চীনের মহাপ্রাচীর থেকে মনোরম কাশ্মীর উপত্যকা। জনপ্রিয় এ গন্তব্যগুলো এখন দেশীয় দর্শনার্থীদের দিকে চেয়ে আছে। কোভিডের অতি সংক্রামক ধরন ডেল্টার সংক্রমণ দ্বিতীয় বছরের মতো গন্তব্যগুলোকে দর্শনার্থীশ‚ন্য করে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ব্যাপকভাবে সীমাবদ্ধ থাকায় বিদেশী পর্যটকরা অনেক দেশেই প্রবেশ করতে পারছেন না। অনেক দেশে বাড়ির বাইরে বের হতে পারছেন না স্থানীয়রাও। এপির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হংকং মহানগরীর ৭৪ লাখ নাগরিকের মধ্যে অনেক লোক বিদেশে ভ্রমণের পরিকল্পনা বাদ দিচ্ছে। পরিবর্তে তারা দেশের মধ্যেই গ্ল্যাম্পিংকে বেছে নিচ্ছে। জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন অনুসারে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলজুড়ে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আগমন ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম ছিল। বছরের মাঝামাঝি থেকে অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের আগমনে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দেখছিল এ অঞ্চলের পর্যটন খাত। যদিও কোভিডের নতুন ধরন অভ্যন্তরীণ পর্যটনের পুনরুদ্ধারেও ঝুঁকি তৈরি করেছে। ভারতে কোভিডের সম্ভাব্য তৃতীয় ঝড় দেশটির পর্যটনে জড়িতদের চিন্তিত করে তুলেছে। ইমরান আলী। কাশ্মীরের ডাল লেকের ভাসমান বাড়িই (হাউজবোট) তার আয়ের একমাত্র উৎস। তিনি বলেন, আমরা পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ার আশা করছি। এজন্য আমরা চাই না নতুন করে কোভিডের সংক্রমণে আবার পর্যটন খাত প্রভাবিত হোক। কোভিডের মারাত্মক দ্বিতীয় ঝড়ের পর হিমালয় অঞ্চল ও ভারতজুড়ে সংক্রমণ কমে যাওয়ায় ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর উপত্যকা ও পাহাড়ে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য শিকারা কিংবা ঐতিহ্যবাহী কাশ্মীরি হাউজবোটগুলো ডাল লেকের শান্ত পানিতে ফিরে আসছে। তবে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কয়েক সপ্তাহ ধরে আবারো কাশ্মীরের মতো পার্বত্য এলাকায় সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। একই সাথেউদ্বেগ বাড়ছে কোভিডের তৃতীয় ঝড় নিয়ে। এদিকে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের কেন্দ্রে অবস্থিত ইরাওয়ান মাজার একসময় বিদেশী পর্যটক ও স্থানীয়দের কোলাহলে দিন-রাত মুখরিত থাকত। যদিও বর্তমানে সেখানে ভুতুড়ে নীরবতা তৈরি হয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু লোক সেখানে ধূপ কিংবা ফুল নিয়ে বসে থাকেন। এমনই একজন রুয়েদেওয়ান থাপজুল বলেন, আমরা এখনো এখানে আছি। কারণ আমরা জানি না আমাদের কী করা উচিত। বর্তমানে কোভিড প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করা এ শহর বিশ্বের সবচেয়ে দর্শনার্থী আকর্ষণ করা শহরগুলোর একটি। ২০১৯ সালেও দুই কোটি পর্যটক ব্যাংকক ভ্রমণ করেছিল। অথচ এখন শহরের সড়কগুলো ফাঁকা। এমন পরিস্থিতিতে আগামী অক্টোবরে বিদেশী পর্যটক প্রবেশে অনুমতি দেয়ার আহবান জানিয়েছে থাই ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চীনকে অপেক্ষাকৃত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দিয়েছে। চীনের বৃহত্তম অনলাইন ট্রাভেল বুকিং প্লাটফর্ম ট্রিপ ডটকমের মতে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় জুন ও জুলাইয়ে বেইজিং ভ্রমণকারীর সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। পাশাপাশি আয় বেড়েছে চারগুণ। যদিও চীনেও ডেল্টার সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। জুলাই ও আগস্টে প্রাদুর্ভাবের কারণে বেশকিছু শহরে ফ্লাইট ও ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল। অন্যদিকে বিদেশ ভ্রমণে সীমাবদ্ধতা হংকংয়ের বিলাসী ক্যাম্পিং গ্ল্যাম্পিংকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। উত্তর হংকংয়ের গ্রামীণ এলাকায় ইউয়েন লংয়ে অবস্থিত ক্যাম্প সাইটে গিয়েছিলেন বেরিনা ট্যাম ও ভিনসি লি। ট্যাম বলেন, এটি সত্যিই আমাদের জন্য ভালো সুযোগ। বিশেষ করে হংকংকে আরো কিছুটা অন্বেষণের চেষ্টা করার জন্য। গ্ল্যাম্পিং এলাকাগুলোতে পরিষ্কার বিছানা, গোসলের সুবিধা এবং বারবিকিউ সাইটে কাবাব ও মুরগির ডানা গ্রিল করার মতো ব্যবস্থা থাকে। সাধারণত প্রতি রাতের ব্যয় ৬৫ ডলার। দেশটির ভ্রমণ প্লাটফর্ম হলিমুডের বিল লাউ বলেন, যারা ক্যাম্পিংকে খুব আদিম মনে করেন, তাদের জন্য গ্ল্যাম্পিং একটি দারুণ বিকল্প। এপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন