মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

লিনা খানকে ভয় পাচ্ছে কেন ফেসবুক-অ্যামাজন হঠাৎ?

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০২১, ২:২৩ পিএম

আমেরিকানরা অনেকেই 'ফেডারেল ট্রেড কমিশন' এই পদ বা চেয়ারটিতে বিশেষ মনোযোগ দিতেন না। এটি আসলে নজরদারির জন্য তৈরী হয়েছিল।

কিন্তু লিনা খান আসার পর পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের বছর ৩২ এর সহযোগী অধ্যাপক লিনা ফেডারেল ট্রেড কমিশন' বা এফটিসির খোল নলচে বদলে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন। জুনের মাঝামাঝি সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাকে এফটিসির চেয়ারম্যানের পদে অভিষিক্ত করেন। এরপরই অ্যামাজন এবং ফেসবুক এর মত দুটি টেক জায়ান্ট তাদের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকতে লিনাকে আবেদন করেছিল। সংগঠনের নেতৃত্ব গ্রহণের পর বুধবার খোলাখুলি একটি বৈঠক করেন লিনা খান, সেই সঙ্গে নিজের অবস্থা স্পষ্ট করে দেন। বলে রাখা ভালো , ফেডারেল ট্রেড কমিশন তৈরী হয়েছিল ১৯১৪ সালে, ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য। পরে তা গ্রাহকদের সুরক্ষার জন্য আরো বিকশিত হয়।

এর নেতৃত্বে রয়েছেন পাঁচ জন কমিশনার এবং তিনজনের বেশি একই রাজনৈতিক দলের হতে পারবেন না। এফটিসি তে এখন ডেমোক্রেটিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এফটিসির কাছে অনেক বড় ক্ষমতা দেওয়া আছে। তারা তদন্ত করতে পারে, আইন প্রয়োগ করতে পারে, এবং আইন লঙ্ঘনের জন্য জরিমানা ধার্য করতে পারে। সিদ্ধান্তগুলি ভোটের উপর নির্ভর করে, তবে এজেন্সির এজেন্ডা নির্ধারণ করার দায়িত্ব রয়েছে লিনা খানের ওপর।

২০১৭ সালে ছাত্রাবস্থায় ইয়েল ল জার্নালে অ্যামাজন অ্যান্টিট্রাস্ট প্যারাডক্স নামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন লিনা। ডিজিটাল যুগে 'একচেটিয়া' কথাটির ব্যাখ্যা নতুনভাবে তুলে ধরেছিলেন তিনি। তার থিসিস পেপারে লিনা জানান, অতীতে একচেটিয়াভাবে বাড়ানো হত জিনিসের দাম। যার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন গ্রাহকরা। এরপর অ্যামাজনের মতো সংস্থাগুলি প্রতিযোগিতার বাজারে টিঁকে থাকতে প্রোডাক্টের মূল্য কমিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে শুরু করে। লিনা খান যুক্তি দেখিয়ে বলেন এই স্ট্র্যাটেজিতে গ্রাহকদের সাময়িকভাবে সুবিধে হলেও এতে অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়ে। এমনকি প্রতিযোগীদেরও অ্যামাজন প্ল্যাটফর্মের উপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য করে। খান যুক্তি দিয়েছিলেন যে, অর্থনীতিতে নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি দরকার, এর ফলে তা আরো মজবুত হয়। কিন্তু একচেটিয়া ব্যাপার চলে এলে অর্থনীতির বিকাশ স্তব্ধ হয়ে যায়। অনেকেই অবশ্য লিনার যুক্তি মানতে নারাজ।

তাদের মতে, অ্যামাজনের জনপ্রিয়তা এবং কম দাম নতুন নতুন গ্রাহক তৈরীতে একে সহায়তা করেছে। যদিও প্রেসিডেন্ট বাইডেন লিনার ওপরেই ভরসা রাখছেন, তিনি মনে করেন 'এন্টিট্রাষ্ট ল' কে নতুন আঙ্গিকে পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখেন লিনা। ম্যাসাচুসেটস সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনও এই বিষয়ে একমত, যে লিনার নেতৃত্বে এফটিসি প্রগতিশীল ভূমিকা নেবে এবং একচেটিয়া বাজার থেকে দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করবে।

সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করার জন্য ফেসবুক গত সপ্তাহে একটি মামলা দায়ের করেছে লিনার বিরুদ্ধে। এফটিসি কর্তৃক একাধিক তদন্তের মুখোমুখি অ্যামাজনও।

তারা খানকে এই প্রক্রিয়া থেকে সরে যাবার আবেদন করেছে। খান স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, নীতি আইনের বাইরে গিয়ে তিনি কিছুই করেন নি, তাই তিনি নিজের জায়গা থেকে সরবেন না। রিপাবলিকানদের কথা যদি আসে, তাহলে বলতে হয় ৪৮ ডেমোক্রেটিক সিনেটর এবং ২১ জন রিপাবলিকান সিনেটর এফটিসির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য খানের মনোনয়নকে সমর্থন করেছিলেন। কিছু রিপাবলিকান অবশ্য সংশয় প্রকাশ করেছেন যে এই কাজের জন্য লিনা খানের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে কিনা। তবে সব শেষে বলা যায় একদিকে দেশের মানুষের বিশ্বাস অন্যদিকে প্রেসিডেন্টের ভরসা নিয়ে এখন ট্রাপিজের তারের ওপর দাঁড়িয়ে এফটিসি চেয়ারম্যান লিনা খান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন