আমরা সবাই কী কী খাদ্য খাওয়া যাবে না শুনতে শুনতে ক্লান্ত। কিন্তু কী কী খাবার খাবো বা খাওয়া উচিত তা শুনতে পাই কম। আসুন, জেনে নেই, কী কী খাবার আমাদের খাওয়া উচিত।
কলা : পাকা কলায় রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম, যা আমাদের হাড়কে রক্ষা করে। শক্ত রাখে। হার্টের জন্য পাকা কলা অত্যন্ত উপকারী। একটা মাঝারি আকারের কলায় ৪২২ মিগ্রা. পটাশিয়াম বিদ্যমান। আপনার শরীরের ৪৭০০ মিলিগ্রামের শতকরা ১০ ভাগ পূরণ করতে পারে একটি কলা। কলা উচ্চ রক্তচাপ কমায়। কিডনিতে পাথর গঠনে বাধা দেয়। হাড় সবল করে। দৈনিক একটা পাকা কলা খান।
ব্রোকোলি : আমাদের দেশে ব্রোকোলিকে সবুজ ফুলকপি বলে। এ সবজি আমরা খুব কম খাই। কিন্তু এটা অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি। এটা আঁশযুক্ত, লৌহ ও খনিজসমৃদ্ধ। প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে এতে। বহু পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন ‘সি’।
আপেল : সবাই জানে, আপেল ডাক্তারকে দূরে রাখে। একটা আপেল হয়তো সারা দিনের পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে না, কিন্তু এটা অতি পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল। লাল আপেল সর্বাপেক্ষা পুষ্টিসমৃদ্ধ বলে গবেষকেরা বলছেন। এতেও প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই এন্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের ওপর বেশি কাজ করে।
শিম বা বিন : শিম হলো আঁশপ্রধান, লৌহ ও প্রোটিনসমৃদ্ধ। গোশতের বিকল্প হিসেবে শিম খাওয়া যায়। এতে আরো রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফোলেট। গবেষকেরা বলছেন, এ সবই মস্তিস্কের জন্য উপকারী। সর্বপ্রকার শিমই পুষ্টিসমৃদ্ধ। কিডনি বিনস অধিক পরিমাণে লৌহ ও প্রোটিন সরবরাহ করে। এতে ক্যালরি খুব কম। আঁশ বেশি।
চা: কোনো মিষ্টি পানীয় অপেক্ষা এক কাপ তরতাজা চা অনেক শ্রেয়। চা-এ এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে বহু পরিমাণে। চা হৃদরোগ কমায়। গ্রীন-টি অধিক স্বাস্থ্যসম্মত।
টুনা: টুনা এক প্রকার ছোট মাছ। এতে আছে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও উচ্চমাত্রায় ভিটামিন বি-৬ ও বি-১২ এবং প্রোটিন।
আমন্ড : আমন্ডে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম। অন্যান্য বাদামের মতো এতে খুব স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। বেশি পরিমাণে আছে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। বহু ক্যালরি আছে। এতে আরো রয়েছে রিভোফ্লাভিন, ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক।
গাজর : সবাই জানে গাজর উপকারী। কিন্তু জানেন, কত উপকারী? এতে রয়েছে হরেক রকমের ফল ও সবজির গুণ। আধা কাপ গাজরে আছে ১৫০ শতাংশ ভিটামিন ‘এ’ এবং অন্যান্য ভিটামিন।
টমেটো: আমরা প্রচুর টমেটো খাই। কারণ, এতে রয়েছে বহু লাইকোপেন, যা প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। স¤প্রতি আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, টমেটো পুরুষের অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারও প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এটা লাইকোপেনের উৎস। একটি মাঝারি সাইজের টমেটোতে সারা দিনের ভিটামিন ‘সি’-এর প্রয়োজন মেটাতে পারে।
ওটমিল: দিনের শুরুতে যদি ওটমিল খাওয়া হয়, তাহলে সারা দিনের পুষ্টি চাহিদার ৬০ শতাংশ পূরণ হয়। ওটমিল কোলেস্টেরল কমায়। তবে এতে প্রচুর শর্করা রয়েছে।
ফুলকপি : ব্রোকলির মতো ফুলকপিও ভিটামিন ‘সি’-সমৃদ্ধ সবজি। এটা শুধু পুষ্টিসমৃদ্ধ নয়, রোগ প্রতিরোধকও। প্রতিদিনের ভিটামিন ‘সি’ চাহিদার ৪৫ শতাংশ ফুলকপি মেটাতে সক্ষম। ফুলকপি ক্যান্সার প্রতিরোধক। প্রতিদিন অন্তত আধা কাপ ফুলকপি খাওয়া উচিত।
দই ও দইজাতীয় খাবার: খুবই সুস্বাদু ও উপকারী। ক্যালসিয়াম ছাড়া ইয়োগার্টে প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ‘বি’-সহ হরেক রকম ভিটামিন রয়েছে। এটি স্বাস্থ্য রক্ষা করে। এতে ভিটামিন ‘ডি’ নেই, তাই এটা দুধের বিকল্প নয়।
স্যামন : স্যামন এক প্রকার মাছ। এতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। স্যামন সেদ্ধ, তাজা ও গ্রিল করে খাওয়া যায়। এই মাছ যদি কাঁটাসহ পিষে খাওয়া যায়, তাহলে হাড়ক্ষয় রোধ হয় এবং হাড় শক্ত ও সবল হয়।
তরমুজ : গ্রীষ্মকালের পানিসমৃদ্ধ ফল তরমুজ। এতে রয়েছে প্রচুর লাইকোপেন। প্রতিদিনের ভিটামিন ‘সি’ চাহিদার ২০ শতাংশ চাহিদা মেটাতে পারে মাত্র এক কাপ তরমুজ। ১৫ শতাংশ ভিটামি ‘এ’-এর চাহিদা মেটাতে পারে তরমুজ । এতে ৪৫ শতাংশ ক্যালরি আছে। বাদামি বা লাল চাল : ভাতের জন্য সাদা অপেক্ষা বাদামি বা লাল রঙের চাল বেশি উপকারী। আমরা যারা ভাত খাই, তাদের লাল চাল বেছে নেয়া শ্রেয়।
মুরগির বুক : মুরগির বুকের গোশত, যাতে চামড়া নেই, হাড় নেই, আপনার দিনের প্রোটিন চাহিদার অর্ধেক মেটায়। এতে প্রায় তিন গ্রাম গোশত থাকে। চর্বি মাত্রা সহনীয় ও প্রচুর ক্যালরি আছে। তবে ভাজলে এতে কিছুই থাকে না, বরং ক্ষতিকর হয়ে যায়।
স্ট্রবেরি : স্টুবেরি এখন আমাদের দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। অন্যান্য বেরির মতো যেমন-আঙুর, প্রুন্স ও স্ট্রবেরিতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা আমাদের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। এতে আরো রয়েছে ফোলেট ও ভিটামিন ‘সি’।
ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট,
মোবাইল: ০১৭১৬২৭০১২০
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন