দূরত্বের সাংস্কৃতিক প্রথা : মহামারী বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নির্দিষ্ট কিছু সমাজে গ্রথিত সামাজিক দূরত্ব পালন করার মতো সাংস্কৃতিক প্রথাগুলি কিছু দেশকে আরো সুরক্ষা দিয়ে থাকতে পারে। থাইল্যান্ড এবং ভারতে, যেখানে ভাইরাসের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, সেখানে লোকেরা নির্দিষ্ট দূরত্বে থেকে প্রার্থনার মতো করে কড়জোরে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায়।
জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াতে, করোনাভাইরাস আসার বহু আগে থেকেই দূর থেকে মাথা নত করে শুভেচ্ছা জানানোর রীতি রয়েছে এবং অসুস্থ বোধ করলে মুখোশ পরে থাকার অভ্যাস রয়েছে তাদের।
যেটাকে ‘জাতীয় দূরত্ব’ বলে অভিহিত করা যেতে পারে, তাও ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে। যে দেশগুলি তুলনামূলকভাবে বাকিদের থেকে বিচ্ছিন্ন, তারা নির্জনভাবে থাকার কারণে এই মুহূর্তে সুস্থ থাকার সুবিধা অর্জন করেছে।
তাপ এবং আলো : মহামারী প্রাদুর্ভাবের ভ‚গোল বলছে, শীতকালে ইতালি এবং আমেরিকার মতো শীতপ্রধান অঞ্চলের দেশগুলিতে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু শাদ বা গায়ানার মতো উষ্ণ আবহাওয়ার দেশগুলিতে কার্যত সংক্রমণ দেখা যায়নি। গবেষকরা বলছেন, খুব সম্ভবত ভাইরাসটি খরতাপ সহ্য করতে পারেনি।
তবে, উত্তপ্ত আবহাওয়া একাই ভাইরাসটিকে প্রতিহত করতে পারে এই ভাবনাটিও নিছক দুরাশা। উন্নয়নশীল বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ সংক্রমণগুলির মধ্যে ব্রাজিলের অ্যামাজন অঞ্চলের মতো জায়গাও রয়েছে, যা সম্পূর্ণভাবে একটি ক্রান্তীয় অঞ্চল। তবে উষ্ণ আবহাওয়ার সুবিধাজনক দিক হচ্ছে লোকেরা সূর্যতাপের মধ্যে বেশি সময় ব্যয় করে, যা সংক্রমণ দমনে সহায়তা করে থাকতে পারে।
নানিয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কার জানিয়েছেন, ‘বাড়ির অভ্যন্তরে বদ্ধ পরিবেশের মধ্যে বসবাসকারী লোকেরা ভাইরাসের পুনঃসংক্রমণ ঘটাতে পারে এবং আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।’
প্রারম্ভিক এবং কঠোর লকডাউন : ভিয়েতনাম এবং গ্রিসের মতো যে দেশগুলো দ্রুত লকডাউনের চলে গিয়েছিল তারা নিয়ন্ত্রণহীন সংক্রমণ এড়াতে সক্ষম হয়েছে এবং তারা সফলভাবে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কঠোর সামাজিক দূরত্ব এবং কোয়ারেন্টিনের শক্তি প্রমাণ করেছে।
সিয়েরা লিওন থেকে উগান্ডা যাওয়ার বিমানবন্দরের কর্মীরা ভ্রমণকারীর সংস্পর্শে আসা সংযুক্তদের বিবরণ টুকে রাখেন এবং তাপমাত্রা পরীক্ষা করেন (যেহেতু এটি একটি কম কার্যকরী ব্যবস্থা হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে) এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে তাদের মতো কর্মীরা এই ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করার বহু আগে থেকেই তারা মুখোশ ব্যবহার করে আসছেন। সেনেগাল এবং রুয়ান্ডা সংক্রমণ হাতেগোনা থাকতেই তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল এবং কারফিউ ঘোষণা করেছিল।
দেশগুলির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রাথমিক অবস্থাতেই সংক্রমিতদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের দ্রুত সন্ধান করতে শুরু করেছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, লকডাউনের পাশাপাশি, ধর্মীয় সমম্মেলন এবং দর্শকবহুল খেলাধুলার আসরের উপর নিষেধাজ্ঞা সুস্পষ্টভাবে ফলপ্রসূ হয়েছে।
জাতীয় সীমানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বেশিরভাগ ব্যবসা বন্ধ করার এক মাসের বেশি সময় পর থাইল্যান্ড থেকে জর্ডান পর্যন্ত দেশগুলিতে নতুন সংক্রমণ কমে যেতে দেখা গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে সংক্রমণের প্রথমদিকেই মসজিদ, মাজার এবং গীর্জাগুলো ব্যাপকভাবে বন্ধ করে দেয়ায় সম্ভবত সংক্রমণের বিস্তার আটকানো সহজতর হয়েছিল।
ভাগ্যের কড়ি : বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ একমত যে, করোনাভাইরাস কয়েকটি দেশকে আঘাত হানবে এবং অন্যদের ছাড় দেবে, এমনটি মনে করার কোনো সুযোগ নেই। উপরোক্ত কারণগুলির মধ্যেই এর সম্ভাব্য ব্যাখ্যা রয়েছে।
পরিশেষে, গবেষকরা যে আরেকটি কারণ উল্লেখ করছেন, তা হ’ল ভাগ্য। একই সংষ্কৃতি ও আবহাওয়ার দেশগুলিতে যদি কোনো সংক্রমিত ব্যক্তি কোনো জনাকীর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন (যেটাকে গবেষকরা মহাসংক্রমণের ক্ষেত্র হিসাবে অভিহিত করেন), তাহলে উল্লেখিত বাকি বিষয়গুলোর সংমিশ্রনে বিশাল পরিসরে সৌভাগ্য ও দুর্ভগ্যজনকভাবে তার বিভিন্ন রকমের ফলাফল ঘটতে পারে। (সমাপ্ত)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন