নারীর উপর নির্যাতন করা, তাদের সম্ভ্রমহানী করাকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নিজেদের অধিকার মনে করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভোট ছাড়া ক্ষমতায় থাকাকে শেখ হাসিনা যেমন নিজের অধিকার মনে করে ঠিক তেমনি নারী নির্যাতন, নারীর সম্ভ্রমহানী করাকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নিজেদের অধিকার মনে করে। সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনার কয়েকদিন পরেই ঢাকায় ছাত্রলীগের মহানগরের সহ-সভাপতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে নারী নির্যাতনের অভিযোগে। এতো ঘটনার পরেও শনিবার আবারও সিলেটে আরেকটি নারীকে লাঞ্ছনা করা হয়েছে। কে করেছে? ছাত্রলীগের নেতা। তার মানে তারা প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ।
রোববার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘সারাদেশে নারী ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে’ মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, স্বাধীন দেশের মা বোনেরা নিরাপদ নয় কেন? এটার জন্য প্রতিবাদ করতে হচ্ছে শুধু রাজনৈতিক দল নয় সামাজিক সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠন রাস্তায় নেমেছে। কি ভয়ঙ্কর আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ঘটনা থামছেই না। আর সরকার চেষ্টা করছে একটি ঘটনাকে আরেকটি ঘটনা দিয়ে আড়াল করার। তনুকে সম্ভ্রমহানী করার পর হত্যা করা হয়েছিল, সেটিকে আড়াল করা হয়েছিল মিতুর ঘটনা দিয়ে। মিতুর ঘটনাকে আড়াল করা হয়েছিল ত্বকীকে হত্যার মধ্য দিয়ে। আর ত্বকির ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মধ্য দিয়ে, একটার পর একটা ঘটনা ঘটলেও সরকারের টনক নড়েনি।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, কারণটা কি জানেন? যে সরকার নীতি নৈতিকতা বিবর্জিতভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করে, যে দলের আদর্শ হচ্ছে নীতি-নৈতিকতা বিরোধী তাদের সোনার ছেলেরা তো এই সমস্ত অপকর্ম করবেই। আজকের যে সরকার ক্ষমতায় আছেন তার যে প্রধান আপনাদের মনে আছে না? এরশাদ যখন গণতন্ত্র হত্যা করল ২৪ মার্চ ১৯৮২ সালে। তখন কে বলেছিলেন আই এম নট আন হ্যাপি? তিনি আজকের প্রধানমন্ত্রী। লালদীঘির ময়দানে ১৯৮৬ সালে বললেন, যারা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় এসে বললেন আমরা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাচ্ছি এটা কি নীতি বিবর্জিত নয় নৈতিকতা বিরোধী নয়?
রিজভী বলেন, জামায়াত ‘মানবতাবিরোধী’ এই কথা বলতে বলতে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীদের গলায় ঘা হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী আপনি কি ভুলে গেছেন বিএনপি যখন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নয় বছর আন্দোলনের পর ক্ষমতায় আসলো আপনি সেই সরকারকে বলেছিলেন একদিন শান্তিতে থাকতে দেব না। তখন আপনি কোনো নীতির পরিচয় দিয়েছিলেন? পার্লামেন্ট শাসিত সরকারের প্রেসিডেন্ট হলেন আব্দুর রহমান বিশ্বাস। আপনারা সমর্থন দিলেন জাস্টিস বদরুল হায়দার চৌধুরীকে আপনি কি ভুলে গেছেন প্রধানমন্ত্রী? আপনি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে বলেছিলেন জামায়াতের আমির গোলাম আযমের কাছে গিয়ে দোয়া নিয়ে আসেন। এটাতো ইতিহাসের অংশ আমি বানিয়ে বলবো না। আপনি ১৯৯৫ সালে জামায়াতের সাথে আন্দোলন করেছেন এটা তো সবাই জানে মেনন-ইনু গোলাম আযম সবাই একসাথে বসে আন্দোলন করেছেন। আপনার নেতৃত্বেই সেই আন্দোলনে তখন আপনারা এমন কিছু নাই যা করেননি। জ্বালাও-পোড়াও মানুষ হত্যা পুলিশ হত্যা কোনোটাই আপনারা বাদ দেন সবটাই করেছেন নির্বিঘেœ। তারপরে আবার গণতন্ত্র হত্যা করা হলো মইন-ফখরুদ্দীনের দাঁড়া তখন আপনি বললেন এগুলো আপনার আন্দোলনের ফসল এটা হচ্ছে নৈতিকতা বিরোধী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, যে দল নীতি-নৈতিকতা মানে না তার সন্তানেরা কি নীতি-নৈতিকতা মানবে? তারা মানবে না তাদের কাছে লুটপাট নারীর সম্ভ্রমহানি এটা হচ্ছে ডাল ভাত এবং তারা সেটাই করছে যার দল যাদের মুরুব্বিরা নীতি-নৈতিকতা মানে না তারা কেন মানবে। সুবর্ণচর থেকে এমসি কলেজ আপনারা দেখুন কত নারীর আর্তচিৎকার আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে। কত নারী লাঞ্চিত হয়েছে? কতো নারীর সম্ভ্রমহানী হয়েছে? আজকে আকাশে বাতাসে সেই লাঞ্ছনা আর্ত চিৎকার শোনা যায় তারপরে কি তারা থামছে?
‘মানুষের পাশে কেউ নেই একমাত্র আওয়ামী লীগ আছে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, হ্যাঁ আওয়ামী লীগ তো আছেই! আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে আছে ওই যে, মানুষের জন্য করোনায় যে ত্রাণ দেয়া হয়েছে সেই ত্রান আত্মসাতের জন্য। সেই ত্রাণ পাওয়া যায় আওয়ামী লীগ নেতার খাটের নিচ থেকে মাটির ভেতর থেকে এই কারণেই আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে আছে। কিন্তু মানুষের দুঃখ-দুর্দশা করোনায় মানুষের আক্রান্ত হওয়া কোন স্বাস্থ্যসেবা নেই মানুষ হাহাকার করছে।
রিজভী বলেন, ঢাকা শহরেই ৬৮ শতাংশ মানুষ কর্মহীন মানুষের কর্ম নাই এর সমস্ত অবদান শেখ হাসিনার। আর তিনি বলেন কিনা আওয়ামী লীগ আছে মানুষের পাশে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে আছে ঠিক এই ত্রাণ আত্মসাতের জন্য আছে লুটপাটের জন্য। আছে টাকা লুটপাটের জন্য আছে কিন্তু মানুষকে প্রকৃত সেবা দেওয়ার জন্য নেই।
ছাত্রলীগ-যুবলীগের ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে গ্রামে গ্রামে পাড়ায় পাড়ায় তাদের বিরুদ্ধে কমিটি গঠন করতে হবে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের হাত থেকে মা বোনকে বাচানোর জন্য সবাইকে আজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যের ইশারায় আজকে আওয়ামী লীগ স্বাধীন দেশকে দখল করে আজকে অনাচার করছে লুটপাট করছে। তাই জনগণের রক্ত ছাড়া জনগণের ব্যারিকেড ছাড়া মানুষের মুক্তি নেই।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, কৃষকদলের শাহজাহান মিয়া সম্রাট, সাবেক মন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলের কন্যা অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন