আজ ১ জুন সাউথ এশিয়ান মনিটরের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, উপসাগরীয় দেশগুলোর (এখানে কয়েক লাখ প্রবাসী ভারতীয়ের বাস) সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু-জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) শাসনে থাকা ভারত থেকে তাদের ভাষায় ইসলামফোবিয়া আমদানির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বলা যায় গালফ নিউজের এডিটর-ইন-চিফ আবদুল হামিদ আহমদের কথা। তিনি ৭ মে টুইটারে পোস্ট করা সম্পাদকীয়তে উপসাগরীয় দেশগুলোতে বিদ্বেষ রফতানি বন্ধ করতে ভারতীয় মিডিয়ার প্রতি আহ্বান জানান। তার এই পোস্টে ১৩ হাজার লাইক পড়ে। মোদির দল ও এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এই টুইটের তীব্র সমালোচনা করে।
তবে আহমদের টুইট অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, উপসাগরীয় দেশগুলো খুব কমই ভারতের সমালোচনা করে থাকে।উপসাগরীয় দেশগুলোতে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকেরা ইসলামফোবিয়ায় জড়িত থাকার খবর প্রকাশের পর অনলাইনে বিজেপিবিরোধী প্রচারণা শুরু হয়। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী কিছু কিছু অ্যাকাউন্ট পাকিস্তানি ব্যক্তিরা পরিচালনা করছে বলে মনে হয়। তবে আরবরা পরিচালনা করে থাকে এমন মাধ্যমেও ভারতীয় মুসলিমদের সাথে প্যান-ইসলামিক সংহতির ধারণাকে উৎসাহিত করা হয়।
বর্তমানে তা উপসাগরীয় দেশগুলোতে হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিস্তার ঠেকানোর প্রয়াস হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব দেশ ভারতের সাথে সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক বজায় রাখছে। আরএসএস তার কার্যক্রম তাদের সীমান্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবে, এমন ধারণা করেই এই সম্পর্ক গড়া হয়েছিল। আরএসএস হলো উগ্র ডান, হিন্দু জাতীয়তাবাদী আধাসামরিক স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন। তাদের আদর্শেই পরিপুষ্ট হয়ে থাকে মোদির বিজেপি। ভয়াবহ রকমের ইসলামফোবিক এই দলের সমর্থকেরা ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালায়। তারাই ২০০২ সালে গুজরাটে সহিংসতা সৃষ্টি করেছিল, চলতি বছরের প্রথম দিকে নয়া দিল্লিতে দাঙ্গার সৃষ্টি করেছিল।
খবরে প্রকাশ, আরএসএসের প্রধান মোহন ভগত ২১০৬ সালে উপসাগরীয় দেশগুলোতে বসবাসকারী প্রখ্যাত ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কয়েকটি সভা করেছিলেন সংগঠনের প্রভাব সম্প্রসারণের লক্ষ্যে। এই অঞ্চলের দেশগুলো এটিকে সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকি হিসেবেই দেখছে। সাংবাদিক আবদুল মজিদ জারগারের মতে, এসব সভা নিয়মিত হয়ে থাকে এবং এই অঞ্চলের ভারতীয় প্রবাসীদের ইসলামফোবিয়া বাড়ার সাথে তাল মিলিয়েই তা হয়।
উপসাগরীয় দেশগুলোতে আরএসএসের সম্প্রসারণ আরো নজরদারিতে আসে ভারতীয় ব্যবসায়ী বি আর শেঠির ব্যাপক প্রতারণার কারণে। উপসাগরে ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সাথে মোদির যোগসূত্র হলেন এই শেঠি। ২০১৫ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে মোদির সফরের প্রধান সমন্বয়কারীই ছিলেন তিনি।
মোহন ভগতের সাথে যেসব প্রধান ব্যক্তিত্ব সাক্ষাত করেছিলেন, তিনি ছিলেন তার অন্যতম। এসব ব্যক্তি কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর মোদি সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েতের মতো দেশগুলোতে মোট জনসংখ্যার ২৫ থেকে ৩০ ভাগই হলো ভারতীয় নাগরিক। ফলে এখানে ইসলামফোবিয়ার বিস্তার সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জন্য ভয়াবহ মাত্রায় নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করবে।
আসলে মোদির আমলে ভারতীয় সমাজে চরমপন্থীরা বিপুলভাবে প্রতাপশালী হয়ে ওঠেছে। কিন্তু তা যখন সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল, তখনই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ওঠেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন