ইনকিলাব ডেস্ক : নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতের পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন নামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল দক্ষিণ চীন সাগরের মালিকানা নিয়ে যে রায় দিয়েছে তাতে ওই অঞ্চল নিয়ে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এই রায়ের পরপরই ওই অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাইওয়ানও তার নৌসীমা রক্ষায় গত বুধবার দক্ষিণ চীন সাগরে একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। গত মঙ্গলবার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছে, দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিং যে অধিকার দাবি করে আসছে তার কোনো আইনি এবং কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। তাই দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত অঞ্চলে চীনের কোনো দাবি বৈধ নয়। প্রসঙ্গত, দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে ফিলিপাইন। গত মঙ্গলবার সেই মামলার রায়েই আদালত এমন আদেশ দেয়।
পক্ষান্তরে চীন হেগের এই রায় প্রত্যাখ্যান করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পার্মানেন্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশনকে বাইরের শক্তিগুলোর পুতুল বলে অভিহিত করেছে। দীর্ঘদিন ধরে তাইওয়ানও এই দ্বীপপুঞ্জে তাদের মালিকানা রয়েছে বলে দাবি করে আসছে। ফলে ওই অঞ্চল নিয়ে সেখানে প্রবল উত্তেজনা বিরাজ করছে। বার্তা সংস্থাগুলোর খবরে বলা হয়েছে, ওই রায়ের পর দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর নিজের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণœ রাখতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার করেছে বেইজিং। ট্রাইব্যুনালের রায় প্রত্যাখ্যান করে চীন বলেছে, ওই এলাকায় বিমান প্রতিরক্ষা জোন স্থাপনের অধিকার আছে তাদের। দেশটি বলেছে, নিরাপত্তা বিঘিœত হলে দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর একটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিউ শেনমিন বলেন, দক্ষিণ চীন সাগর এলাকায় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করার অধিকার রয়েছে চীনের। আমাদের নিরাপত্তা বিঘিœত হলে আমরা সেখানে এ রকম একটি ব্যবস্থাই গড়ে তুলবো। তবে তিনি বলেন, সেখানে চীন এ রকম কোনো ব্যবস্থা এখনই গড়ে তুলবে কিনা, তা নির্ভর করছে বেইজিং কতটা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে, তার ওপর। শেনমিন আশা প্রকাশ করে বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরের শান্তি রক্ষায় অন্যান্য দেশ চীনের সঙ্গে কাজ করবে এবং এই অঞ্চলকে একটি যুদ্ধের কারণ হিসেবে তৈরি করবে না। এদিকে, বুধবার চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র পিপলস ডেইলি প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশ করা এক মন্তব্য প্রতিবেদনে বলেছে, নিজ অঞ্চলের সার্বভৌমত্বের সুরক্ষায় এবং নৌসীমার অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষায় দরকারি সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে চীন। চীন সরকার প্রকাশিত এক শ্বেতপত্রে দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর ফিলিপাইনের সার্বভৌমত্বের দাবিকে ভিত্তিহীন এবং অশুভ বিশ্বাসের প্রতিফলন বলে বর্ণনা করেছে। এতে দক্ষিণ চীন সাগরের স্প্রার্টলি দ্বীপপুঞ্জের আশপাশে চীনের মাছধরা নৌকাগুলো ফিলিপাইনের হামলা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের দাবিকৃত অঞ্চলের মধ্যে একটি তেল-গ্যাসসমৃদ্ধ এলাকাসহ বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে ব্যস্ত বাণিজ্যপথও পড়েছে। এই বিরোধকে চীনের উঠতি ক্ষমতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার অর্থনৈতিক ও কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। দক্ষিণ চীন সাগরে পানিসীমা নিয়ে চীনের সঙ্গে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই এবং তাইওয়ানের বিরোধ রয়েছে। সাগরটিতে চীনের দাবিকৃত নৌসীমার মধ্যে এসব দেশের প্রত্যেকটির দাবিকৃত পানিসীমা রয়েছে। তবে এই সমস্যায় নিজেকে জড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র সমস্যাটিকে আরো জটিল করে তুলছে বলে বার বার অভিযোগ করে আসছে চীন। এদিকে, তাইওয়ান তার জলসীমা রক্ষায় বুধবার দক্ষিণ চীন সাগরে একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। এই জলসীমায় চীনের ঐতিহাসিক কোনো অধিকার নেইÑ আন্তর্জাতিক আদালত এমন রায় দেয়ার পর তারা সেখানে এই জাহাজ পাঠাল। দীর্ঘদিন ধরে তাইওয়ানও এই দ্বীপপুঞ্জে তাদের মালিকানা রয়েছে বলে দাবি করে আসছে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট তিসাই ইং ওয়েন ওই যুদ্ধজাহাজের ডেকে সেনাদের সামনে বলেন, জনগণ তাদের দেশের অধিকার রক্ষায় বদ্ধপরিকর। তাইওয়ানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কাওসিউং নগরী থেকে স্প্রার্টলি দ্বীপপুঞ্জের তাইওয়ান নিয়ন্ত্রিত তাইপিং দ্বীপের উদ্দেশে যুদ্ধজাহাজটি রওনা হয়েছে। তাইওয়ানও আন্তর্জাতিক আদালতের এই রায়কে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য আখ্যায়িত করে বলেছে, আদালত তাদের কার্যক্রমে অংশ নিতে তাইওয়ানকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আমন্ত্রণ না জানানোয় এই রায় মানার ক্ষেত্রে আইনগতভাবে তাইপের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এই সামুদ্রিক অঞ্চলে বেশ কিছু দ্বীপ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চীনের সঙ্গে ফিলিপাইনের এবং ভিয়েতনামের টানাপড়েন চলছে। দ্বীপগুলোর ওপর চীন ১৯৪৯ সাল থেকে নিজেদের অধিকারের কথা ঘোষণা করে আসছে। এমনিতেই এই দ্বীপগুলো প্রবাল দ্বীপ হলেও রণনৈতিক কারণে এগুলোর ওপর চীনের দাবি প্রবল। সেই সঙ্গে রয়েছে এখানকার সামুদ্রিক সম্পদের হাতছানি। সামুদ্রিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে মাছ, খনিজ এবং তেলভা-ার। আর এ নিয়েই চলছে লাগাতার উত্তেজনা। বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা, সিএনএন, এপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন