শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বাংলাদেশের শেষ আর্মেনীয়র জীবনাবসান

এএফপি | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০২০, ১২:০১ এএম

মাইকেল জোসেফ মার্টিন, বাংলাদেশের সর্বশেষ আর্মেনিয়ান ৮৯ বছর বয়সে মারা গেছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে একসময়ের সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ৩০০ বছরেরও বেশি উপস্থিতির অবসান ঘটল। স্ত্রী-বিয়োগের পর ২০১৪ সাল থেকে কানাডার অন্টারিওতে মেয়েদের সঙ্গে থাকছিলেন তিনি। গত ১১ এপ্রিল সেখানেই তার মৃত্যু হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে তার পরিবার।

এক সময় মার্টিন হয়ে পড়েছিলেন বাংলাদেশে একমাত্র আর্মেনীয়। ১৯৩০ সালের ৬ জুন বার্মার রেঙ্গুনে জন্ম নেয়া মার্টিনের পারিবারিক নাম মিখাইল হসেপ মার্তিরোসিয়ান। তবে অ্যংলো নিয়মে সেটা বদলে হয়ে যায় মাইকেল জোসেফ মার্টিন। বাবা আর্মেনিয়ান হলেও মার্টিনের মা ছিলেন ইরানি। পরিবারের সঙ্গে ১৯৪০ এর দশকে ঢাকায় আসেন তিনি। বাবার মতই এক সময় যুক্ত হন পাটের ব্যবসায়। পাটের ব্যবসায় এক সময় ভাটার টান পড়ে। আর্মেনীয়দের দিনকালও পড়ে যায়। ১৯৮৬ সালে ঢাকার অন্যতম প্রাচীন গির্জা আর্মেনিয়ান চার্চ অব হলি রেজারেকশনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন মার্টিন।

আরমানিটোলা খেলার মাঠ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মাঝামাঝি এলাকায় গ্রিক অর্থডক্স মতের ওই গির্জা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৭৮১ সালে। নিকোলাস পোগজসহ চার ধনী আর্মেনীয় এর খরচ দিয়েছিলেন। বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য বিস্তার ধর্মপ্রচার আর উপনিবেশ স্থাপনের দৌড়ে অষ্টাদশ শতকের দিকে ঢাকায় এসে বসতি গড়েছিল আর্মেনীয়রা। ঢাকার আরমানিটোলার নামও সেখান থেকেই এসেছে।

ঢাকার পুরনো ইতিহাস বলছে, সংখ্যায় কম হলেও আর্মেনীয়রা ব্যবসা-বাণিজ্যে তখন বেশ প্রভাবশালী ছিল। লবণের ঠিকাদারির পাশাপাশি কাপড়, পান ও পাটের ব্যবসায় তাদের অধিপত্য ছিল ব্রিটিশ আমলেও। আরমানিটোলার ওই গির্জা যেখানে তৈরি হয়েছিল, সেখানে আগে ছিল আর্মেনীয়দের কবরস্থান। গির্জার প্রাঙ্গণে এখনও ৩২৫টি কবর রয়েছে। আর্মেনীয় স্থাপত্য রীতিতে গড়া অপরূপ এই গির্জা ১৮৯৭ সালের ভ‚মিকম্পে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরে আবার মেরামত করা হয়।

গির্জা প্রাঙ্গণের এক দিকে লাল ইটের অতি পুরনো এক বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন গির্জা পালক মার্টিন। তার দয়িত্ব ছিল গির্জার শত বছরের পুরনো জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহ রেজিস্ট্রারগুলো সংরক্ষণ করা, কবরস্থানের যত্ম নেয়া এবং বাংলায় আর্মেনীয়দের ইতিহাস লিপিবদ্ধ রাখা। ২০০৩ সালে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মাইকেল জোসেফ মার্টিন বলেছিলেন, এই গির্জা ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত হোক তা তিনি চান না। তিনি বলেন, ‘আমিই হয়ত বাংলাদেশে বসবাসকারী শেষ আর্মেনীয়। কিন্তু আমার পর অন্য কেউ যেন আর্মেনিয়া থেকে এসে এই দায়িত্ব নেয়, সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা আমি করব। তা না হলে শত বছরের এই ঐতিহ্য রাতারাতি ধুলায় মিশে যাবে।’

স্ত্রী ভেরোনিকা মার্টিন ২০০৫ সালে মারা গেলে বৃদ্ধ মার্টিন একা হয়ে যান। ততদিনে তাদের তিন মেয়ে কানাডায় স্থায়ী হয়েছেন। আক্ষরিক অর্থেই তিনি তখন আরমানিটোলার একমাত্র আর্মেনীয়। কিন্তু গির্জার মায়া ছাড়তে পারছিলেন না মার্টিন।

এর মধ্যে ২০০৮ সালে ব্যবসার সূত্রে ঢাকায় আসেন আরেক আর্মেনীয় আর্মেন আর্সলানিয়ান। মেয়ের কাছে জানতে পারেন পুরান ঢাকায় একটি আর্মেনীয় চার্চ থাকার কথা। সেখানে গিয়ে দেখা পান ওয়ার্ডেন মার্টিনের। তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে সখ্য। একবার স্ট্রোক করার পর ঢাকায় একা থাকা মার্টিনের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছিল। এক পর্যায়ে তিনি গির্জা পালকের দায়িত্ব আর্মেন আর্সলানিয়ানের হাতে দিয়ে কানাডায় সন্তানদের কাছে চলে যান। কিন্তু বাংলাদেশ আর আর্মেনীয় চার্চ ছিল তার হৃদয়জুড়ে।

তার মৃত্যুর পর তাকে উদ্ধৃত করে তার সন্তানরা পারিবারিক শোকবার্তায় লিখেছেন, ‘ঢাকায় আর্মেনীয় চার্চ দেখভাল করার কাজটি আমি নিয়েছিলাম, কারণ সেটা আমি আমার দায়িত্ব বলে মনে করেছিলাম। কাজটা আমি ভালোবাসতাম, ওই দায়িত্ব পালন করে সম্মানিত বোধ করতাম। ’

পূর্বসূরীর অবদান স্মরণ করে গির্জার বর্তমান ওয়ার্ডেন আর্মেন আর্সলানিয়ান এক বিবৃতিতে বলেছেন, মাইকেল জোসেফ মার্টিন ব্যক্তিগতভাবে যে ত্যাগ আর নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গেছেন সে কারণেই হয়ত ঢাকায় আর্মেনীয় চার্চ আজও টিকে আছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
জোবায়ের আহমেদ ১০ মে, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
এভাবেই সবাইকে ‍দুনিয়া থেকে চলে যেতে হবে। দুদনি আগে আর পরে।
Total Reply(0)
জাবের পিনটু ১০ মে, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
খুবই দু:খজনক সংবাদ। একটা জাতির অবসান মেনে নেয়া কঠিন।
Total Reply(0)
জাবের পিনটু ১০ মে, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
খুবই দু:খজনক সংবাদ। একটা জাতির অবসান মেনে নেয়া কঠিন।
Total Reply(0)
ড.এ এইচ এম সোলায়মান ১০ মে, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
পৃথিবীটাই ভাঙা গড়ার। বিলুপ্ত হবে, গড়বে এভাবেই চলবে।
Total Reply(0)
মেহেদী ১০ মে, ২০২০, ১:৩৪ এএম says : 0
এটাই পৃথিবীর নিয়ম। পুথীবীর ইতিহাসে কত জাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে আবার কত জাতির আগমন ঘটেছে।
Total Reply(0)
Mustafizur Rahman Ansari ১০ মে, ২০২০, ১২:১৮ পিএম says : 0
Absolutely Right,Mr.Mehedi
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন