রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাইফস্টাইল

করোনাকালে নানান রোগে পেঁপের উপকারিতা

| প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৬ এএম

সারা বিশ্বেই জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে একটি হল পেঁপে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি-এর জুড়ি নেই এটা কমবেশি সবারই জানা একারণে চিকিৎসকরা কারোনাকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি খাওয়ার পরামর্শ দেন। অনেকেই শরীরে ভিটামিন সি’য়ের ঘাটতি পূরণে নিয়মিত ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট খান। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক উৎস থেকেই যদি সেই ভিটামিন পাওয়া যায় তাহলে তা আরও বেশী কার্যকর হবে। সেক্ষেত্রে করোনা প্রতিরোধে শরীরে ভিটামিন সি পেতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কিছু সবজির মধ্যে পেঁপে যোগ করতে পারেন। সারা বছরই পেঁপে পাওয়া যায়। পেঁপে একদিকে যেমন সবজি, অন্যদিকে ফল। কাঁচা থাকতে পেঁপে সবজি, ভর্তা, ভাজি আর রান্না করে খাওয়া যায়।

পাকলে পেঁপে হয়ে যায় সুস্বাদু ফল। অতিপরিচিত পেঁপের আরেকটি নামও কিন্তু আছে, নামটি হলো অমৃততুন্বী। আর পুষ্টিগুণের জন্যই সবাই এই ফলটি বেশি পছন্দ করেন। কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন। বিভিন্ন রকম অসুখ সারাতে কাঁচা পেঁপে খুবই উপকারি। পেটের নানা রোগবালাই দূরীকরণে কাঁচা পেঁপে খুবই কার্যকরী। শুধু পেটের সমস্যায় নয়, আরও অনেক নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যায় এই ফলের উপকারিতা অনেক। অন্যান্য ফলের তুলনায় পেঁপেতে ক্যারোটিন অনেক বেশি থাকে। কিন্তু ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম থাকায় যারা মেদ সমস্যায় ভুগছেন তারা অনায়াসে খেতে পারেন এ ফলটি। নিচে পেঁপের নানাবিধ পুষ্টিগুণের কথা তুলে ধরা হল-

* অন্ত্রের চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করে : পেঁপের বীজে আছে এন্টি- অ্যামোবিক ও এন্টি-প্যারাসাইটিক বৈশিষ্ট্য যা অন্ত্রের চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি এটি বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিড রিফ্লাক্স, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, অন্ত্রের সমস্যা, পেটের আলসার ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকেও রক্ষা করে।

* ত্বকের সমস্যা ও ক্ষত দূর করে : পেঁপেতে বিদ্যমান পুষ্টিগুণ ব্রণ ও ত্বকের যে কোন ধরনের সংক্রামক থেকে রক্ষা করে। এমনকি এটি ত্বকের ছিদ্র মুখগুলো খুলে দেয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটি ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কাঁচা পেঁপে ত্বকের মরা কোষগুলোকে পুনজ্জ্বীবিত করে তুলতে সাহায্য করে।

* ব্যথা নিরাময় করে : পেঁপের পুষ্টিগুণ ব্যথার রুগীদেও জন্য বেশি দরকারী। কারণ এটি বৃদ্ধ ও মহিলাদের যে কোনো ধরনের ব্যথা কমাতে কার্যকারী ভূমিকা রাখে। পেঁপের পাতা, তেঁতুল ও লবণ একসাথে মিশিয়ে পানি মিশিয়ে খেলে কারও কারও ব্যথা একেবারে ভালো হয়ে যায়।

* হাড় মজবুত করে : পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং কপার রয়েছে, নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম তৈরি হয় যা হাড় মজবুত করে। তাছাড়া আর্থারাইটিস, অস্টিও আর্থারাইটিস দূর করতে সাহায্য করে পেঁপে।

* ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে : চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেঁপে একটি আর্দশ ফল। যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পেঁপে রাখা উচিত। পেঁপে ডায়াবেটিস হওয়া প্রতিরোধ করে।

* হৃদরোগের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় : এটি ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখার পাশাপাশি রক্তের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি শরীরের ভেতরের ক্ষতিকর সোডিয়ামের পরিমাণকেও কমিয়ে দেয়। ফলে হৃদরোগের সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। একারণেই হৃদরোগীদের সবসময় পেঁপে খাওয়ার উপদেশ দেয়া হয়।

* অতিরিক্ত ক্যালরি ও চর্বি কমিয়ে দেয় : পেঁপেতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ই ও এ। এগুলো ১০০ গ্রামে মাত্র ৩৯ ক্যালোরি দেয়। এছাড়া এতে বিদ্যমান এন্টি-অক্সিডেন্ট অতিরিক্ত ক্যালরি ও চর্বির পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

* চোখের সমস্যায় : খুব কম বয়স থেকেই এখন চশমা লাগছে শিশুদের। এমনকী অল্প বয়সেই ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তির মতো সমস্যাও দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রতিদিন পাকা পেঁপে খেলে এই সমস্যা অনেকটাই কমে। পেঁপের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ ই এর কারণ।

* হজমে সাহায্য করে : পেঁপে মুখের রুচি ফেরায়। সেই সঙ্গে খিদেও বাড়ায়। আর পেট পরিষ্কার করে। পেট পরিষ্কার হলেই খিদে বাড়বে। সেই সঙ্গে গ্যাস অম্বলের সমস্যা কমবে। এমনকী যাদের অর্শ্ব রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রেও খুব ভালো কাজ করে পেঁপে। শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বেরিয়ে গেলেই শরীর থাকবে সুস্থ।

* কোলেস্টেরল কমায় : পেঁপেতে কোনও ক্যালোরি নেই। আছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। তাই যারা কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন তারা খুব ভালো ফল পাবেন যদি প্রতিদিন একবাটি করে পাকা পেঁপে খেতে পারেন। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকলেই অন্যান্য রোগের সম্ভাবনাও কমে যায়।

* ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে : পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন, ফ্লেভানয়েড, লুটেইন, ক্রিপ্টোক্সান্থিন আছে। এছাড়াও আরো অনেক পুষ্টি উপাদান আছে যেগুলো শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ক্যারোটিন ফুসফুস ও অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

* চুলের যত্নে : চুলের জন্যও পেঁপে খুব উপকারী। যে কারণে পেঁপে মেশানো শ্যাম্পুর প্রচলন বেশি। এছাড়াও টক দইয়ের সঙ্গে পেঁপে মিশিয়ে চুলে মাখলে গোড়া শক্ত হয়। চুলের শাইনি ভাব বজায় থাকে। এছাড়াও মাথায় উঁকুনের সমস্যা হলে পেঁপে ভালো কাজ করে।

* রূপচর্চায় : পেঁপের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর তাই পেঁপে যদি প্রতিদিন মুখে মাখা যায় তাহলে মুখের লাবণ্য বজায় থাকে। এছাড়াও পাকা পেঁপে, মধু, টকদই একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে মাখলে রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে। সেই সঙ্গে ত্বকের দাগ, ছোপ দূর হয়। ব্রণের সমস্যাও কাটে।

* ওজন কমায় : প্রাকৃতিকভাবে আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে পেঁপে। পেঁপেতে ক্যালোরির পরিমাণ খুব কম থাকে এবং উপকারী ফাইবার বা আঁশ বেশি থাকে বলে যারা ওজন সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা পেপে খেতে পারেন নিয়মিত।

* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : পেঁপের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
চিকিৎসক, সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য
কো.চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রোগী কল্যাণ সোসাইটি
ইমেইল-drmazed96@gmail.com
মোবাইল-০১৮২২৮৬৯৩৮৯।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন