মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অভিন্ন নদী শাসন

দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে কাহিল ধ্বংস হচ্ছে কৃষি শিল্প-বাণিজ্য পরিবেশ জীববৈচিত্র্য

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী ও জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। দেহের রক্তের শিরা-উপশিরার মতো বাংলাদেশের নদী ধাবমান। নদীদেহের অবস্থা দিনে দিনে কাহিল হয়ে পড়ছে। মানুষের জীবন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, সভ্যতা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সাথে বলিষ্ঠ ও নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে নদ-নদীর। সমুদ্রে পানির উচ্চতা বাড়ছে। জলবায়ু ও

ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবছর উপক‚লীয় অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে।
মাটিরতলার পানিসম্পদ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। বৃহত্তম সেচপ্রকল্প বরেন্দ্র, তিস্তা ও জিকে মারাত্মক হুমকির মুখে। ভূপৃষ্ঠের পানি সঙ্কটে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ পড়ছে। ভারত গঙ্গা, তিস্তা, গোমতি, ধলেশ্বর, ইছামতি, কোদলা ও বেতাইসহ ৫৪টি নদীকে অভিন্ন নদী তালিকাভুক্ত ছিল।

নদী কমিশনের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) ৫৪টির সাথে চেলা, লূভা, লোহা, কামঝরা ও খাসিমারাসহ আরো ১০টি নদীকে আনুষ্ঠানিকভাবে তালিকা করে। নদীগুলোর বেশিরভাগই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মেঘালায় ও আসাম থেকে আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যৌথ ব্যবস্থাপনায় কোনটিরই ফলদায়ক কোন ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। পানির প্রতিবন্ধকতার ব্যাপারেও কোন সুরাহা হয়নি।

সূত্র জানায়, ভারত একতরফাভাবে আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে অভিন্ন নদী শাসন করে আসছে বহুদিন ধরে। নদ-নদীর অসংখ্য শাখা-প্রশাখার উৎস অভিন্ন নদ-নদী। এতে ভাটি অঞ্চলের দেশ বাংলাদেশের জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। নদ-নদীতে মাইলের পর মাইল চর জেগেছে। পদ্মার শাখা নদ-নদীর অবস্থা খুবই করুণ। উর্বর জনপদ হুমকির মুখোমুখি। সবুজ ঘেরা প্রান্তর হচ্ছে বিবর্ণ। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও ঈশ্বরদী পয়েন্টে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে দাঁড়ানো ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ ভেড়ামারার মোশাররফ হোসেনের কাছে পদ্মার কী অবস্থা জিজ্ঞাসা করতেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বললেন, ‘পদ্মার আর খোঁজ নিয়ে কী হবে? পদ্মা তো প্রায় শেষ। বাঁচার কোন পথই নেই। পদ্মায় পানি নেই, আছে শুধু বালু আর বালু।

পানি প্রতিবন্ধকতায় বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। ঘটছে ষড়ঋতুর পরিবর্তন। আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণে পরিবেশবিদগণ উদ্বিগ্ন। তাদের কথা, মারমুখী ও বিপজ্জনক হচ্ছে পরিবেশ। এতে, কৃষি, মৎস্য সম্পদ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের কথা, দেশের নদ-নদীর পানি বঙ্গোপসাগরে পড়ার স্বাভাবিক ধারা হয়েছে অস্বাভাবিক। স্রোতহীন নদীর পানি একরকম চুইয়ে পড়ার মতো অবস্থার কারণে লবণাক্ততা গ্রাস করছে। ভ‚মি গঠনেরও পরিবর্তন ঘটছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও নদী বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগরের সাথে যুক্ত সুন্দরবনের নদ-নদীর পানির প্রবল তোড় কমে গেছে। স্রোতহীন নদ-নদীর কারণে সমুদ্র উত্তপ্ত হচ্ছে।

নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় লবনাক্ততা গ্রাস করছে নতুন নতুন এলাকা। উদ্ভিদ, প্রাণীকুল, জলজ, বনজ ও মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে অপুরণীয়। পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় নদ-নদীর তলদেশ পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে বর্ষা মৌসুমে বন্যা আর শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য পড়ছে হাহাকার। বর্তমানে মাঠে মাঠে চলছে সেচনির্ভর বোরো আবাদ। চৈত্র মাস না আসতেই পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। সেচ নিয়ে শংকা বাড়ছে বোরো চাষিদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন