ইনকিলাব ডেস্ক : শীতল যুদ্ধের পর ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে পাকিস্তান ও রাশিয়ার সেনাবাহিনী। উরির ঘটনা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে ঠিক তখনই এই সামরিক মহড়া শুরু হল। ফ্রেন্ডশিপ ২০১৬ নামে পরিচিত এই মহড়া চেরাই নামক স্থানে একটি বিশেষ বাহিনী একাডেমিতে শুরু হয়। মহড়ায় ৭০ জন রুশ এবং ১৩০জন পাকিস্তানী সৈন্য অংশ নিচ্ছে। মহড়া চলাকালীন, রাশিয়ান বাহিনী পাকিস্তানী সৈন্যদের ভিএসএস ভিনটোরেজ নামক স্নাইপার রাইফেল এবং এনআর এস-২ যুদ্ধ ছুরিসহ অস্ত্রসম্ভার প্রদর্শন করে। গত সোমবার মহড়ার প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ফ্রেন্ডশিপ-২০১৬ সামরিক মহড়া ১০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। সঙ্গত কারণে এই মহড়ায় পাকিস্তান সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে এবং বিপাকে পড়েছে ভারতের মোদি সরকার। কারণ এটাকে পাকিস্তানের কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সরকার। ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের দৃষ্টিতে এটি ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা। এছাড়াও মোদি সরকারের সমালোচনায় সরব হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মহল। মহড়া শুরুর চতুর্থদিনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বলেছে, রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া ভালভাবে এগিয়ে চলেছে। খবরে বলা হয়, গত শুক্রবার রুশ সেনাদের নিয়ে একটি সামরিক পরিবহন বিমান পাকিস্তানের রাওয়াল পিন্ডিতে অবতরণ করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আইএসপিআরের মহাপরিচালক লে. জেনারেল আসিম বাজওয়া ওইদিন স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টার দিকে টুইটারে রুশ সেনাবাহিনীর অবতরণের ছবি প্রকাশ করেন। গত মঙ্গলবার দুই দেশের ৪০ জন সেনা সদস্য একটি পর্বত প্রশিক্ষণ মহড়ায় অংশ নেয়। এসময় তারা কমপক্ষে ১৫ কেজি সামরিক সরঞ্জামসহ বহন করে। তা ছাড়া সাউদার্ন সেনাবাহিনী জেলা পর্বত পদাতিক কারচে ভিত্তিক ব্রিগেড থেকে এ মহড়ার তত্ত্বাবধান করা হয়। পাহাড়ে উঠার সময় নিরাপত্তা বিধানের কৌশল দেখানো হয়। খবরে বলা হয়, শীতল যুদ্ধের সময়কার পরস্পর বিরোধী শিবিরের দুই দেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এ সামরিক মহড়া এরই মধ্যে সামরিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে গভীর আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। তারা এ সংক্রান্ত বিষয়ে গভীর নজর রাখছেন। এর আগে রুশ সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এই মহড়া ইঙ্গিত দিচ্ছে, দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের যে ঠা-া লড়াই ছিল এবার তা প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত সুসম্পর্কের দিকে এগোচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটার ফলেই নিজেদের পররাষ্ট্র নীতিতে পরিবর্তন এনেছে পাকিস্তান। এয়ারক্রাফট কেনার জন্য এবার অন্য দেশকে বেছে নিচ্ছে পাকিস্তান। এরই মধ্যে রাশিয়া সফর করেছেন পাকিস্তানের আর্মি, বিমান ও এয়ারফোর্সের চিফ। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে এমআই-৩৫ অ্যাটাক হেলিকপ্টার সংক্রান্ত চুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এছাড়া রাশিয়ার কাছ থেকে এসইউ-৩৫ ফাইটার জেটও কিনতে পারে পাকিস্তান।
অপর এক খবরে বলা হয়, পেশোয়ার কোরের কমান্ডার লে জেনারেল হেদায়েত-উর-রহমান মহড়ায় অংশগ্রহণকারী উভয় দেশের সেনাদলকে পরিদর্শন করেন। বর্তমানে চেরাতে পাক সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্সেস ট্রেনিং সেন্টারে মহড়া চলছে। এ সময়ে তিনি তাদের সঙ্গে আলাপও করেন। মহড়া ১০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। সমাপনী অনুষ্ঠানে পাক সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরীফ অংশ নিবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের উরি সেনাঘাঁটিতে দুঃসাহসিক সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে এ মহড়া রাশিয়া বাতিল করে দিয়েছে এবং একে ভারতীয় কূটনীতির বিজয় বলে দাবি করেছিল ভারতীয় কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যম। এদিকে রাশিয়া-পাকিস্তান যৌথ মহড়াকে ভারতীয় পররাষ্ট্র নীতির ব্যর্থতা বলে পরিষ্কার ভাষায় অভিযোগ করেছে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। ভারতের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্থনি বলেন, রাশিয়ার ইতিহাসে এই প্রথম পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া চালাচ্ছে দেশটি। ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের দৃষ্টিতে এটি ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা বলে অভিহিত করেন তিনি। আরটি, ডন, ইনকিউজিটর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন