যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান বিরোধীদল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে জো বাইডেনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলটির চার দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় রাতে আনুষ্ঠানিক এ মনোয়ন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে অনলাইন নির্ভর এ সম্মেলনে সারা দেশ থেকে দলের প্রতিনিধিরা ভোট দিয়ে বাইডেনের প্রার্থিতা নিশ্চিত করেন। তিনি নির্বাচিত হলে মহামারী-বিক্ষত যুক্তরাষ্ট্রকে মেরামত করতে পারবেন এবং দেশে বিরাজমান বিশৃঙ্খলার ইতি ঘটাতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধিরা। ‘লিডারশিপ ম্যাটার্স’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত মঙ্গলবার রাতের অনুষ্ঠানে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জিমি কার্টারসহ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির উঠতি তারকাদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন সুপরিচিত রিপাবলিকান নেতাও যোগ দিয়েছিলেন। তারা সবাই বাইডেন হোয়াইট হাউসের বিশুদ্ধতা ও যুক্তরাষ্ট্রের জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। ক্লিনটন তার বক্তব্যে বলেছেন, রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প ওভাল অফিসে ‘বিশৃঙ্খলা’ নিয়ে এসেছেন। “ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন আমরা নাকি দুনিয়াকে নেতৃত্ব দিচ্ছি। এদিকে প্রধান শিল্প অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র আমাদেরই বেকারত্বের হার তিনগুণ হয়ে গেছে। এখনকার সময়ে ওভাল অফিসের হওয়ার কথা কমান্ড সেন্টার, তার বদলে হয়ে আছে স্টর্ম সেন্টার (ঝড়ের কেন্দ্র) । সেখানে কেবলই বিশৃঙ্খলা,” নিউ ইয়র্কের বাড়িতে রেকর্ড করা বক্তব্যে এমনটাই বলেছেন সাবেক এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সর্বশেষ জনমত জরিপগুলোতে ট্রাম্পকে বাইডেনের থেকে সামান্য পিছিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এর আগেও দুই বার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন; ১৯৯৮ ও ২০০৮ সালের ওই লড়াইয়ে শিঁকে না ছিড়লেও তৃতীয়বারে এসে সফল হলেন। ডেমোক্র্যাট কনভেনশনের দ্বিতীয় রাতে তার পক্ষে ভোট চান জর্জ ডব্লিউ বুশের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা কলিন পাওয়েলও। প্রভাবশালী এ রিপাবলিকান জুনে ট্রাম্পকে ‘মিথ্যাবাদী’ অ্যাখ্যা দিয়ে বাইডেনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন। “সাউথ ব্রঙ্কসে বেড়ে ওঠার সময় এবং সেনাবাহিনীতে কাজ করার সময় আমি যেসব ম‚ল্যবোধ শিখেছিলাম বাইডেনেরও তা আছে। হোয়াইট হাউসে ওই মূল্যবোধগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা প্রয়োজন,” বলেছেন তিনি। পাওয়েলের আগে ওহাইওর সাবেক গভর্নর জন ক্যাসিচসহ বেশ কয়েকজন রিপাবলিকানই বাইডেনের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইনের স্ত্রী সিন্ডি ম্যাককেইনও তার স্বামীর সঙ্গে বাইডেনের বন্ধুত্বের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তাকে অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে বাইডেনকে সমর্থন দিতে দেখা যায়নি। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি তার বক্তৃতায় ট্রাম্পের নেতৃত্বের কঠোর সমালোচনা করেন। “তিনি (ট্রাম্প) আমাদের মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করছেন, অন্যদিকে স্বৈরশাসকদের প্রেমপত্র লিখছেন। যুক্তরাষ্ট্র এমন একজন প্রেসিডেন্ট চায়, যার দিকে লোকজন তাকিয়ে থাকবে, হাসবে না,” বলেছেন তিনি। জো বাইডেনের স্ত্রী জিল বাইডেন স্বামীর পক্ষে ভোট চেয়ে বলেন, “যে বোঝা আমরা বহন করছি, তা ভারী। আমাদের একজনকে দরকার যার কাঁধ চওড়া।” মঙ্গলবার জর্জিয়ার সাবেক আইনপ্রণেতা স্টেসি আব্রাম এবং নিউ ইয়র্কের কংগ্রেসওম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজের মতো ডেমোক্র্যাট পার্টির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনামীয় নেতারাও কথা বলেন। দেড় মিনিটের বক্তব্যে ওকাসিও-কর্টেজ বাম ঘরানার ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। ‘স্কোয়াডের’ এ সদস্যকে বাইডেনের নামও উচ্চারণ করতে দেখা যায়নি। সিএনএন, বিবিসি, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন