ফিলিস্তিনের প্রাথমিক ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা ‘আরব সম্পত্তি লুট করেছে’ উল্লেখ করে ইসরাইলের এক ঐতিহাসিকের একটি নতুন বই বলেছে, সে সমসয় ‘কর্তৃপক্ষ অন্ধ হয়ে থেকেছে’।
‘এ যাবতকালের প্রথম বিস্তারিত অধ্যয়ন’ হিসাবে বর্ণিত ইসরাইলি ইতিহাসবিদ অ্যাডাম রাজের গবেষণায় বলা হয়েছে ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি এবং তাদের বাড়িঘরে ইহুদিদের গোষ্ঠী হামলার সময় ‘ইহুদিরা কী পরিমাণ আরব সম্পত্তি লুট করেছিল’ এবং ব্যাখ্যা করা হয়েছে কেন বেন-গুরিয়ন বলেছিলেন ‘ইহুদিদের বেশিরভাগই চোর’।
রাজের বইয়ের ওপর হারেৎজ-এ লেখা ওফার অ্যাডেরেটের পর্যালোচনার শিরোনাম ছিল: ‘ইহুদি সৈন্য এবং নাগরিকরা আরব প্রতিবেশীদের সম্পত্তি লুট করে ’৮৪ সালে। ‘কর্তৃপক্ষ অন্ধে পরিণত হয়েছিল’।
হারেৎজের অপর প্রবীণ লেখক, গিডিওন লেভি মন্তব্য করেন যে, ‘বেশিরভাগ ইহুদীই চোর’ একথা ‘বিরোধী নেতা, ইহুদিবিদ্বেষী বা নব্য-নাজির মুখ থেকে উচ্চারিত হয়নি, বরং ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা এটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দুই মাস পরে বলেছিলেন’।
লেভি বলেন, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ ‘অন্ধ হয়ে ছিল এবং এভাবে সমস্ত নিন্দা, ভন্ডামি এবং কয়েকটি হাস্যকর বিচারের পরেও লুটপাটকে উৎসাহিত করেছিল’। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘এ লুটপাট একটি জাতীয় উদ্দেশ্য হিসাবে কাজ করেছিল: এর আরব নাগরিকদের বেশিরভাগের জাতিগত নির্মূল দ্রুত সম্পন্ন করা এবং এটি নিশ্চিত করার জন্য যে, ৭ লাখ শরণার্থী কখনও যেন তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার কল্পনাও করতে না পারে।
ইসরাইলি লেখক আরও বলেন, ‘ইসরাইল এর আগেও অধিকাংশ বাড়িঘর ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং ৪শ’রও বেশি গ্রামকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলতে পেরেছিল, এগুলো খালি করার জন্য গণ-লুটপাট চালিয়েছিল যাতে শরণার্থীদের ফিরে আসার কোনও কারণ না ঘটে’।
লেভি আরও যোগ করেন, ‘প্রায় সবাই লুটপাটে অংশ নিয়েছিল, যা ছিল এক ছোট্ট ধরনের লুটপাট, যা কেবলমাত্র এক মুহূর্তের জন্য প্রমাণ করেছিল যে, ‘বেশিরভাগ ইহুদি চোর, যেমনটা ইসরাইলে প্রতিষ্ঠাতা বলেছিলেন’। তবে সম্পত্তি, ঘরবাড়ি, গ্রাম ও শহরগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক লুটপাটের তুলনায় এটি ছিল মিনি-লুটপাট।
ইহুদি স¤প্রদায়ের প্রধানরা ফিলিস্তিনে আরব সম্পত্তি লুটপাট করার অনুমতি দেয়ার অন্যতম কারণ ছিল ‘অস্বীকার ও দমন’। তিনি বলেন, ‘কঠিন যুদ্ধের পরে প্রতিশোধ এবং মাতাল হয়ে জয়ের সাথে তৃষ্ণার্ত সম্ভবত অনেকের অংশগ্রহণ ব্যাখ্যা করতে পারে, এমনকি আংশিকভাবেও’।
লেভি বলেন যে, ‘এই লুটপাট কেবল ক্ষণিকের মানবিক দুর্বলতাই প্রতিফলিত করে না বরং এটি একটি স্পষ্ট কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে - এর বাসিন্দাদের থেকে দেশকে শুদ্ধ করতে’।
তার নিবন্ধটি শেষ করে লেভি বলেন, ‘কেউ যদি বিশ্বাস করে যে, এ কাজের জন্য যথাযথ প্রায়শ্চিত্ত এবং ক্ষতিপূরণ ছাড়াই কখনও কোনও সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে, সে বিভ্রান্তিতে বাস করছে’।
তিনি ইসরাইলকে ‘ইসরাইলি আরবদের বংশধর, ফিলিস্তিনি শরণার্থী, যারা আমাদের সাথে এবং আমাদের পাশে বাস করছেন তাদের অনুভ‚তি সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করতে বলেন। তারা ছবিগুলো দেখে এবং এসব পড়ে, তাদের মনের অবস্থা কী হতে পারে’? তিনি জবাবে বলেন, ‘তারা কখনই তাদের পূর্বপুরুষদের গ্রামগুলো দেখতে পাবে না: ইসরাইল তাদের বেশিরভাগ অংশ ভেঙে ফেলেছে এবং খন্ড খন্ড করে ফেলেছে। তিনি আরো বলেন, ঘর থেকে চুরি যাওয়া এক টুকরো স্মৃতিচিহ্নও অশ্রু নির্গত হওয়ার কারণ হতে পারে। সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন