শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

করোনার উপসর্গ : জোরপূর্বক দাহ করার প্রতিবাদ করছে শ্রীলংকার মুসলিমরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২০, ৪:২০ পিএম

কোনো মুসলিমের মৃতদেহ কবরস্থ করার পরিবর্তে জোরপূর্বক পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় শ্রীলংকায় মামলা হয়েছে। মামলার শুনানি হবে ১১ জুলাই। আরও ক্ষোভের ব্যাপার হলো, সরকারি বাহিনী দেশেটির নাগরিক তিন সন্তানের মা ফাতেমা রিনোজার করোনা উপসর্গ ছিল কি-না, বা সে মারা গিয়েছে কিনা সেব্যাপারে তার পরিবারের সাথে করেছে অমানবিক ওচতুর আচরণ।–সাউথ এশিয়ান মনিটর, বিবিসি

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, শ্রীলংকায় গত ৪ মে ৪৪ বছর বয়সী, তিন সন্তানের মা এবং সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্য ফাতিমা রিনোজাকে কোভিড-১৯ এর লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ফাতিমা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছিল যে, সে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত।তার স্বামী মোহাম্মদ শফিক বলেন, যে দিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো, সেদিন থেকেই তাদের উপরে চড়াও হয়েছে কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ আর সামরিক বাহিনীর সদস্যরা আমাদের ঘরের দরজায় হাজির হয়, বলে জানান তিনি। আমাদেরকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে তারা সেখানে সব জায়গায় স্প্রে করে। আমরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি, কিন্তু তারা আমাদেরকে কিছুই ব্যাখ্যা দেয়নি। এমনকি তিন মাসের শিশুকেও তারা পরীক্ষা করে এবং আমাদেরকে কুকুরের মতো কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। মোহাম্মদ বলেন, পরিবারের সদস্যদের সারা রাত আটকে রেখে পরদিন ছেড়ে দেয়া হয় এবং তাদেরকে দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়। ততক্ষণে তারা জানতে পারেন যে, ফাতিমা হাসপাতালে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা গেছে।

ফাতিমার বড় ছেলে বলেন যে, সে হাসপাতালে যেতে চায় মৃতদেহ চিহ্নিত করার জন্য। কিন্তু তাদের জানানো হয় মৃতদেহ পরিবারের কাছে দেয়া হবে না, কারণ তার মৃত্যুর সাথে কোভিড-১৯ এর সম্পর্ক রয়েছে। তার বদলে মৃতদেহ পুড়িয়ে দেয়ার জন্য জোর করে তাদের কাছ থেকে কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়। যদিও মুসলিম আইনে মৃতদেহ পোড়ানোটা নিষিদ্ধ। তার বাবা শফিক বলেন, তাকে জানানো হয় যে, আরও পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ফাতিমার শরীরের বিভিন্ন অংশ নেয়া হবে। তার করোনা হয়ে থাকলে বিভিন্ন অংশ নেয়ার প্রয়োজন কেন তাহলে? তিনি মনে করেন, ফাতিমাকে কি করা হয়েছে, এটা সত্যিকারভাবে তাদেরকে জানানো হয়নি।

ফাতিমার পরিবার আর শ্রীলংকার মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যান্যরা বলেছেন যে, কর্তৃপক্ষ তাদের অধিকার খর্ব করেছে। কারণ, করোনায় মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়ায় কোন বাধা নেই। তারা বলেছেন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে সংখ্যাগুরু সিংহলীদের বৈষম্যের এটা নতুন উপায়। দেশের সুপ্রিম কোর্টে তারা পোড়ানোর আইনের বিরুদ্ধে আবেদন করেছেন। ১৩ জুলাই এটা নিয়ে শুনানি শুরু হবে।

শ্রীলংকায় অনেক মুসলিমই মনে করেন যে, ২০১৯ সালের এপ্রিলের পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়েছে। ওই সময় কলম্বোতে হোটেল ও গির্জায় সন্ত্রাসী হামলায় আড়াই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছিল। ৩১ মার্চ শ্রীলংকায় প্রথম একজন মুসলিম করোনা ভাইরাসে মারা যাওয়ার পর থেকেই, কিছু মিডিয়া প্রকাশ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ভাইরাস ছড়ানোর অভিযোগ করে আসছে। যদিও শ্রীলংকায় এ পর্যন্ত ১১ জন মাত্র করোনায় মারা গেছে। সবগুলো মৃতদেহই সেখানে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

সরকারের প্রধান এপিডেমিওলজিস্ট ড. সুগাথ সামারাবিরা বিবিসিকে বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সারা বিশ্বের উদ্দেশ্যেই নির্দেশনা দিয়েছে। মেডিকেল বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সেটাকে দেশের উপযোগী করে সরকার পোড়ানোর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কিন্তু মুসলিম অধিকার কর্মী, কমিউনিটি নেতা এবং রাজনীতিবিদরা শ্রীলংকা সরকারকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলেছে।

এদিকে, স্ত্রীর মৃত্যুর ছয় সপ্তাহ পরে এসেও শফিক এটা নিশ্চিত হতে পারছেন না যে, তার আদৌ কোভিড-১৯ হয়েছিল কি না। তাকে কবর দিতে না পারার যন্ত্রণা এখনও তাঁকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। একটা জিনিসই তিনি বারবার বলছেন, আমরা মুসলিমরা আমাদের মৃতদেহকে পোড়াই না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন