আল্লাহর সৃষ্টি উপকারি সবকটি খাবারের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় সমৃদ্ধ একটি হচ্ছে কাঁচকলা। এটি একটি আদর্শ সবজি হিসেবে যথেষ্ঠ সমাদৃত সারাদেশে। যা আমাদের দেশে সারাবছর সব জায়গায়ই পাওয়া যায়। ভেষজগুণে সমৃদ্ধ এ কাঁচকলার মধ্যে রয়েছে দারুণ সব পুষ্টিগুণ। এলাকা ভিত্তিক কাঁচকলার বিভিন্ন ধরণের নাম রয়েছে। তৎমধ্যে শুদ্ধ ভাষায় এটির নাম কাঁচকলা হলেও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় এটিকে আনাজ কলা ও আনাজি কলা হিসেবে চেনেন। এটি সহজ প্রাচ্য ও পুষ্টিকর বলে রোগীর পথ্য হিসাবে কাঁচকলার ভর্তা ও তরকারি রান্না করে খাওয়ানো হয়। এটি বহু আগে থেকেই ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়ে আসছে। রোগীর রুচি বাড়াতে কাঁচকলার জুড়ি নেই।
প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযোগী কাঁচকলায় যে সমস্ত পুষ্টিগুণ রয়েছে তা হলো জলীয় অংশ- ৭৮%, শর্করা- ১৭-৩৪ গ্রাম, প্রোটিন- ২/৬০ গ্রাম, স্নেহ- ০.০৩ গ্রাম, খনিজ লবণ- ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ১১-৩০ মি. গ্রাম, আয়রন- ০.৪ গ্রাম, ভিটামিন বি- ০.০৯ মিঃ গ্রাম, বি¬২- ০.০৬ মিঃ গ্রাম, ভিটামিন সি- ৪.০৩ মি.গ্রাম, খাদ্যশক্তি- ৮৩ কি. ক্যালরি।
শিশুদের পাতলা পায়খানা কাঁচকলার খিচুরী রান্না করে খাওয়ালে আরোগ্য হয়। জন্ডিস, আমাশয় ও ডায়রিয়ার রোগীকে কাঁচকলা সিদ্ধ ভর্তা খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। আযুর্বেদিক মতে কলার থোর ও বীজে রয়েছে প্রচুর ওষুধিগুণ। কচি কলাগাছের শিকরের রস কৃমিনাশক এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কাঁচকলার ভর্তা ও তরকারি যেমন সমাদৃত তেমনি কাঁচকলা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন মজাদার নাস্তাও মুখরোচক হয় যেমন: কাঁচকলা টিকিয়া, কাটলেট, চপ, কাবাব ইত্যাদি। এ সবজিটি যেহেতু সারাবছর হাতের কাছেই পাওয়া যায় কাজেই নিয়মিত খেলে দৈহিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ হওয়া সম্ভব।
আসুন জেনে নিই কাঁচাকলার বেশকিছু পাকা গুণ সম্পর্কে:
কাঁচকলায় থাকা খাদ্যশক্তি দেহের দূর্বলতা কাটিয়ে সবল করে তোলে। রোগীদের জন্য দারুণ পথ্য হিসেবে কাঁচকলার সুনাম রয়েছে। কাঁচকলায় থাকা খাদ্যা আঁশ খাবার হজমে সহায়তা করে। পেটের নানা ধরনের অসুখ যেমন- গ্যস, পেটব্যথা, বদহজম ইদ্যাতি দূর করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও কাঁচকলা উপযোগী। কাঁচকলায় থাকা ভিটামিন সি শরীরের যেকোনো সংক্রমণ রোধে সহায়তা করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। এতে থাকা ভিটামিন-এ উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে। দেহের নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধসহ ক্যান্সারের জীবানু রোধেও ভূমিকা রাখে। ত্বকের যত্নেও এর ভূমিকা অসাধারণ। কাঁচকলায় থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস দেহের হাড় মজবুত এবং হাড় ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। কোঁচকলা থেকে পাওয়া পটাসিয়াম হৃদস্পন্দনের সঠিক মাত্রা বজায় রাখে। রক্তচাপের মাত্রাও ঠিক রাখে। দেহের কোষ গঠনেও কাঁচকলা ভূমিকা রাখে। অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতেও কাঁচকলা দারুণ ভূমিকা রাখে। কাঁচকলায় থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড পরিপাক নালী থেকে লবণ ও পানিকে শোষণ করে ডায়রিয়া রোধ করে। সব মিলিয়ে কাঁচকলা একটি আদর্শ, উপকারি ও রোগ প্রতিরোধক খাবার হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে ভেষজবিদদের গবেষনায়। তাই এটিকে নিত্য খাবারের তালিকায় রাখা যায় নি:স্বন্দেহে।
কাজী এম এস এমরান কাদেরী।
সাংবাদিক, কলামিস্ট।
বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম।
amrankaderi@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন