দেশ পরিচালনায় এবং জনসমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়ে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে প্রতিনিয়ত সরকারের মন্ত্রীরা বিএনপি’র বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক কথা বলছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি’র কর্মকা- শুধুমাত্র ফেসবুক বা ভার্চুয়াল আলোচনায় সীমাবদ্ধ নয়, বিএনপি জনগণের দল। জনগণের প্রতিটি সমস্যা নিয়ে বিএনপি কাজ করছে, কথা বলছে, সরকারী শত নির্যাতনের মাঝেও রাজপথে আছে। বরং সরকারের মন্ত্রীরা বাড়ীর ড্রইংরুমে বসে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এসব প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
দফতরের চলতি দায়িত্বে থাকা এই নেতা বলেন, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ দেশের জনপদে এসে ধাক্কা খাচ্ছে অথচ সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই। সারাদেশে করোনা টেস্ট হচ্ছে না বললেই চলে। সরকারের মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপি’র বিরুদ্ধে মিথ্যাচার না করে করোনার দ্বিতীয় ধাপ মোকাবেলায় নজর দিন। প্রথম ধাপের মতো একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত না নিয়ে সকল রাজনৈতিক দল, বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসকদের মতামত আমলে নিয়ে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণকে রক্ষায় তাদের পাশে দাঁড়ান।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, জনগণের কাছ থেকে দেশের মালিকানা কেড়ে নিয়ে নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে মাস্তানতন্ত্র কায়েম করা হয়েছে। যেখানে কোন শ্রেণী-পেশার মানুষের জীবনের নিরাপত্তা এবং সম্মান নেই। ক্ষমতাসীনদের লাগামহীন ব্যর্থতা, দুর্নীতি, লুটপাট, দখল, সন্ত্রাস, অনিয়ম ও অনাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই বা সত্য কথা লিখলেই রাষ্ট্রীয় ও দলীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হত্যা, গুম, অপহরণ, নির্যাতন, মামলা, গ্রেফতারসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন চলছে।
সাংবাদিক সারোয়ার অপহরণ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, উদ্ধারের সময় ধারণকৃত গোলাম সারোয়ারের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেখানে তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বারবার বলছিলেন ‘আমাকে মাইরেন না, আমি আর নিউজ করবো না’। সাংবাদিক গোলাম সারোয়ারকে অপহরণ করা হয়েছিল পেশাগত কারণেই। অপহরণের পর সন্ত্রাসীরা তাকে নির্যাতনের সময় আর নিউজ না করার অঙ্গীকার আদায়ে বারবার চাপ দিয়েছিল। তার এই আকুতি, সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন এবং স্বাধীন ও সাহসী সাংবাদিকতার কন্ঠরোধে ভয়াবহ মধ্যযুগীয় বর্বরতার বাস্তব প্রমান। গণমাধ্যমের সার্বিক বর্তমান ভয়াবহ অবস্থার প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠেছে সাংবাদিক গোলাম সারোয়ারের আর্তনাদে। গোলাম সারোয়াকে অপহরণ করা হয়েছিল ক্ষমতাসীন প্রভাবশালীদের জমি দখল, অনিয়ম, দুর্নীতি, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সত্য সংবাদ প্রকাশের জন্য। এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি স্বাধীন মত প্রকাশের ওপর ক্ষমতাসীনদের দমন-পীড়নেরই ধারাবাহিকতা।
বিএনপির এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা পেশাকে প্রচ্ছন্ন হুমকির মুখে ফেলা দেয়া হচ্ছে, পাশাপাশি মাস্তানতন্ত্রের স্টেক হোল্ডারদেরকে সত্য প্রকাশে বাধাসহ দমন-নিপীড়ণে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সাংবাদিক নির্যাতন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আশাক) এর হিসেবে এ বছরের প্রথম ৯ মাসে রাষ্ট্রীয় ও ক্ষমতাসীন দলীয় বাহিনী দ্বারা ২০৯ জন সাংবাদিককে হুমকি, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। খবর প্রকাশের জন্য ৮১ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সত্য মত প্রকাশ দমনে ক্ষমতাসীনদের আরেক হাতিয়ার নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ অন্যান্য আইনে মামলা হয়েছে। হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে ২৩ জন সাংবাদিককে। নিহত হয়েছেন ১ জন সাংবাদিক। এসবের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশী বলে জানা যায়। বিশ^মুক্ত সাংবাদিকতা তালিকায় বিশে^র ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ১৫১তম অবস্থান প্রমান করে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আজ ক্ষমতাসীনদের যাঁতাকলে পিষ্ট। দেশে গণতন্ত্রের কি বেহাল অবস্থা তা দেশবাসী জানে। সরকারবিরোধীদের জন্য রাজনীতি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ভোটারদের স্বাধীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে পছন্দ মতো জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করে দিয়ে গণতন্ত্রের কফিনের শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া হয়েছে।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা: সংবাদ সম্মেলনে প্রিন্স ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে একদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঘোষিত কর্মসূচি হচ্ছে- ওইদিন নভেম্বর ভোর ৬টায় বিএনপির নয়াপল্টনসহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১১টায় শেরে বাংলা নগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা, দুপুর ১২টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, সাড়ে ১২টায় মহানগর উত্তর ও অঙ্গসংগঠনের পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং বিকাল তিনটায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভা। একইভাবে জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা পর্যায়ে কমিটির উদ্যোগে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি পালন করবে। দিবসটি উপলক্ষে পোস্টার প্রকাশ করছে বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য একেএম আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন