দীর্ঘ বিলম্বে হলেও অবশেষে প্রকাশিত ইরাক যুদ্ধ-সংক্রান্ত চিলকট রিপোর্ট বিশ্বময় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে উত্থাপিত হচ্ছে এই যুদ্ধের কার্যকারণ এবং উদ্দেশ নিয়ে নানা প্রশ্ন। ইতিহাসের জঘন্যতম অন্যায় ও আগ্রাসীমূলক এই যুদ্ধ ইরাকসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে যে অশান্তি ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দেয়, তার রেশ
বর্তমানে গোটা বিশ্বকে গ্রাস করেছে। আজকে যে আইএস সংকটকে দুনিয়াব্যাপী এক মহসংকট হিসাবে দেখা
হচ্ছে তাও ইঙ্গ-মার্কিন অপশক্তির সেই আগ্রাসী যুদ্ধেরই ফল। চিলকট রিপোর্ট প্রকাশিত হবার পর ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের বিরুদ্ধে জনরোষ ধুমায়িত হচ্ছে। লেবার পার্টি থেকে তার বহিষ্কার
দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযানও শুরু হয়েছে। এমনকি ওই অন্যায় ও আগ্রাসী যুদ্ধের মূল হোতা বুশ-ব্লেয়ারের
বিচারের দাবিও ক্রমশ সোচ্চার হয়ে উঠছে। ২৬ লাখ শব্দের ওই প্রতিবেদনে ইরাক যুদ্ধ-সংক্রান্ত তদন্ত
কমিশনের প্রধান জন চিলকট ব্রিটেনের ইরাক যুদ্ধে সম্পৃক্ত হওয়াকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে
বিতর্কিত সেনা সম্পৃক্ততা বলে মন্তব্য করেছেন। তদন্তে পাওয়া তথ্যের সারাংশ হিসেবে তিনি
বলেন, ইরাক যুদ্ধে সম্পৃক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তটি পুরোপুরি ভুল ছিল, যার ফল
বিশ্ববাসীকে আজো ভোগ করতে হচ্ছে।
(পূর্ব প্রকাশের পর)
ইনকিলাব ডেস্ক : ইরাক যুদ্ধের ১৩ বছর পর ওই যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের অপরিণামদর্শী ভূমিকা নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চিলকট। সম্প্রতি প্রকাশিত এই চিলকট প্রতিবেদনে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে দায়ী করা হয়েছে। এর ফলে ব্লেয়ারকে আদালতের মুখোমুখি দাঁড় করানোর জন্যে প্রস্তুতি শুরু করেছেন আইনজীবীরা। ইরাক যুদ্ধ নিয়ে ২০০৯ সালে চিলকট কমিশন গঠিত হয়। দীর্ঘ সাত বছর এই কমিশন ইরাক যুদ্ধের যাবতীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক পথ থাকা সত্ত্বেও ব্রিটিশ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তার সরকার সামরিক আগ্রাসনে গেছেন। যা সর্বশেষ পন্থা ছিল না। নিহত সৈন্যদের পরিবার এ রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি বেয়ারকে আইনের কাঠগড়ায় নিতে পারবে। বেয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে ইরাক যুদ্ধে জড়িয়েছেন তিনি। তাকে আদালতে নিতে আইনজীবীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ২০০৩ সালে নিহত হওয়া সায়মনের বাবা জন মিলার পুত্র সন্তানের বিচার দাবি করেন। তিনি ব্লেয়ারকে কাঠগড়ায় দেখতে চান। ২০০৫ সালে নিহত ৪২ বছর বয়সী গ্যারি নিকলসনের মা তার পুত্র হত্যার বিচার দাবি করেন। টনি ব্লেয়ার তার হাতে রক্ত ধরিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন নিকলসনের মা।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে হেগে আন্তর্জাতিক আদালতের সম্মুখীন হতে হবে। তবে সৈন্যদের বিরুদ্ধেও যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করার জন্য যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা যেতে পারে ব্লেয়ারের বিরুদ্ধে।
চিলকট প্রতিবেদনে টনি বেয়ারের সরকার কোনো বিচার বিশ্লেষণ না করে ইরাকে সৈন্য পাঠিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বলে অভিমত দিয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সাদ্দাম হোসেন সন্দেহাতীতভাবে একজন অত্যাচারী একনায়ক শাসক ছিলেন। তিনি অযথা নিজের প্রতিবেশী দেশের ওপর আক্রমণ করেছেন। নিজের দেশের শত শত মানুষকে তিনি হত্যা করেছেন। এই অপরাধের জন্য নিরাপত্তা কাউন্সিলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। অনেক শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। সামরিক পদক্ষেপই সর্বশেষ পথ ছিল না।
প্রতিবেদন বলা হয়েছে, এটি স্পষ্ট হয়েছে গোয়েন্দাদের ত্রুটিপূর্ণ মূল্যায়ন ও প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ইরাকে হামলা চালানো হয়েছিল। তারা কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়নি যা ওই সময় তাদের প্রয়োজন ছিল। সূত্র : বিবিসি, ডেইলি মেইল, মিরর, দি গার্ডিয়ান। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন