সিঙ্গাপুরে সফলভাবে করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছিল। এর ক’মাস পর অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে করোনভাইরাস সংক্রমণ বেড়েছে। সিঙ্গাপুরে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত ১৬,১৬৯ জনের মধ্যে ৮৮ শতাংশ অভিবাসী শ্রমিক আবাসন সংশ্লিষ্ট। এদের মধ্যে একদিনে শনাক্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১,৪০০ পর্যন্ত উঠেছিল।
অনুসন্ধান ও তথ্য বিশ্লেষণে জানা যাচ্ছে যে, সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার কারণ ঘনিষ্ঠতা। তথ্যের একটি বিশ্লেষণ দেখা গেছে কীভাবে ভাইরাস প্রবাসী শ্রমিক ডরমেটরিগুলোর মধ্যে দ্রæত ছড়িয়ে পড়েছে।
অনেক অভিবাসী শ্রমিক শহরের উপকণ্ঠে ঘন ডরমেটরিতে বাস করেন। এই আবাসগুলোতে প্রতি ঘরে ২০ জন লোক থাকতে পারে, যার ফলে সামাজিক দূরত্বের দিকনির্দেশগুলি অনুসরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। বিশ্বজুড়ে অভিবাসী শ্রমিকরা মহামারীতে আক্রান্তের সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন।
সরকার নির্মাণ খাতে ১ লাখ ৮০ হাজার বিদেশী শ্রমিকের প্রতি স্টে-অ্যাট-হোম অর্ডার জারি করে ৪ মে অবধি ডরমেটরিতে বসবাসকারী সকল শ্রমিককে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। সরকার ২৫টি আস্তানা বিচ্ছিন্ন অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করেছে, যেখানে শ্রমিকরা তাদের ঘরে সীমাবদ্ধ।
সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকদের পক্ষে মধ্যস্থতাকারী সংস্থা ট্রান্সিয়েন্ট ওয়ার্কার্স কাউন্ট টু, এত বড় জনগোষ্ঠীকে একসাথে পৃথক করার সরকারের পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে। সংস্থাটি লকডাউনকে ক্রুজ জাহাজের পরিস্থিতির সাথে তুলনা করে যেখানে যাত্রীদের তাদের কক্ষে রাখার পরেও সংক্রমণ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বহুগুণ বৃদ্ধি করে।
সিঙ্গাপুর সরকারের প্রতিটি শ্রমিকের জন্য সর্বনিম্ন ৪৮ বর্গফুট বাসস্থান প্রয়োজন। ট্রান্সিয়েন্ট ওয়ার্কার্স কাউন্ট ট’র পরিচালিত ডরমেটরি ভিজিট অনুসারে এখানে ২০-ব্যক্তি ডর্ম রুমের একটি সাধারণ লেআউট রয়েছে।
এস ১১, সিঙ্গাপুরের একটি শ্রমিক আবাস যেখানে সর্বোচ্চ ২ হাজার ২শ’ লোক আক্রান্ত হয়েছে এবং এটির ধারণক্ষমতা ১০ হাজারেরও বেশি।
সিঙ্গাপুর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন যে, একটি ৪ লাখ বর্গফুটের মল মোস্তফা সেন্টার সংক্রমণের সূচনাকেন্দ্র। শপিং সেন্টারটি অভিবাসী শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয়।
শ্রমিক আবাসগুলোর কয়েকটি এমন নির্মাণ সাইটের সাথে যুক্ত যেখানে ভাইরাস নিয়ে অভিবাসী শ্রমিকরা কাজ করে। বৃহত্তম নির্মাণ সাইট ক্লাস্টারটি হ’ল শহরতলির ব্যবসায়িক অঞ্চলে একটি ৫১-তলা অফিসের টাওয়ার প্রকল্প গেøারি। এটি অন্তত ছ’টি আবাসের সাথে যুক্ত।
সিঙ্গাপুরের ৫৭ লাখ জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বেশি বিদেশী কর্মী, যাদের বেশিরভাগ অংশই কাজের পারমিটসহ স্বল্প বেতনের শ্রমিক। এই অভিবাসীদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে আসে এবং তারা নির্মাণ, শিপিং, উৎপাদন এবং গার্হস্থ্য পরিষেবা খাতে কাজ করে। নিশ্চিত সংক্রমণের মধ্যে জাতীয়তা বিভাজন থেকে বোঝা যায় যে, এই দেশগুলির শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
বিশ্লেষণ অনুযায়ী শনাক্তদের মধ্যে সিঙ্গাপুরের নাগরিক ১ হাজার ১০৮, সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা ১৭৮, বাংলাদেশি ২ হাজার ৯২০, ভারতীয় ১ হাজার ৬০৭, চীনা ২৩৭, মিয়ানমারের ১১৮, মালয়েশীয় ৯১, ফিলিপিনো ৪০ এবং থাই ৩৯ জন। (১৯ এপ্রিল পর্যন্ত)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন