ইনকিলাব ডেস্ক : গঞ্জনা তো সেই জন্ম থেকেই গা-সওয়া। না সইলে সমাজে টেকা যে দায়! লাঞ্ছনা- তা-ও তো আছে। আছে চরম তাচ্ছিল্যও। উঠতে-বসতে প্রতি পদে বুঝিয়ে দেওয়া হয় ওরা দলিত। নি¤œ শ্রেণির। দীর্ঘ পুঞ্জীভূত সেই ক্ষোভ থেকেই তামিলনাড়ুর ২৫০ দলিত পরিবার ইসলামের শরণাপন্ন হয়েছেন।
তারা ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলামে দীক্ষিত হতে চান। এর মধ্যে ৬টি পরিবার ইতিমধ্যেই ইসলাম ধর্ম নিয়েছে। দেখাদেখি বাকিরাও ধর্মান্তরিত হতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তামিলনাড়–র ছোট দুটি শহর বেদারণ্যম ও কারুর। এই দুই শহরেই থাকে দলিত পরিবারগুলো। তাদের অভিযোগ, জীবনের মৌলিক অধিকার থেকে তারা নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। দলিত বলেই বেদারণ্যম মন্দিরের উৎসবে তারা যোগ দিতে পারেন না। মহাশক্তি আম্মান মন্দিরে যাওয়ারও অনুমতি নেই।
তামিলনাড়ু তৌহিদ জামাতের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রহমান খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ইতোমধ্যে ৬টি পরিবার ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম নিয়েছে। আব্দুল রহমান আরো বলেন, আমরা সংশ্লিষ্টদেরকে বলেছি যে, ইসলাম গ্রহণ রাগের মুখে হয় না। তারা যদি সত্যি ইসলাম গ্রহণ করতে চান তাহলে তার আগে ধর্ম সম্পর্কে জেনে বুঝে আসতে হবে। এজন্য আমরা কুরআনের অনুবাদ কপি তাদের মধ্যে বিতরণ করেছি। এর মধ্যে ছয়টি পরিবার ইসলাম সম্পর্কে যতটুকু জেনে এসেছে তাতে আমরা মোটামুটি সন্তুষ্ট হওয়ায় তাদের ধর্মান্তরিত করেছি। তিনি আরো বলেন, ইসলাম গ্রহণ করলে ওরা সমতা ও মর্যাদা পাবেন। মানবাধিকারও সুরক্ষিত থাকবে। কখনোই নিজেদের অপাংক্তেয় বলে মনে করবে না। ফলে হীনমন্যতাতেও ভুগবে না।
সদ্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী মীনা জানান, মহাশক্তি মারিয়া মন্দিরটি তাঁদেরই পূর্বপুরুষ নির্মাণ করেছেন। অথচ, সেই মন্দিরেই এখন তাঁরা ঢুকতে পারেন না। ব্রাত্য করে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। যে কারণে মন্দিরের উৎসবেও তাঁরা যোগ দিতে পারেন না। ফলে এই সিদ্ধান্ত। ধর্মান্তরিত হতে কেউ তাঁদের জোড়াজুড়ি করেননি বলেই জানান মীনা দেবী।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দলিতদের ওপর কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের আক্রমণ বেড়েই চলছে। গুজরাটের উনা, তামিলনাড়ুতে এমন খবর প্রায়ই মিলছে। আর এর পরিণতিও হচ্ছে মারাত্মক। গত বছর হারিয়ানায় প্রায় ১০০টি দলিত পরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। এমন ঘটনার নজির থাকা সত্ত্বেও দলিতদের ওপর অত্যাচার কমেনি। গুজরাটের উনার ঘটনা রাজনৈতিক মহলে যত শোরগোলই ফেলুক, বাস্তবের ছবিটা কিন্তু তেমন বদলায়নি। আর তাই স্বধর্মের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরেই অন্য ধর্মের আশ্রয় গ্রহণ করছেন নিপীড়িত দলিতরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন