ইনকিলাব ডেস্ক : জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যের অ্যান্সবাখে একটি বারের বাইরে আয়োজিত সঙ্গীত উৎসবের বাইরে বোমা বিস্ফোরণে ২৭ বছর বয়সী এক সিরীয় আশ্রয়প্রার্থী নিহত হয়েছেন। গত রোববারের এ ঘটনায় বিস্ফোরিত বোমাটি ওই ব্যক্তিই বহন করছিলেন বলে বাভারিয়া রাজ্য কর্মকর্তারা এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন। এই বিস্ফোরণের ঘটনায় আরো ১২ জন আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা গুরুতর। নিহত এই সিরীয়কে এক বছর আগে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করেছিল জার্মান কর্তৃপক্ষ। বাভারিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইওয়াখিম হারমান জানিয়েছেন নিহত ওই ব্যক্তি এর আগে দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তবে এবার তিনি শুধু আত্মহত্যা করতে নাকি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মরার পরিকল্পনা করেছিলেন তা পরিষ্কার হওয়া যায়নি। দুই বছর আগে সে জামার্নিতে প্রবেশ করে আশ্রয় প্রার্থনা করে আবেদন করেছিল। জার্মান কর্তৃপক্ষ গত বছর তার আবেদন খারিজ করে সাময়িকভাবে জার্মানিতে বসবাসের অনুমতি দেয়। জার্মান পুলিশের মুখপাত্র বলছে, নিহত যুবক মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিল। এর আগেও সে দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। সে একাধিকবার মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে চিকিৎসাও নেয়।
বিস্ফোরণে ওই ব্যক্তি নিহত হওয়া ছাড়াও আরো ১২ জন আহত হয়েছেন। হারমান জানান, নিহত ব্যক্তির পিঠে একটি ব্যাগ ছিল। বিস্ফোরণের আগে টিকিট না থাকার কারণে তাকে অ্যান্সবাখের উন্মুক্ত সঙ্গীত উৎসবে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সূত্র জানায়, এই হামলার সাথে কোনো প্রকার ইসলামী কানেকশন আছে কিনা সেই সন্দেহও একেবারে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না। ব্যাভারিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জোসিম হারমান বলেন, ২৭ বছর বয়সী ঐ ব্যক্তির কাছে কোনো প্রবেশ টিকেট ছিল না, তাই তাকে সঙ্গীত উৎসবে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি, এরপরই সে ঐ বিস্ফোরণ ঘটায়। তবে এই বিস্ফোরণের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কোনো সম্পর্কে আছে কী না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে আমরা সেই সম্ভাবনাকে একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছি না।
এর আগেও জার্মানিতে দুই দফা সন্ত্রাসী হামলা হয়। এই হামলার ঘটনায় সিরীয় যুবকের মনে জার্মানিতে আশ্রয় পাওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ দেখা দেয়। এমন হতাশা থেকেও হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের পর উৎসব স্থল থেকে দুই হাজারেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গেল এক সপ্তাহের মধ্যে জার্মানিতে সংঘটিত চতুর্থ সহিংসতার ঘটনা এটি। গত শুক্রবার মিউনিখে ইরান-জার্মানির দ্বৈত নাগরিক ১৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তির গুলিতে নয়জন নিহত হন। মিউনিখের ঘটনার রেশ কাটার আগেই অ্যান্সবাখের এ ঘটনাটি ঘটল। একটি রেস্তোরাঁর সামনে ঘটা এ বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল ঘিরে বড় একটি এলাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৪০ হাজার বাসিন্দার অ্যান্সবাখে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সেনা ঘাঁটি এবং জার্মান কমব্যাট অ্যাভিয়েশনের ১২তম ব্রিগেডের ঘাঁটি আছে। ওই ঘাঁটির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের বিষয়ে ঘাঁটির কাছে কোনো তথ্য নেই। মিউনিখ হামলার দুই দিন না যেতেই ফের জার্মানির একটি বারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। রোববার (২৪ জুলাই) দক্ষিণ জার্মানির নুরেমবার্গের কাছে আনসবাচ শহরের একটি বারে এ বিস্ফোরণ ঘটে। এটি কিসের বিস্ফোরণ তা জানা না গেলেও শহরের মেয়র বলেছেন, এটি ছিল বিস্ফোরক যন্ত্র। এদিকে, ঘটনার পরপরই স্থানীয় পুলিশ ইউজেনেস ওয়াইন নামে ওই বার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। এরআগে শুক্রবার (২২ জুলাই) মিউনিখে বন্দুকধারী কিশোরের গুলিতে ৯ জন নিহত হয়। বিবিসি, আলজাজিরা, এএফপি, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন