দায়িত্ব পাওয়ার প্রায় ৪ বছর পরও মহানগরের নেতারা থানা কমিটি করতে পারেনি। দীর্ঘদিন পর উদ্যোগ নেয়া হলেও নেতাদের সমন্বয়হীনতা, দ্বন্দ্ব ও পরস্পরবিরোধী মনোভাবের কারণে মুখোমুখী অবস্থানে মহানগরের নেতারা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কমিটি ঘোষণার পর যোগ্য লোকদের বাদ দেয়া হয়েছে দাবি করে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছেন সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কমিটি করার ক্ষেত্রে সকলের মধ্যে সমন্বয় করার নির্দেশনা দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই পাল্টা পাল্টি কমিটি ঘোষণার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, থানা কমিটিগুলোতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের পছন্দের লোকজন আহ্বায়ক-সদস্য সচিব পদে না আসায় তার পরামর্শেই মহানগর কমিটির দু’জন নেতা পাল্টা কমিটি দিয়েছেন। কমিটি পাল্টা কমিটির বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক ছাত্র নেতারা।
সাবেক এক ছাত্র নেতা বলেন, কমিটি গঠনের দীর্ঘসূত্রিতা, সমন্বয়হীনতা, বিচ্ছিন্নতা, ত্যাগী, পরিশ্রমী ও যোগ্য কর্মীদেরকে অবমূল্যায়ন বিদ্রোহ বা বিকল্প পন্থা অবলম্বনের প্রধান কারণ। পাল্টা পাল্টি কমিটি তারই বহিঃপ্রকাশ। আরেক সাবেক নেতা বলেন, কমিটি হলেই পাল্টা কমিটি বা বিদ্রোহ করা, আবার নিজের পকেটের লোক দিয়ে কমিটি করার এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। দক্ষ, কর্মীবান্ধব এবং যোগ্যদের দিয়েই কমিটি করতে হবে। নেতৃত্ব সহজ ব্যাপার না, এর সাথে মিশে আছে দূরদর্শিতা, দার্শনিক চিন্তা ও বাস্তবিক জ্ঞান।
জানা যায়, গত বুধবার স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এসএম জিলালী ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ১১টি থানায় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। আগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় মতিঝিল, হাজারীবাগ, কদমতলী, খিলগাঁও, শাহবাগ, পল্টন, রমনা, শাহজাহানপুর, কোতোয়ালী, মুগদা ও লালবাগ থানায় ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা।
কমিটি ঘোষণার পরপরই যোগ্যদের বাদ দেয়া হয়েছে এবং নিজেদের লোকজন দিয়ে পকেট কমিটি করা হয়েছে বলে দাবি করেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. রফিক হাওলাদার ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের জিলন। কমিটি করার ক্ষেত্রে তাদের কোন মতামত নেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন এই দুই নেতা। বিষয়টি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পর্যন্ত গড়ায়। কেন্দ্রীয় কমিটির ৭ নেতা ও মহানগরের নেতাদের সাথে বৃহস্পতিবার বিকেলে ভার্চুয়াল এক বৈঠকে মিলিত হয়ে মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল নেতাদের সমন্বয় করে কমিটি করার নির্দেশনা দেন তিনি। কিন্তু বৈঠক শেষ হওয়ার পরপরই সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ১০ থানায় পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন। এই দুই নেতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ঘোষিত ৭টি থানার সাথে আরও নতুন তিনটি থানার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। ঘোষিত কমিটিকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করারও নির্দেশনা দেয়া হয়। এসব থানার মধ্যে রয়েছে- মতিঝিল, হাজারীবাগ, কদমতলী, শাহবাগ, পল্টন, শাহজাহানপুর, লালবাগ, ওয়ারী, সূত্রাপুর ও শ্যামপুর।
মহানগর দক্ষিণের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. রফিক হাওলাদার বলেন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিজেদের লোক দিয়ে কমিটি ঘোষণা করেছে। তাদের সাথে কোন আলোচনা করেনি। এজন্য তারা পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছেন। তারা কমিটি দিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে রফিক হাওলাদার বলেন, আমরা সুপার ফাইভে আছি, আমাদের মতামত তো নিতে হবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সমন্বয়ের কথা বলার পরও কেন কমিটি ঘোষণা করলেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলার পর আমরা ১০টি দিয়েই বন্ধ করে দিয়েছি, নাহলে আমাদের আরও কমিটি ঘোষণা করা হতো। তার নির্দেশনার প্রতি সম্মান দেখিয়েই আমরা আর অগ্রসর হয়নি। যেহেতু তিনি আমাদের অভিভাবক। তার নির্দেশনাকে আমরা সম্মান করি।
মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, মহানগরের সকল নেতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে আলোচনা করেই থানা কমিটিগুলো ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যেহেতু থানা কমিটি হয় না তাই আমরা আহ্বায়ক কমিটি করেছি, তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ৩০ দিনের মধ্যে ওয়ার্ড কমিটি করে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব তুলে দিবেন।
সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের সাথে আলোচনা ছাড়াই কমিটি করা হয়েছে এবং নিজেদের লোকদের দিয়ে কমিটি করার যে অভিযোগ করা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের সাথে আলোচনা করেই করা হয়েছে। তাদেরও কিছু পরামর্শ ছিল তবে যারা বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে একটা জায়গায় একাধিক যোগ্য লোক থাকতে পারে সকলকেই তো আর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বানানো যায় না। আমরা বলেছি যারা বাদ পড়বেন তাদেরকে মহানগরের দায়িত্ব দেয়া হবে।
নজরুল ইসলাম বলেন, যারা পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছেন তাদের এই এখতিয়ার নেই। তারপরও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্যই এমনটি করেছে।
এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূইয়া জুয়েল বলেন, সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক যে কমিটি ঘোষণা করবেন সেটিই বৈধ। অন্য কারো কমিটি দেয়ার এখতিয়ার নেই। এর বাইরে যদি কেউ কমিটি দেয় সেটি অবৈধ এবং সংগঠন বিরোধী। এধরণের কাজ যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, কমিটিতে যারা থাকেন তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে কমিটি গঠন করবেন। কোন সমস্যা থাকলে কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে কথা বলবেন কিন্তু পাল্টা কমিটি দিতে পারে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন