ইনকিলাব ডেস্ক : ফের সন্ত্রাসী হামলা হলো ফ্রান্সে। এবারে এক গির্জায় ঢুকে যাজককে গলা কেটে হত্যা করেছে দুই হামলাকারী। এর আগে উত্তর ফ্রান্সের নরম্যান্ডি এলাকার ওই গির্জায় ধারালো ছুরি হাতে ঢুকে কয়েকজনকে জিম্মি করে তারা। পরে পুলিশের গুলিতে দুই হামলাকারী নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। তদন্ত সূত্রের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, গির্জার যাজক জ্যাকুয়েস হ্যামেলকে (৮৪) গলা কাটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সেইন্ট এতিয়েন ড রৌভরায় নামক এলাকার ওই চার্চে হামলার সময় ৫ জন উপস্থিত ছিলেন। একজন যাজক, দুজন নান এবং দুজন উপাসনাকারী।
স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৪৩ মিনিটে সকালের প্রার্থনার সময় হামলাকারীরা ধারালো ছুরি হাতে গির্জায় প্রবেশ করে। ৫ জনকে জিম্মি করে নেয়। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র পিয়েরে হেনরি ব্রান্ডেট জানিয়েছেন, গির্জা থেকে দুই হামলাকারী বের হয়ে আসার পর পুলিশের গুলিতে তারা নিহত হয়। জিম্মি হওয়া তিনজনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। অপরজন জীবনের সঙ্গে লড়ছেন। গির্জার পাশের একটি বাড়ি থেকে এক প্রত্যক্ষদর্শী বিএফএম টিভিকে বলেন, ‘সেখানে পুলিশের সংখ্যা বাড়ছিল... এরপর শুরু হলো অবিরাম গুলিবর্ষণ। সারা বিশ্বে যা ঘটছে তাকে আমরা ভেবেছিলাম এটা একটা সন্ত্রাসী হামলা, যা হচ্ছিল তা না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।’
ঘটনার পরপরই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নার্ড ক্যাজেনিউভ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ওঁলাদ বলেন, আইসিসের দুই সমর্থক জঘন্য এই সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘এটা এমন একটা যুদ্ধ যা ফ্রান্সকে একতাবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে। প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভ্যালস এক টুইটে বলেন, ‘বর্বরোচিত এই হামলা ক্যাথলিক সম্প্রদায় এবং পুরো ফ্রান্সের উপর আঘাত। আমরা একতাবদ্ধ থাকবো।’ হামলাকে ভয়াবহ সংবাদ আখ্যা দিয়ে ভ্যাটিক্যান বলেছে, ‘সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যেসব সহিংসতা হচ্ছে দুঃখজনকভাবে এ ঘটনা তার সঙ্গে যোগ হলো। অসম্ভব বেদনা আর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এই ঘটনা। আমরা বিশেষ করে মর্মাহত এ কারণে যে, বিভীষিকাময় এই হামলা ঘটেছে গির্জার ভেতরে। একটা পবিত্র স্থানে, যেখানে সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসার কথা ঘোষণা করা হয়। তেমন একটি স্থানে একজন যাজককে হত্যা করা হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বাসীরা।’
নিহত যাজক হ্যামেলকে একজন নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন, গির্জার নিয়মিত এক স্থানীয় উপসনাকারী। তিনি বলেন, ‘হ্যামেল বয়ঃবৃদ্ধ ছিলেন, তারপরও প্রত্যেকের প্রয়োজনে তিনি সব সময় উপস্থিত থাকতেন। তিনি একজন ভালো যাজক ছিলেন।’ উল্লেখ্য, মাত্র দু’সপ্তাহ আগেই নিস শহরে বাস্তিল দিবস উদযাপনে উপস্থিত জনতার ওপর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে ৮৪ জনকে হত্যা করে এক হামলাকারী। হামলায় আরো আহত হন ৩ শতাধিক। ওই হামলার রেশ কাটিয়ে না উঠতেই গির্জায় এমন হামলা প্রত্যক্ষ করলো ফ্রান্স। নিস হামলা ১৮ মাসের ব্যবধানে ফ্রান্সে ৩য় বড় হামলার ঘটনা। হামলার দায় স্বীকার করেছিল আইএস। নিস হামলার পর ফ্রান্স আরো ৬ মাসের জন্য জরুরি অবস্থার সময় বাড়িয়েছে। ওদিকে, জার্মানিতে আইএস আরো দুটি হামলার দায় স্বীকার করায় পুরো ইউরোপজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিবিসি, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন