বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তি নজরদারিতে বিরক্ত মুসলমানরা

প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ইউরোপের অনেক দেশের মত যুক্তরাষ্ট্রেও এখন অভিবাসী মুসলমান জনগোষ্ঠীর জন্য নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচি। তাদের ওপর নজরদারি যেমন বাড়ছে, তেমনি আলাদা কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে যাতে, এই কম্যুনিটির মানুষের মধ্যে শিক্ষা-সচেতনতা বাড়ে এবং প্রবঞ্চনার বোধ না বাড়ে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এ ধরনের কর্মকা-ে বেশ বিরক্ত সেখানকার স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় লাখ খানেক সোমালি বাস করেন। এদের বেশিরভাগই নিজের দেশে সংঘাত আর সহিংসতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এদের বেশিরভাগই মুসলমান। এ সপ্তাহে মিনেসোটায় সোমালি এক ব্যক্তির হামলা চালানোর ঘটনার পর নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, দেশে মুসলমানদের চালানো সন্ত্রাসী হামলা, কীভাবে ঠেকাবে কর্তৃপক্ষ? এ ব্যাপারে স্থানীয় সংগঠক বুরহান মাহমুদ কর্তৃপক্ষের নেয়া নতুন উদ্যোগের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, একজন খুনি বা ধর্ষককে ধরার জন্য কি কর্মসূচি নেয় কর্তৃপক্ষ? এখন একটি কম্যুনিটির মানুষকে উদ্দেশ্য করে ন্যাশনাল প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে, কেন? ব্যাপারটা এমন যে আপনি গুটি কয়েক সন্ত্রাসীকে ধরার জন্য পুরো কম্যুনিটির মানুষকে টার্গেট বানাচ্ছেন। অল্প কয়েকজনের জন্য আমাদের সবাইকে অপরাধী হিসেবে দেখানো হচ্ছে। বুরহানের মতই ক্ষুব্ধ আর বিরক্ত এখানকার অনেক কিশোর শিক্ষার্থী। সোমালি শিক্ষার্থীরা স্কুলগুলোতে রীতিমত বৈষম্যের শিকার হয় বলে অভিযোগ করছে। তাদের বেশিরভাগকেই সরকারের বিভিন্ন নজরদারি কর্মসূচির অংশ হিসেবে নিয়মিত পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে হয়। সহযোগিতা না পেলে আবার ব্ল্যাকলিস্টেড হবার আশংকা রয়েছে। আর সেই সঙ্গে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনেও মুসলমান বিরোধী নানা ধরনের বক্তব্য উঠে আসছে। বুরহান মাহমুদ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমান জনগোষ্ঠীর প্রতি তাদের যে মনোভাব, সেটি আপনাকে যত বেশি সম্ভব অ-অ্যামেরিকান করে তুলবে। কারণ এর মাধ্যমে ভয় ছড়ানো হচ্ছে। আর আইসিসও ঠিক এই কাজটাই করছে---তারা বলছে, তুমি যুক্তরাষ্ট্রের কেউ নও, তারা তোমাকে এখানে দেখতে চায় না। ঠিক এই মনোভাবই ধ্বনিত হল স্থানীয় রেস্তরাঁগুলোতে আড্ডা দিতে আসা তরুণদের মধ্যে। এদের মধ্যে একজন হাইস্কুলের বাস্কেটবল দলের খেলোয়াড়, বলছিলেন দলের বাকি খেলোয়াড়েরা এমন ব্যবহার করে যেন, তারা একজন অপরাধীর সাথে খেলছে। তার মতে, সমস্যা হলো কর্তৃপক্ষের নানা কর্মসূচি আমাদের মধ্যে ভিন্নতার বোধ বাড়াচ্ছে, অর্থাৎ এর মাধ্যমে আরো স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেয়া হয় আপনি বাইরে থেকে এসেছেন। সে কারণে আমাদের বেশিরভাগই এটাকে হুমকি হিসেবে দেখে। কম্যুনিটির লোকজন এটা পছন্দ করেনা। কিন্তু এর বাইরে কর্তৃপক্ষের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণও আছে। গত এক বছরে সোমালি মুসলমানদের একটি দল কেনিয়ার জঙ্গি সংগঠন আল-শাবাবে যোগ দিতে দেশ ছেড়েছে। আর আইএসে যোগ দিতে দেশ ছাড়ার আগে গ্রেপ্তার হয়েছে নয়জন সোমালি-মার্কিন মুসলমান। ফলে কর্তৃপক্ষ জঙ্গিবাদ ঠেকাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি এই কম্যুনিটির মানুষের মধ্যে জঙ্গি-বিরোধী বার্তা পৌঁছে দেয়া। আর এ কাজে যুক্ত হচ্ছেন এই জনগোষ্ঠীর মানুষেরাই। এদের একজন সুশিডো শাই বলছিলেন, তার ২৩ বছরের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসে, মুসলমান হবার কারণে এখনকার মত কখনোই তাকে অসম্মান আর অনিশ্চয়তায় পড়তে হয়নি। তিনি বলছেন, গত ২৩ বছরে আমাকে কোনোদিনই মুসলমান হবার জন্য হুমকির মুখে পড়তে হয়নি, এখন যেমনটা পড়তে হচ্ছে। আমি কল্পনাই করতে পারিনা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে চান, এমন একজন ব্যক্তি, অন্যকে তার ধর্মের কারণে হুমকি দিচ্ছে। বলছে, মুসলমানেরা এদেশে আসতে পারবে না, অথবা তাদের ফিরে যেতে হবে। সুশিডো বলছেন, সরকারী কর্মসূচিতে যারাই কাজ করছেন, তাদের কেউই কাউন্টার টেররিজম কর্মসূচির ট্যাগ পছন্দ করে না, কারণ অন্যরা তখন তাকে ভিন্ন চোখে দেখতে শুরু করে। কিন্তু এখান থেকে টাকা পাওয়া যায় বলে অনেকেই আগ্রহী হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব মানুষেরা মার্কিন সমাজে ঠিক আমেরিকান হয়ে উঠতে পারবেন কিনা সেই সন্দেহ আর আশংকা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন