বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

জেফ বেজোস, বিল গেটস নয়, সর্বকালের শীর্ষ ধনী ছিলেন মুসলিম যুবক মানসা মুসা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:১৩ এএম

বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের নাম জিজ্ঞাসা করলেই আমরা সবার আগে বলি ইলন মাস্ক, বিল গেটস, জেফ বেজোসের কথা। তবে মজার বিষয় হলো তারা কেউই সর্বকালের শীর্ষ ধনী নয়। শীর্ষ ধনী যদি বলতেই হয় তাহলে তিনি হলেন ১৪ শতকের পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির এক শাসক যার নাম মানসা মুসা।

মানসা অর্থ রাজা বা সম্রাট। এটি তার উপাধি। মুসার পুরো নাম ‘প্রথম মুসা কিতা’। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির সুলতান হওয়ার কারণে তাকে মানসা খেতাবে ভূষিত করা হয়। মানসা ছাড়াও কমপক্ষে আরও ডজনখানেক উপাধি ছিল তার। তাকে প্রথম মুসা, মালির আমির, ওয়াংগারা খনির সম্রাট, কনকান মুসা/কানকো মুসা, মালির সিংহ, গঙ্গা মুসা ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়।

জানা গেছে, মুসার জন্ম ১২৮০ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ছিলেন মালি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সান্দিয়াতা কিতার ভাগ্নে। তার বড় ভাই আবু-বকরের পর মুসা মালির রাজা হন ১৩১২ খ্রিস্টাব্দে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩২ বছর। এ বয়সেই তিনি পৃথিবীর বড় একটা অংশের সম্রাট ছিলেন। তিনি প্রথম আফ্রিকান শাসক, যিনি ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিলেন।
২০১২ সালে মার্কিন ওয়েবসাইট সেলিব্রিটি নেট ওয়ার্থের হিসাবে আজকের বাজারে আনুমানিক ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের মালিক ছিলেন মুসা। মজার বিষয় হচ্ছে ২০২০ সাল নাগাদ বেজোসের সম্পদের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার কোটি ডলার।

১৪ শতকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী তিনটি অঞ্চলের একটি ছিল পশ্চিম আফ্রিকার মালি সাম্রাজ্য। কারণ পুরো দুনিয়ায় যত সোনা উত্তোলন এবং লবণ আহরণ হতো তার অর্ধেকটাই হতো মালি থেকে। পৃথিবীর সেই অর্ধেক সোনার মালিকানাই ছিল একজন মানুষের কাছেই! এই সোনা আর লবনের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন মানসা মুসা।
মুসার বিশাল সাম্রাজ্য থেকে নিয়মিত খাজনা সংগ্রহ করতেন তিনি। তার সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল আটলান্টিক মহাসাগরের তীরবর্তী পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ভূমধ্যসাগরের তীর পর্যন্ত উত্তর আফ্রিকার মধ্যবর্তী এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক পথ। এই পথে বাণিজ্য করতে আসা মধ্যপ্রাচ্য আর ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও রাজস্ব আদায় করতেন দক্ষ এই শাসক। এভাবেই দিনে দিনে তার সম্পদ, ঐশ্বর্য বেড়ে যায়।

সম্পদ অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। কিন্তু মুসার সম্পদ এবং সাম্রাজ্য দুটোই রক্ষা করার জন্য ছিল বিশাল এক বাহিনী। অনেকটা আজকের দিনের সেনাবাহিনীর মতোই। তার এই বাহিনীর সদস্য ছিল দুই লাখ! যার মধ্যে ৪০ হাজার সৈন্য ছিলেন তীর চালনায় অতি দক্ষ।

মানসা মুসার জীবনও ছিল বেশ ব্যয়বহুল। ১৩২৪-২৫ সালে তিনি হজ করতে গিয়েছিলেন। ওই সময় তার সঙ্গে ছিল ৬০ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে ১২ হাজার ছিল সেবক। এসব সেবকের প্রত্যেকের সঙ্গে ছিল একটি করে সোনার বার। এছাড়া ৮০ থেকে ১০০টি উট ছিল বহরে, যেগুলো প্রত্যেকটি প্রায় ১৪০ কেজি করে সোনা বহন করছিল। যাত্রাপথে কয়েকশ কোটি টাকা মূল্যের সোনা বিতরণ করেন তিনি।

বলা হয়ে থাকে, ওই হজে মুসা আজকের দিনের প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড ওজনের সোনা ব্যয় করেছিলেন। যে কারণে এর পরের কয়েক বছর কায়রো, মক্কা এবং মদিনায় সোনার দাম একেবারেই নেমে গিয়েছিল। এতে অবশ্য শহরগুলোর অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বেড়ে গিয়েছিল মুদ্রাস্ফীতি।

মুসার এই হজ-যাত্রায় সঙ্গী হন তার প্রথম স্ত্রী। এছাড়া নিযুক্ত ছিলেন আরো ৫০০ সেবিকা। কাফেলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষক, চিকিৎসক, সরকারি কর্মকর্তা ও সংগীতশিল্পীও ছিলেন। কথিত আছে, প্রতি জুমাবারে একটি করে মসজিদ নির্মাণ করতেন তিনি। মক্কায় হজ পালনের পর আরব বিশ্বের একটি বড় অংশ ঘুরে বেড়াতে থাকেন এই পশ্চিম আফ্রিকান শাসক।

টানা ২৫ বছর মালি শাসন করে ১৩৩২ সালে মৃত্যুবরণ করেন বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে ধনী এই ব্যক্তি। তবে তার মৃত্যুর সঠিক কোনো কারণ এখন উদ্ধার করতে পারেননি ইতিহাসবিদরা। মৃত্যুর সাল নিয়েও আছে বিতর্ক। ইতিহাসবিদ ইবনে খালদুনের মতে, কমপক্ষে ১৩৩৭ সাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন তিনি। ওই বছরই আলজেরিয়া বিজয়ে সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিলেন মুসা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Mohammad Raju ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১০:৪৫ এএম says : 0
প্রকৃত অর্থে আমরা বর্তমানে শীর্ষ ধনী হিসাবে দেখি তারা আসলে ধনী নয়,,, আরব দেশ গুলোর মধ্যে যে পরিমাণ ধনী ব্যাক্তি বর্গ রয়েছে তা যদি তারা প্রকৃত অর্থে প্রকাশ করে তা শনলে সবার কাপালে উঠে যাবে
Total Reply(0)
Mishu Islam ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১০:৪৫ এএম says : 0
মুসলমান রা শীর্ষ ধনী হয় না কারন তারা নিজের অর্থের নিদিষ্ট অংশ গরীবদের দিয়ে দেয় প্রতি বছর।
Total Reply(0)
Md Shahid ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:৪৯ পিএম says : 0
কিসের সাথে কি? দেশের রাজা ছিল। তাই সোনার খনি সহ যাবতীয় সব সম্পদের মালিক হয়েছিল। গেটস, বেজোসরা নিজেদের মেধা, শ্রমে সম্পদ গড়েছে।
Total Reply(0)
Maruf Syful ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:৪৯ পিএম says : 0
ধনি মুসলিমের জন্য যাকাত, ফেতরা সাহায্য ফরজ, একমাত্র মুসলিমরাই বাধ্যতামূলক দান করে
Total Reply(0)
Ali Hossain ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:৫০ পিএম says : 0
In the 15th century, The Indian Emperor Shah-Jahan was the richest man in the world. Five crore Indian Rupees were spent to build the Throne of Emperor Shah-Jahan. Known as the Peacock Throne.
Total Reply(0)
Sahid hossain ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৩৮ পিএম says : 0
Nice
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন