ইনকিলাব ডেস্ক : দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে কলম্বিয়ার সরকার এবং বামপন্থি ফার্ক বিদ্রোহীদের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বুলেটের তৈরি একটি কলম দিয়ে ঐতিহাসিক এই শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট হুয়ান এবং তিমোলিয়ন জিমেনেজ। এর মধ্য দিয়ে কলম্বিয়ায় ৫২ বছর ধরে চলে আসা গৃহযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অবসান হলো বলে খবর দিয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো। ১৯৬৪ সাল থেকে ফার্ক বিদ্রোহীরা কলম্বিয়া সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। অন্তত দুই লাখ ৬০ হাজার মানুষ হয়েছেন ঘরহারা। এটি লাতিন অঞ্চলের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বিদ্রোহের ইতিহাস।
খবরে বলা হয়, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস এবং বিদ্রোহী নেতা তিমোলিয়ন জিমেনেজ তিমোশেঙ্কোর মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। তিমোলিয়ন তিমোশেঙ্কো নামেও সমধিক পরিচিত। দেশটির উপকূলীয় শহর কার্টেজিনায় গত সোমবার ওই শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন দুই নেতা। খবরে বলা হয়, শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন এবং লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই শান্তির প্রতীক হিসেবে সাদা পোশাক পরেছিলেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। প্রেসিডেন্ট সান্তোস বলেন, এর মধ্য দিয়ে তার দেশ এক নতুন যুগে প্রবেশ করল। সমবেত বিশাল জনতাকে তিনি বলেন, এক স্বপ্নের শান্তির দেশ গড়ার জন্য আমরা যে কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারি, যে কোনো বাধা অতিক্রম করতে পারি। বুলেটের কলম ব্যবহারের বিষয়টি একটি দেশ বুলেটের বাস্তবতা থেকে শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ নির্মাণের বাস্তবতায় প্রত্যাবর্তনের প্রতীক বলে উল্লেখ করেছেন সান্তোস। অপর পক্ষে তিমোশেঙ্কো মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, ১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে গড়ে ওঠা ফার্ক সশস্ত্র বিদ্রোহের পথ ছেড়ে এখন থেকে শান্তিপূর্ণ রাজনীতির পথে পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, আমরা রাজনীতিতেই থাকছি। তবে এই রাজনীতি অস্ত্রহীন রাজনীতি। আমাদের মনকেও নিরস্ত্র করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। এই শান্তিচুক্তি অনুযায়ী, ফার্ক-কে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। তবে শান্তিচুক্তিকে আইনে পরিণত হতে হলে গণভোটের মাধ্যমে তা পাস করতে হবে। আগামী ২ অক্টোবর ওই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। শান্তিচুক্তির ঠিক আগ মুহূর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে ফার্ক-এর নাম কেটেছে বলে জানিয়েছেন ইইউ-র প্রতিনিধি ফেদেরিকা মোগেরিনি। তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র শান্তিচুক্তির প্রক্রিয়া এগোনোর পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ১৮০ দিনের মধ্যে জাতিসংঘের কাছে অস্ত্র জমা দেবে ফার্ক বিদ্রোহীরা।
প্রসঙ্গত, চার বছর ধরে আলোচনার পর চলতি বছরের ২৪ আগস্ট কিউবার রাজধানী হাভানায় ৫২ বছর ধরে চলে আসা বিদ্রোহের অবসান ঘটাতে ফার্ক বিদ্রোহী এবং কলম্বিয়া সরকারের মধ্যে শান্তি সমঝোতা হয়। সেই সঙ্গে অস্ত্রবিরতিও ঘোষণা করা হয়। ওই সমঝোতা অনুযায়ী, ফার্ক সশস্ত্র বিদ্রোহের পথ ত্যাগ করে কলম্বিয়ার নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করবে। সেই সঙ্গে বিদ্রোহীদের পুনর্বাসনের জন্য উদ্যোগ নেবে সরকার। চলতি বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ফার্ক নেতারা ওই সমঝোতা চুক্তি অনুমোদন নিয়ে বৈঠকে বসেন। ১৩ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর ফার্ক-এর নিয়ন্ত্রণে থাকা কলম্বিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে ওই কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শান্তিচুক্তির শর্তাবলী সমর্থন করেন ফার্ক নেতারা। ফার্ক-এর সঙ্গে গত চার বছর ধরে চলা শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছেন নরওয়ের নাগরিক ড্যাগ নাইল্যান্ডার এবং কিউবা সরকার। বিবিসি, ওয়েবসাইট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন