মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সংঘর্ষ নয় পিটিয়ে মারা হয়েছে ৩ জনকে

যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের অভ্যন্তরে.. সহকারী তত্ত্বাবধায়কসহ ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারী পুলিশ হেফাজতে

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

যশোর কিশোর সংশোধনী কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া বৃহস্পতিবারের লোমহর্ষক ঘটনা কেউই মেনে নিতে পারছেন না। সবার মনেই প্রশ্ন এটি কী করে সম্ভব হল? বন্দিরা এতটা নিরাপত্তাহীন? সংশোধনের জন্য পাঠিয়ে লাশ হয়ে ঘরে ফিরবে কিশোররা?
হতাহতদের স্বজনদের দাবি, ভেতরে কিশোরদের ঠিকমতো খাবার দেয়া হয় না, নির্যাতন করা হয়। নিহত রাব্বির পিতা রোকা মিয়া ও মা পারভীন বেগমসহ স্বজনরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তারা নৃশংস হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের শাস্তি দাবিতে হাসপাতাল মর্গের সামনে আহাজারি করেছেন।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ৩ জন বন্দি কিশোর হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। আহত হয়েছে ১৫ জন। নিহতরা হল, খুলনা দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার পুত্র পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮), বগুড়া শেরপুরের মহিপুর গ্রামের নূর ইসলাম নুরু মিয়ার পুত্র রাসেল ওরফে সুজন (১৮) ও বগুড়া শিবগঞ্জ থানার তালিপপুর গ্রামের নানু প্রামাণিকের পুত্র নাঈম হোসেন (১৭)। আহত ১৫ জনকে যশোর ২৫০ বেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হল, জাবেদ, ঈশান, আরমান, তাবের, হৃদয়, লেমন, ডাকু, সাইফুল, শরিফুল, নাইম, সাব্বির, হৃদয়, সাফিন, সাকিব, সাব্বির। তারা হাসপাতালে কাতরাচ্ছে।
আহত কিশোরদের কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। তার মধ্যেও সাংবাদিকরা তাদের কথা শোনার চেষ্টা করেন। যশোর বসুন্দিয়ার ফারুক শেখের পুত্র ঈশান ও চুয়াডাঙ্গার পাভেলের স্বজনদের মাধ্যমে জানা যায়, সংশোধনী কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে ১৮ জনকে ঘরের বাইরে এনে দফায় দফায় মারপিট করে। সূত্রপাত ৩ আগস্ট হেড গার্ড নূর ইসলাম তার চুল কেটে দিতে বলে এক কিশোর বন্দিকে।
পরে আরো যুক্ত হয় নিম্নমানের খাবার সরবরাহ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিভিন্ন সময় নানামুখী নির্যাতনের বিষয়। ধুমায়িত ক্ষোভ হয় কিশোরদের মাঝে। এরই জের ধরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মিলিতভাবে একে একে ১৮ কিশোরকে রুমের বাইরে এনে হাতা পা বেঁধে রড ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায় বলে অভিযোগ। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত দফায় দফায় মারপিটের ঘটনা ঘটে। এতে ৩ জন গুরুতর আহত হয়। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে ফেলে রাখা হয়। সন্ধ্যার দিকে তারা মারা যায়। আস্তে আস্তে বিষয়টি আশেপাশের মানুষের কানে আসে। তাদের নেয়া হয় হাসপাতালে। হাসপাতালের ডা. আরিফ আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল ৩ কিশোরকে।
অবস্থা বেগতিক দেখে সংশোধন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানান। পরে রাত ৮টার দিকে ডিসি এসপি ও প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। দীর্ঘ প্রায় ৮ ঘণ্টা কেন বিষয়টি চেপে রাখা হল এর মধ্যে প্রকৃত রহস্য লুকিয়ে আছে।
সংঘর্ষ নয়, একপক্ষীয়
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে বের হয়ে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি একেএম নাহিদুল ইসলাম উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে মর্মান্তিক ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। আমরা যারা অপরাধ নিয়ে কাজ করি, তারা ঘটনার প্রায় ছয় ঘণ্টা পরে বিষয়টি অবহিত হয়েছি। যে কারণে মূল ঘটনা জানা জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যারা আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তারাই এ ঘটনার মূল সাক্ষী। মৃত্যুপথযাত্রী কেউই মিথ্যা কথা বলে না। তাদের কথার সত্যতা ও যৌক্তিকতা রয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানে তাদের বিষয় গুরুত্ব পাবে। ঘটনাটি সংঘর্ষ নয়, একপক্ষীয়।
সহকারী তত্ত্বাবধায়কসহ ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারি পুলিশ হেফাজতে
যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের অভ্যন্তরে হতাহতের ঘটনায় কেন্দ্রের সহকারী তত্ত্বাবধায়কসহ ১০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘ক’ সার্কেল মো. গোলাম রব্বানী শেখ। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাকিদের ছেড়ে দেয়া হবে।
সমাজসেবার তদন্ত কমিটি, মন্ত্রণালয়েরটা প্রক্রিয়াধীন
যশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের অভ্যন্তরে হতাহতের ঘটনায় দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে শুক্রবার। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম পিপিএম।
জানা গেছে, ঢাকা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পরিচালক সৈয়দ মো. নূরুল কবীর ও উপ-পরিচালক এস এম মাহমুদুল্লাহকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। কেন্দ্রের নৃশংস খুনের নেপথ্যের সকল সূত্র উদঘাটন করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক ও অন্যান্য কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে কোনরূপ উদাসীনতা, অবহেলা ও গাফিলতি ছিল কি না এবং কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততা আছে কী না তা খতিয়ে দেখতে হবে।
এদিকে, যশোর জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সমাজসেবা মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ার কথা, প্রক্রিয়াধীন।
আহতদের এন্তার অভিযোগ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে
যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের ঘটনায় আহত ১৪ জন ২৫০ বেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের এন্তার অভিযোগ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় ‘আহা উহু’ করছে আহত কিশোররা। তাদের কথা কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাই বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেছেন।
নিন্দার ঝড়
সংশোধনী কেন্দ্রের ঘটনায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) যশোর জেলা কমিটি মানববন্ধন করেছে শুক্রবার সন্ধ্যায়। এছাড়া বিভিন্ন মহল থেকে ঘটনার নিন্দা জানানো হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কেন্দ্রে সংশোধনের বদলে নির্যাতন করা হয়। বৃহস্পতিবারের ঘটনা স্রেফ হত্যাকান্ডকে মারামারি বলে চালানোর চেষ্টা চলছে। আমরা হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের শাস্তির দাবি করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (14)
Ahmed Saleh ১৫ আগস্ট, ২০২০, ৩:৪৩ এএম says : 1
এই সব কাজ পুলিশ কি করে করতে পারে ডিসি এসপি মত লোক যদি এই সব কাজে জড়িত থাকে তখন কি করে দেশে শান্তি আসবে। সরকার কে বিনিত অনুরোধ করতেছি ওসি,এসপি ডিসি সবাই কে অবসরে পাটান এর সাথে সাথে সন্পদের হিসাব নেন। নতুবা পুলিশের উপর জনগন এর আস্তা থাকবে বলে আসা করা যায় না। ওদের এত পাওয়ার কথোয় থেকে আসে ওদের বড় ভাই কে।
Total Reply(0)
Sunny Naz Ahmed ১৫ আগস্ট, ২০২০, ৩:৪৩ এএম says : 1
আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুন আল্লাহ
Total Reply(0)
Abdul Aziz ১৫ আগস্ট, ২০২০, ৩:৪৪ এএম says : 1
প্রায় সব সরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানোয়ার। ওদের মধ্যে কোন মনুষ্যত্ব নাই। আর নিয়ন্ত্রনহীন প্রতিষ্ঠান এগুলা ।
Total Reply(0)
Hafid Abdullah ১৫ আগস্ট, ২০২০, ৩:৪৪ এএম says : 1
দেশে কি ফাইজলামি শুরু হইছে। কোনো প্রতিষ্ঠান ঠিক ভাবে চালানোর যোগ্যতা নাই। কবরে একা যাবেন, হিসাব দেওয়া লাগবে। প্রস্তুত তো?
Total Reply(0)
Shahinalam Shahin ১৫ আগস্ট, ২০২০, ৩:৪৫ এএম says : 0
যে যেই কারণে করে থাকুক না কেনো,এটা খুবই জঘন্য অপরাধ।প্রকিত অপরাধিকে ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।
Total Reply(0)
Mafiz Pagla ১৫ আগস্ট, ২০২০, ৩:৪৫ এএম says : 0
তিনজন কি‌শোর‌কে পি‌টি‌য়ে হত‌্যা করা হ‌লো আর মন্ত্র মশায় ব‌লেন বিাচ্ছন্ন ঘটনা?
Total Reply(0)
Faruq Hossain ১৫ আগস্ট, ২০২০, ৩:৪৫ এএম says : 0
২ জন হত্যা মামলার এবং ১ জন ধর্ষণ মামলার আসামি। বেশির ভাগই বয়স কমিয়ে সেখানে যায় এবং বেরিয়ে এসে পুনরায় অপরাধে জরিয়ে পরে।বয়স কিভাবে কমায়,তদন্তে এটিও খুঁজে বের করতে হবে।
Total Reply(0)
Al Mamun Shamim ১৫ আগস্ট, ২০২০, ৩:৪৫ এএম says : 0
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে সংঘর্ষ নয়, বরং কর্মকর্তা ও আনসার সদস্যদের বেধড়ক মারধরে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
Total Reply(0)
Mohammad Asaduzzaman ১৫ আগস্ট, ২০২০, ৩:৪৬ এএম says : 0
এইসব প্লতিষ্ঠানের পরিচালক সহ যারা আছেন তারা শিশুকিশোরের বাজেটের চাল মাছ মাংস ডাল চুরি করে নিজ বাসায় নেয় , ভূয়া ভাউচারে বিল উঠায় , শিশু কিশোরদের দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করায় । শিশুরা অনেকে যৌণ নির্যাতনের শিকার হয় । ঐ প্রতিষ্ঠানের সবার চুরি অপরাধের তদন্ত হোক ।
Total Reply(0)
Md Mainuddin ১৫ আগস্ট, ২০২০, ৩:৪৬ এএম says : 0
মানুষ যখন নামাজ কায়েম, যাকাত প্রদান, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ ছেড়ে দেয়।তখন মানুষদেরকে বিভিন্ন মসিবৎ আর পেরেশান আগ্রাসীত হয়।
Total Reply(0)
Md Kamal ১৫ আগস্ট, ২০২০, ৩:৪৭ এএম says : 1
মেজর সিনহা হত্যা এখন, চলে গেছে, তিন কিশোর হত্যার ভিতর, আবার নতুন কোনো, হত্যা বা নতুন কাহিনি, ধামাচাপা দিবে কিশোর হত্যা, এভাবে একটার পর একটা ধামাচাপা দিতে দিতে, এ দেশ সিমান্ত ক্রস করে, ভারতের দিকে চলে যাবে, নতুন আরেকটা নাটকের অপেক্ষা, জয় বাংলা।
Total Reply(0)
Saleh ahmed ১৫ আগস্ট, ২০২০, ৫:১৭ এএম says : 1
কোন একটা গঠনার ও সুস্পষ্ট বিচার হচ্ছেনা তাই অপরাধ বাড়বেই।
Total Reply(0)
নাজমল হাসান ১৫ আগস্ট, ২০২০, ৭:১০ এএম says : 0
আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই এবং অপরাধীদের বিচার চাই
Total Reply(0)
habib ১৫ আগস্ট, ২০২০, ৯:২৯ এএম says : 1
awamleguer hate bangladesh nirapod nai....
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন