গত মাসের ১১ দিনের ইসরাইল-হামাস লড়াই একদিকে ইহুদীবাদী রাষ্ট্রটির রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব স্পষ্ট করে দিয়েছে, অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের বিভিন্ন দল-উপদলকে এক মোড়ে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তাদের মধ্যে কোন্দল, শাসনতান্ত্রিক বিভাজন থাকলেও তারাও যে প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে তা প্রমাণ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে নিউ ইয়ক টাইমস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নিম্নে তার চৌম্বক অংশ তুলে ধরা হ’ল:
ইসরাইলিরা গত মঙ্গলবার তাদের সংবাদপত্র এবং নিউজ ওয়েবসাইটগুলো খুলে দেশের দীর্ঘতম ক্ষমতাসীন নেতা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সম্ভাব্য অবক্ষয় সম্পর্কিত রিপোর্ট এবং মন্তব্য পড়তে বাধাগ্রস্থ হয়। দখলিত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিরা যখন এ অঞ্চলের প্রচারের শীর্ষে থাকা আল-কুদস পত্রিকাটি হাতে নেন তখন ৭ পৃষ্ঠার আগ পর্যন্ত মি. নেতানিয়াহুর ভাগ্য সম্পর্কে কোনো তথ্যই খুঁজে পাননি।
মঙ্গলবার রাতে মি. নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ভারসাম্য ঝুলে থাকে, কারণ বিরোধী নেতারা শেষ পর্যন্ত তাকে ১২ বছরের মধ্যে প্রথমবার পদ থেকে সরিয়ে দেবার চেষ্টায় ভঙ্গুর জোট সরকারের বিষয়ে একমত হতে লড়ছিলেন।
আলোচনার শেষ দিনে অচলাবস্থা নাটকীয়ভাবে শুরু হয়। বিরোধীদের বুধবার মধ্যরাতের মধ্যে এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে, নইলে দেশ আরো একটি নির্বাচনের ঝুঁকিপূর্ণ পথে পা বাড়াবে। ইসরাইলিদের পক্ষে মি. নেতানিয়াহুর সম্ভাব্য প্রস্থান ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছে। তার প্রস্থানে ইসরাইলের ইতিহাসের অন্যান্য রাজনীতিবিদদের চেয়ে তাদের সমাজে গভীর ছাপ ফেলা একজন বহিষ্কৃত হচ্ছেন। তবে অনেক ফিলিস্তিনির কাছে তার অনুমিত প্রস্থান তিক্ত স্মৃতি ফিরে আসার চেয়েও কিছুটা বেশি।
তার বর্তমান ১২ বছরের মেয়াদে ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়েছে এবং ইসরাইলি ও ফিলিস্তিন উভয় নেতারাই এ প্রক্রিয়াটিতে বাধা দেয়ার জন্য একে অপরকে অভিযুক্ত করেছে এবং মি. নেতানিয়াহু একটি সার্বভৌম প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের সম্ভাবনা নিয়ে ক্রমবর্ধমান দ্বিধা প্রকাশ করেছেন। তবে অনেক ফিলিস্তিনির মতে, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার সম্ভাব্য স্থলাভিষিক্ত নাফতালি বেনেটের আগমনেও কোনো উন্নতি হবে না। মি. বেনেট হলেন মি. নেতানিয়াহুর প্রাক্তন চিফ অফ স্টাফ এবং ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রত্বকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যানকারী প্রাক্তন জনবসতি নেতা।
এর বিপরীতে অনেক ফিলিস্তিনি তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছেন, যাকে কিছু নেতাকর্মী কয়েক দশকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন। ফিলিস্তিনি শাসনব্যবস্থা দীর্ঘকাল ধরে দখলিত পশ্চিম তীরে মার্কিন-সমর্থিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মধ্যে শারীরিক ও রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী গাজা শাসনকারী সশস্ত্র ইসলামী গোষ্ঠী হামাস ইসরাইলের অভ্যন্তরে এমন একটি ফিলিস্তিনি সংখ্যালঘু যার ভোট ইসরাইলি সরকার গঠন এবং ভেঙে দেয়ার জন্য ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ।
যাইহোক, গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে গত মাসের ১১ দিনের মারাত্মক যুদ্ধ সংযুক্ত আরব-ইহুদিদের মধ্যে কয়েক দশকের সহিংসতার সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দল হঠাৎ করে সাধারণ পরিচয় এবং উদ্দেশ্যে আপাতদৃষ্টিতে একটি বিপথগামী পরিবর্তনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ঐক্যের এক বিরল প্রদর্শনীতে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি ১২ মে গাজা, পশ্চিম তীর, লেবাননের শরণার্থী শিবির এবং খোদ ইসরাইলের অভ্যন্তরে সাধারণ ধর্মঘট পালন করেছে।
ফিলিস্তিনি স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন প্রধান আহমদ আবেদ বলেছেন, ‘আমি মনে করি না যে, ইসরাইলের দায়িত্বে যিনি থাকবেন তিনি ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অনেক বেশি পার্থক্য আনবেন’। ‘সামান্য পার্থক্য এবং সংক্ষিপ্তসার হতে পারে তবে চূড়ান্ত বাম দিকে সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া সমস্ত মূলধারার ইসরাইলি দলগুলো অনেকাংশে একই মতাদর্শ ধারণ করে’।
জনাব আবিদ বলেছিলেন, তবে মে মাসের মাঝামাঝি এ ধর্মঘট ‘ইসরাইলিরা ৭৩ বছর ধরে যা করার চেষ্টা করেছে তা বিবেচনা না করেই আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের ইসরাইলি আরব, পশ্চিম ব্যাংকারস, জেরুসালেমি, গাজান, শরণার্থী এবং প্রবাসীদের মধ্যে শ্রেণিবদ্ধ করে তুলেছি। এর কোনোটিই কাজ করেনি। আমরা আবার মোড়ে ফিরে এসেছি’। সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন