত আগস্টের শুরুর দিকে দেশটির রাজধানী বেইজিং এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চীনা এয়ারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি করপোরেশনের সংযুক্ত প্রতিষ্ঠান চীনা একাডেমি অব এয়ারোস্পেস এয়ারোডায়নামিক্স (সিএএএ) স্টাররি স্কাই-২ নামে একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায়।
তখন সংশ্লিষ্টরা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, স্টাররি স্কাই-২ কেবল দ্রæতগতির নয়। শব্দের চেয়েও এর গতি পাঁচগুণ বেশি। এটি নীরবে-নিঃশব্দে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখন্ডে আঘাত হানতে সক্ষম। এর গতি প্রতি ঘণ্টায় চার হাজার ৫৬৩ মাইল বা সাত হাজার ৩৪৪ কিলোমিটার।
এদিক থেকে ওই দুই দেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে বা দুর্বল যুক্তরাষ্ট্র। যদিও গেলো অক্টোবরে অস্ত্রাগারে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র যোগ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল প্রধান পরাশক্তির এ দেশটি। শিগগিরই মহাকাশের এ অত্যাধুনিক প্রযুক্তিটির পরীক্ষা চালানো হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন মার্কিন ডেপুটি সেক্রেটারি অব ডিফেন্স প্যাথ্রিক শানাহান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন