জবি সংবাদদাতা : কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিত্যক্ত জায়গায় আবাসিক হল নির্মাণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে মিছিলে পুলিশের বাধার প্রতিবাদে আজ ও কাল (বুধবার) ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদানে ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে যাত্রা শুরু করলে দফায় দফায় পুলিশি বাধার মুখে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের মধ্যে কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল, স্থানীয় সুমনা ও ন্যাশনাল মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা যায়। এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাটিচার্জ করার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও সমাজতান্ত্রিক দল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে পুরান ঢাকায় সদরঘাট থেকে গুলিস্তানসহ আশপাশের রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুরান ঢাকার ও আশপাশ এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
আবাসিক হল নির্মাণের দাবিতে গত ১ আগস্ট থেকে টানা আন্দোলনে নামেন জবির শিক্ষার্থীরা। সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়ার পরও আন্দোলনের কোনো সুফল পাননি এসব শিক্ষার্থী। সোমবার সকাল ৮টা থেকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে জড়ো হন। তারা মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের স্ব-স্ব বিভাগে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলনে যোগ দেন। পরে সকাল সাড়ে ৯টায় সর্বস্তরের শিক্ষার্থী বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শুরু করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাঁতিবাজার, রায়সাহেব বাজার, নয়াবাজারে ৩ দফা পুলিশি বাধা অতিক্রম করেন। সর্বশেষ মিছিলটি বংশাল মোড়ে পৌঁছলে পুলিশ টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও জলকামান নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করে। এতে অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এর মধ্যে কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি এড়িয়ে শিক্ষার্থীরা বংশাল থেকে নয়াবাজার এসে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় আবাসিক হলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা টায়ার জ্বালিয়ে এবং দেয়ালে বিভিন্ন লেখনির মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ভিসির প্রত্যক্ষ ইন্ধনে পুলিশ আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
এ বিষয়ে পুলিশের লালবাগ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান বলেন, আমরা একে একে শিক্ষার্থীদের সামনে ৩টি ব্যারিকেড দিয়েছি। তারা এ বিষয়টি বিবেচনা না করে উল্টো বাধা অতিক্রম করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যেতে চেয়েছে। এদিকে ২১ দিন ধরে নানা উপায়ে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। গত দুই দিন ধরে ধর্মঘট পালনের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জানান, প্রশাসন কোনো হল আন্দোলনের দাবি ওঠার সাথে সাথে একাধিক কমিটি গঠন করেন। কিন্তু কোনো কমিটি আজ অবধি কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি।
ধর্মঘটের ডাক : আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বেলা ২টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আজ এবং কাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসসিক কাজসহ সকল ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হবে বলে জানান। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য বা ঘোষণা না আসা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এ ন্যায্য আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দেন তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন