শ্রমিক-কর্মচারীদের ১৪ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে সারাদেশ অচল
ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতে শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হলো ২৪ ঘণ্টার শ্রমিক ধর্মঘট। দেশটির প্রায় সব প্রধান শ্রমিক সংগঠন একযোগে এ ধর্মঘটের ডাক দেয়। গত শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোর ৬টা থেকে শুরু হয় ২৪ ঘণ্টার ওই ধর্মঘট। বেতন-ভাতা বাড়ানোসহ ১৪ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১১টি ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশন সারাদেশ অচল করে দেয়ার ঘোষণা দিলে অফিস-আদালতসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিকবিরোধী নীতির প্রতিবাদে এই ধর্মঘটের ডাক দেয় বলে খবরে বলা হয়েছে। শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, ১৮ কোটিরও বেশি শ্রমিক-কর্মচারী এই ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে। ভারতজুড়ে ব্যাংকিং, কয়লা এবং পরিবহন খাতসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয় এই ধর্মঘটে। এছাড়া পৃথকভাবে ধর্মঘট করেছে ভারতের নার্স ও রেডিওলজিস্টরা। তারাও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট করেছে। প্রায় দুই বছর আগে ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদি সরকারের জন্য অর্থনৈতিক খাতে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এটি। শেষ মুহূর্তে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েও ধর্মঘট ঠেকাতে পারেনি তারা। ট্রেড ইউনিয়নগুলোর যৌথ প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক তপন সেন বলেন, গত বছরের তুলনায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। কলকারখানা বন্ধ হচ্ছে, লোকজন কাজ হারাচ্ছে, বেতন কমছে এবং সবচেয়ে বড় কথা, সরকারি মদদে শ্রম আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। ফলে গতবার যেখানে ১৫ কোটি শ্রমিক ধর্মঘটে যোগ দিয়েছিল, এবার সেই সংখ্যাটা আরো বেশি বলেই আমাদের বিশ্বাস। প্রসঙ্গত, গত বছরও ঠিক এই তারিখেই ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার একতরফাভাবে শ্রম আইনে সংস্কার চালাচ্ছে এবং শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা ছাঁটাই করছেÑ এই অভিযোগেই ধর্মঘটের ডাক দেয় তারা। বার্তা সংস্থাগুলো জানায়, শুক্রবার ধর্মঘট শুরু হওয়ার পর ভারতের সবগুলো ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে এটিএম বুথগুলো খোলা থাকায় জনসাধারণ সেখান থেকে অর্থ তুলতে পেরেছে। বাম শাসিত কেরালা রাজ্যের সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ ও গণপরিবহন বন্ধ ছিল। কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকারও ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়ে রাজ্যের স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছিল। তবে রাজধানী দিল্লিতে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। এর পাশাপাশি বাণিজ্যিক নগরী মুম্বাইয়ে অভ্যন্তরীণ ট্রেন চলাচলও স্বাভাবিক ছিল। এদিকে, পশ্চিমবঙ্গে ধর্মঘটের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। রাজ্যটিতে সকাল থেকেই ট্রেন-বাস-ট্যাক্সি-অটোরিকশা চলাচল স্বাভাবিক ছিল। এই ধর্মঘট দেশে আর্থিক সংস্কারের প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারেÑ এই আশঙ্কায় ভারত-বন্ধ ঠেকানোর জন্য শেষ মুহূর্তেও চেষ্টা চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ধর্মঘট শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য বাড়তি সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি জানিয়েছিলেন, সরকার শ্রমিকদের ন্যূনতম পারিশ্রমিক হিসেবে দৈনিক ৩৫০ রুপি নির্ধারণ করেছে। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের সব নিচুতলার কর্মীদের গত দুই বছরের বকেয়া বোনাসও অবিলম্বে মিটিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা বলেছিলেন তিনি। তবে বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, শেষ মুহূর্তে সরকারের ওইসব প্রতিশ্রুতি শ্রমিকদের সঙ্গে ধোঁকাবাজি। তপন সেন বলেন, এই ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর ঘোষণায় কেন্দ্রের ৭০ লাখ কর্মচারী উপকৃত হবেন না। আর আমরা আইনসঙ্গতভাবে দেশের ৪০ কোটি শ্রমিক-কর্মচারীর ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর কথা বলছি। তিনি আরো বলেন, সরকারের ঘোষণা আসলে দেশের শ্রমিকদের সঙ্গে অতি নিম্নমানের একটা প্রতারণা মাত্র! বিবিসি, এনডিটিভি, টাইমস অব ইনডিয়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন