ইদলিবে যুদ্ধবিরতি ভাঙতে সিরিয়াকে প্ররোচিত করছেন আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স। এটি ছিল অঞ্চলটি থেকে তুরস্ককে সরানোর পরিকল্পনার অংশ। সূত্রের বরাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ কেবল তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে গত ৫ মার্চের যুদ্ধবিরতি চুক্তি আটকানোর চেষ্টা করেননি, বরং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ইদলিবে সামরিক আক্রমণ চালিয়ে পুনরায় চুক্তিটি ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ক্রেমলিনে তুর্কি ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকের আগের দিন, বিন জায়েদ আসাদের সাথে একটি চুক্তি আলোচনার জন্য তাদের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা আলী আল-শামসিকে দামেস্কে মোতায়েন করেছিলেন। পরিকল্পনার সাথে যুক্ত সূত্রগুলো থেকে জানা গিয়েছে যে, সিরিয়ার বিরোধী-অধিকৃত শেষ শক্তিশালী অবস্থান ইদলিবে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যুবরাজ আসাদকে ৩০০ কোটি ডলার দেয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। এর মধ্যে ১০০ কোটি ডলার মার্চ মাসেই দেয়ার কথা ছিল। এছাড়া ২৫ কোটি ডলার আগেই প্রদান করা হয়েছিল।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিরিয়ার মধ্যকার চুক্তি নিখুঁত গোপনীয়তার সাথে পরিচালিত হওয়ার সাথে সাথে আবুধাবি এই বৈঠকের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া নিয়েও উদ্বিগ্ন ছিল। গত বছরের অক্টোবরে ৭০ কোটি ডলার মূল্যের ইরানি সম্পদ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কারণে এবং সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযানের পক্ষে আমেরিকার সমর্থন নিয়ে দেশ দুইটির মধ্যে আগে থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
মিডল ইস্ট আইকে এক নামহীন উচ্চ-স্তরের সূত্র জানিয়েছিল যে, ‘ইদলিবে সংঘর্ষের সময় আল-শামসি বাশারের সাথে দেখা করেছিলেন এবং তাকে এরদোগানের সাথে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনও সমঝোতা না করার জন্য বলেছিলেন। পুতিনের সাথে এরদোগানের বৈঠকের ঠিক আগেই এটি ঘটেছিল। আসাদ জবাব দিয়েছিলেন যে, তার আর্থিক সহায়তা দরকার। ওই সূত্র অনুসারে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আল শামসিকে বলেছিলেন যে, ‘সঙ্কটের কারণে ইরান নগদ অর্থ প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে, এবং রাশিয়ানরাও কোন অর্থ সহায়তা দেয় না।’ সুতরাং তিনি সিরিয়ার পক্ষে সরাসরি সহায়তার জন্য ৫০০ কোটি ডলার চেয়েছিলেন। আমিরাত ৩০০ কোটি ডলার দিতে রাজি হয়।
সিরিয়া ও গালফের তীরে অবস্থি দেশটির মধ্যে এই চুক্তির পরে, আসাদ নতুনভাবে হামলার জন্য তার বাহিনীকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে তার মিত্র রাশিয়া পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল এবং গোপনীয় পরিকল্পনার কথা শুনেছিল, যার ফলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোয়েগুকে দামাস্কাসে আসাদকে বাধা দেয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন।
সূত্র জানায়, শোয়েগু যে বার্তা দিয়েছেন তা পরিষ্কার ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না যে আপনি এই আক্রমণ পুনরায় আরম্ভ করুন। রাশিয়া যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখতে চায়।’ সূত্রটি আরও জানায়, পুতিন খুব রেগে গিয়েছিলেন।
ততক্ষণে, সংযুক্ত আরব আমিরাত আসাদকে ২৫ কোটি ডলার প্রদান করেছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র তুর্কি কর্মকর্তা আবুধাবি-দামেস্ক প্রস্তাবের প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছিলেন, ‘আমি যা বলতে পারি তা হ'ল প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সত্য।’
মোহাম্মদ বিন জায়েদ এর উদ্দেশ্য সিরিয়া অঞ্চলে তুরস্কের প্রভাবের বিরুদ্ধে দ্বিপক্ষীয় হামলার অংশ ছিল বলে জানা গেছে। প্রথমত, তিনি তুরস্কের সেনাবাহিনীকে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী সামরিক সংঘর্ষে ব্যস্ত রাখার পরিকল্পনা করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, তিনি সিরিয়ায় তুরস্কের সেনাবাহিনীর অবস্থান এবং প্রয়োজনীয়তা এতদূর প্রসারিত করতে চেয়েছিলেন যে, এর ফলে তারা লিবিয়া থেকে সরে আসবে, যেখানে তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিত্র খলিফা হাফতারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ-সমর্থিত ন্যাশনাল অ্যাকর্ড সরকারকে (জিএনএ) সহায়তা করছে।
এই সবের মাঝামাঝি সময়ে বিন জায়েদ আমেরিকার কাছ থেকে এই পরিকল্পনাটি গোপন করার জন্য একটি কভার স্টোরি তৈরি করেছিলেন। সেটি ছিল, বর্তমান করোনভাইরাস সংকটে বিশেষত সিরিয়াকে সমর্থন করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। বিন জায়েদ টুইটারে লিখেছেন, ‘আমি বাশারকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমর্থন এবং সিরিয়ার জনগণকে সহায়তা করার ব্যাপারে আগ্রহের বিষয়ে জানিয়েছিলাম।’
যদিও সংযুক্ত আরব আমিরাত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আসাদের প্রতি সমর্থন সরিয়ে নিয়েছে কারণ তিনি বেশিরভাগ ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছেন। তবে ইদলিবে নতুন করে যুদ্ধের পরিকল্পনাটি এবং তুরস্ককে সেখানে আবদ্ধ করার পরিকল্পনার পেছনে আবু ধাবির ক্রাউন প্রিন্সের ভূমিকা পরিস্থিতি সম্পর্কে নতুন আলোকপাত করেছে। এর ফলে এটি আঞ্চলিক সম্পর্ক এবং দ্বন্দ্বের পুরো প্রসঙ্গও উঠে এসেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন