৭০টি দরিদ্র দেশ ধনী দেশগুলোর দৌরাত্ম্যে করোনার টিকা পাবে না কয়েক বছরেও।পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত ও ধনী দেশগুলো ইতোমধ্যেই করোনার সম্ভাব্য টিকাগুলোর ৫৩শতাংশ আগাম ক্রয়ের বরাত দিয়ে রেখেছে, যেখানে কিনা এই দেশগুলোর জনসংখ্যার হার বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৪শতাংশ। টিকা জাতীয়তাবাদের কারণে ২০২১ সালে বিশ্বের জনবহুল ৭০টি নিম্ন আয়ের দেশগুলোর ১০ জনের মধ্যে ৯জন বাসিন্দাই করোনার টিকা থেকে বঞ্চিত হবেন। -দ্য গার্ডিয়ান, আল জাজিরা, বিবিসি
এমন পিলে চমকানো তথ্য জানিয়েছে পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ফ্রন্টলাইন এইডস, গ্লোবাল জাস্টিস নাউ এবং অক্সফামের মতো সংস্থাগুলোর সমন্বিত জোট পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স জানায়, ‘ধনী দেশগুলো যে পরিমাণ টিকা ক্রয় করেছে তা দিয়ে একজন নাগরিককে ৩ বারের বেশি করে টিকা দেয়া যাবে। অন্যদিকে দরিদ্র দেশগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ও স্বাস্থকর্মীদের দেয়ার জন্যই পর্যাপ্ত টিকা পাবে না। সংস্থাটি জানায়, কানাডা দেশটির মাথাপিছু মোট জনসংখ্যার চেয়েও অত্যাধিক পরিমাণ টিকার ডোজ আগাম ক্রয় করে রেখেছে। যা দিয়ে কিনা প্রত্যেক কানাডিয়ানকে ৫ বার করে টিকা দেয়া যাবে। আরেক উন্নত দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ৫ কোটি জনসংখ্যার জন্য ৮৮ শতাংশ টিকা ক্রয় করে রেখেছে। অক্সফামের স্বাস্থ্য নীতি বিষয়ক ব্যবস্থাপক আনা ম্যারিয়ট বলেন, ‘নির্দিষ্ট দেশে বসবাস কিংবা পকেটে টাকার কারণে কারোরই জীবনরক্ষাকারী এই টিকা থেকে বঞ্চিত থাকা উচিত নয়। পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন না হলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ আগামী কয়েক বছরে নিরাপদ ও কার্যকরী টিকা পাবেন না।’
গত সপ্তাহে ব্রিটেনে অনুমোদন পাওয়া মার্কিন ফার্মা ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেকের টিকার ৯৬শতাংশ ডোজই পশ্চিমা বিশ্বের ধনী দেশগুলো ক্রয় করে রেখেছে। আরেক মার্কিন প্রস্তুতকারক সংস্থা মর্ডানার টিকার বেশিরভাগ ডোজই যাবে ধনী দেশগুলোতে। এই দুটি সংস্থার টিকার মূল্য এবং অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণের জটিলতার কারণে নিম্নআয়ের দেশগুলো এই টিকাগুলো ক্রয় ও সরবরাহ করতে হিমশিম খাবে। তবে অক্সফোর্ড বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা সাধারণ ফ্রিজের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে এবং টিকার বৈশ্বিক প্রবেশের কথা বিবেচনা করে এর মূল্যও শিথিল রাখা হয়েছে। এই সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের টিকার ৬৪ শতাংশ ডোজই যাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।
সবার জন্য টিকা নিশ্চিতকরণ কর্মসূচীর প্রচারকরা অক্সফোর্ডের নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, একটি সংস্থার টিকা বিশ্বজুড়ে সরবরাহ করতে পারবে না। আগামী বছরে অক্সফোর্ড বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বিশ্বের মাত্র ১৮ভাগ মানুষের কাছে পৌঁছাবে। তাই প্রত্যেক উৎপাদনকারী সংস্থাকেই এগিয়ে আসতে হবে। তারা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে টিকা উৎপাদন প্রযুক্তি ভাগাভাগি করার আহ্বান জানান, যা বাস্তবায়ন হলে নিম্নআয়ের ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর কোটি কোটি মানুষ সাধ্যের মধ্যে টিকা গ্রহণ করার সুযোগ পাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন