শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

কালাপানিতে দাবি ও হিমালয়ে রাস্তা নির্মাণ নিয়ে ভারত-নেপাল বিরোধ চরমে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০২০, ১১:১৩ এএম

তিব্বত সীমান্তে চীনের সঙ্গে বিরোধের মধ্যে নেপালের সঙ্গেও বিরোধে জড়ালো ভারত। হিমালয়ে ভারতের নতুন সড়ক নির্মাণ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ নেপাল। এদিকে নেপালে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত দাবি করেছেন কালাপানিতেও তাদের দাবি রয়েছে। ওটা ভারতের অংশ।
হিমালয়ের পার্বত্য এলাকায় ওই সড়ক নেপালের সার্বভৌমত্বে আঘাত বলে অভিযোগ করছে কাঠমান্ডু। বিষয়টি নিয়ে এখন নেপাল ও ভারতের বিরোধ চরমে পৌঁছেছে। ভারত বলছে, নতুন ওই রাস্তাটি সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় ভূখন্ডের মধ্যে নির্মিত হয়েছে। নেপালও একই দাবি করছে।

এদিকে, নেপালের পার্লামেন্টেও ভারতের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবি ওঠার পর সোমবার নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাঠমান্ডুতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে সমন করে এ ব্যাপারে তার হাতে একটি প্রতিবাদসূচক নোটও তুলে দেন। ভারত-নেপাল এই দুই বন্ধু দেশের মধ্যে হঠাৎ এই তীব্র কূটনৈতিক বিবাদ নিয়ে দেখা দিয়েছে চাঞ্চল্য।

ভারতের উত্তরাখন্ড, চীনের তিব্বত আর নেপালের সীমানা যেখানে মিশেছে সেখানে হিমালয়ের একটি গিরিপথের নাম লিপুলেখ। ওই গিরিপথের দক্ষিণের ভূখন্ডটি ´কালাপানি´ নামে পরিচিত। এলাকাটি ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও নেপাল তাদের অংশ বলে দাবি করে থাকে।

নেপালের পার্লামেন্টে ঝড়

৮০ কিলোমিটার লম্বা পার্বত্য রাস্তাটি উদ্বোধনের পরই এর বিরুদ্ধে নেপালের পার্লামেন্টে ঝড় বয়ে যায়। নেপালি কংগ্রেসের এমপি পুষ্পা ভূষল গৌতম বলেন, "১৮১৬ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও নেপালের মধ্যে স্বাক্ষরিত সাগাউলি চুক্তি অনুসারে ওই এলাকা সম্পূর্ণভাবে নেপালের।"

নেপালের সংসদ সদস্য গগন থাপা হুঁশিয়ারি দেন, "নেপালের এক ইঞ্চি জমিও কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। আর ভারতের এই দাদাগিরির বিরুদ্ধে নেপালের সিংহভাগ মানুষ গর্জে উঠবে।"

নেপাল সদ্ভাবনা পার্টির এমপি সরিতা গিরি আবার প্রশ্ন তোলেন, "এই ইস্যুতে ভারতকে ডিপ্লোম্যাটিক নোট পাঠানো হলেও চীনের বিরুদ্ধেও কেন একই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না?"

পার্লামেন্টে নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গাওয়ালি জানান, ২০১৫তে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের পরই ওই দুই দেশ লিপুলেখে একটি বাণিজ্যিক পোস্ট খুলতে সম্মত হয়, যা নেপাল কখনওই মেনে নিতে পারেনি।

এরপরই তার মন্ত্রণালয় ভারতের তৈরি নতুন রাস্তার তীব্র নিন্দা করে দীর্ঘ বিবৃতি দেয় এবং কাঠমান্ডুতে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিনয় মোহন কাটরাকে সিংদরবারে তলব করা হয়।

কালাপানিতে ভারতেরও দাবি

কালাপানির ওপর ভারতের দাবিরও ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে বলে মনে করেন নেপালে নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দেব মুখার্জি, তবে রাস্তা উদ্বোধনের বিষয়টা অন্যভাবে করা যেতে পারত বলেও তার অভিমত।

ভারতের দাবি প্রসঙ্গে দেব মুখার্জি বলেন, "শুধু মানচিত্রই নয়, ১৮৪০ থেকে ১৮৬০-র দশকেও আমরা ইংরেজ শিকারি, পর্যটক বা অ্যাডভেঞ্চারারদের অসংখ্য বিবরণ পাই, যেখানে তারা লিপু পেরিয়ে ওই এলাকায় যাচ্ছেন।"

তিনি বলেন, "এটাই প্রমাণ করে কালাপানি ভারতের নিয়ন্ত্রণে ছিল, কারণ নেপাল তখন বিদেশিদের ঢুকতেই দিত না।"

এছাড়া "১৯০৬ সালে আলমোড়ার ডেপুটি কমিশনার সি এ শেরিংয়ের বইয়েও ওই এলাকাটিতে ভারতের শাসন ও নিয়ন্ত্রণের স্পষ্ট প্রমাণ আছে।"

তিনি বলেন, "তারপরও বলব, ভারত যখন নেপালকে কথা দিয়েছে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে, তখন বলা যায় না এটা আমাদেরই এলাকা। তোমাদের এ নিয়ে কিছু বলার হক নেই।"

গত বছর জম্মু ও কাশ্মীরের প্রশাসনিক পুনর্গঠনের পর ভারত দেশের যে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে, তাতে কালাপানিকে ভারতের মধ্যে দেখানোর প্রতিবাদ জানিয়েছিল নেপাল। সীমান্ত সমস্যার নিরসনে তারা পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকও দাবি করে, যা নানা কারণে শেষ পর্যন্ত হয়নি। অবশ্য বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে এখন করোনাভাইরাস সংকট মেটার জন্যও অপেক্ষা করতে চাইছে না নেপাল। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Nannu chowhan ১৩ মে, ২০২০, ১২:১৯ পিএম says : 0
Very independent nepal parliament & the love their country also have given priority nationalism, national interest before giving important of the friendship with other country I hope our parliament member should also given first priority national interest than friendship.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন